২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২১:২৭, ১০ জুন ২০২১

আপডেট: ২১:২৭, ১০ জুন ২০২১

সেলিম ওসমানের জাদুর কাঠি

সেলিম ওসমানের জাদুর কাঠি

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ শহরে সাংসদ ও ব্যবসায়ী নেতার বাইরে দানবীর হিসেবে পরিচিতি রয়েছে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্য সেলিম ওসমানের। বড় ভাই নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত সংসদ সদস্য তিনি। বিভিন্ন সময় তার দানের খবর পত্রপত্রিকায় দেখা যায়। বিশেষ করে শিক্ষা খাতে ব্যাপক অনুদান দিয়েছেন। করোনাকালেও ফ্রন্ট লাইনার যোদ্ধা ডাক্তার, নার্স স্বাস্থ্যকর্মীদের খাদ্য, পরিবহন, আবাসনে বড় অনুদান দিয়েছেন। তবে সম্প্রতি দাতা নন ত্রাতা বা উদ্ধারকর্তা হিসেবে আবির্ভাব ঘটেছে জাতীয় পার্টির এই সাংসদের। একের পর এক পোশাক কারখানার শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা সমস্যার সমাধান করে বেড়াচ্ছেন। বিগত বছরগুলোতেও শ্রমিক আন্দোলনে তিনি হস্তক্ষেপ করেছেন, মালিক-শ্রমিকদের দাবি দাওয়া আদায়ে কাজ করেছেন। তবে সাম্প্রতিককালে একাধিক ঘটনায় তাকে ত্রাতা হিসেবেই দেখা গেছে।

গত কয়েকদিন যাবৎ কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের জুট প্রেসের শ্রমিকদের আন্দোলনেরও সুরাহা করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন সেলিম ওসমান। গত ঈদুল ফিতরের পূর্ব থেকে শ্রম আইন অনুযায়ী প্রাপ্য পাওনা কিংবা পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন করছে শহরের খানপুর এলাকার উত্তর কুমুদিনী বাগানের বাসিন্দা জুট প্রেসের শ্রমিকরা। স্মারকলিপি প্রদান, লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে কাজ না হওয়ায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন পর্যন্তও করেছে এই শ্রমিকরা। তবে গত মঙ্গলবার (৮ জুন) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শ্রমিক প্রতিনিধি, মালিক ও পুলিশ-প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠক শেষে ডিসির কক্ষ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সাংসদ ও ব্যবসায়ী নেতা সেলিম ওসমান বলেন, ‘এখানে দুই প্রকার লোক কাজ করে। একটি রেগুলার চাকরি অন্যটি কন্ট্রাক্ট বেসিসে। কিছু আছে যাদের দাদা ৫০ বছর আগে এখানে কাজ করেছে, তখন থেকে তারা সেখানে আছে। তার দাদা ৫০ বছর আগে এখানে কাজ করেছে বলে এই সম্পত্তি তো তাদের হয়ে যাবে না। তাই আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা এখানে কোম্পানি নিয়োগে চাকরি করছে তাদের দেনা-পাওনা শোধ করতে হবে। এবং যারা কন্ট্রাক্ট বেসিসে চাকরি করছেন তারা যে ঘরটিতে অবস্থান করছেন সেই ঘরটিকে তারা উঠিয়ে নিয়ে যাবেন। এবং তাদের কনভেন্স হিসেবে ৩ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।’ যদিও সেলিম ওসমানের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে শ্রমিকরা। তারা বলছেন, সেলিম ওসমান মালিকপক্ষের হয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

তবে কেবল কুমুদিনী প্রসঙ্গ নয় সম্প্রতি বন্দর উপজেলার টোটাল ফ্যাশন লিমিটেড ও ফতুল্লার রাসেল গার্মেন্টসে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনাও সামাল দিয়েছেন সেলিম ওসমান। ঈদের পূর্বে পাওনাদি পরিশোধের পর কয়েকজন শ্রমিককে ছাঁটাই করে টোটাল ফ্যাশন। তবে শ্রমিকরা ছাঁটাই করা শ্রমিকদের পুনর্বহালসহ ১৭ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এক পর্যায়ে এই আন্দোলন সংঘর্ষে রূপ নেয়। শ্রমিক ও কারখানার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কয়েকজন এতে আহতও হন। বন্ধ ঘোষণা করা হয় কারখানা। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলাও করে মালিক পক্ষ। এঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শুরু করে কারখানার শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে শ্রমিক অসন্তোষ মেটাতে এগিয়ে আসেন সাংসদ সেলিম ওসমান। পরে বিকেএমইএ’তে এক বৈঠক ডেকে আরও কয়েকজন শ্রমিককে ছাঁটাই ও মামলা প্রত্যাহারের শর্তে শ্রমিক অসন্তোষের অবসান ঘটান। একইভাবে রাসেল গার্মেন্টসেও শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন করেন সাংসদ সেলিম ওসমান।

অনেকেই বলছেন, শিল্প পুলিশ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও বাঘা বাঘা শ্রমিক নেতারা যেখানে শ্রমিক অসন্তোষ সামাল দিতে হিমশিম খান, সেখানে ব্যবসায়ী নেতা ও সাংসদ সেলিম ওসমানের হস্তক্ষেপে এক বৈঠকেই মিটে যাচ্ছে সকল সমস্যা। কী এমন জাদুর কাঠি রয়েছে তার হাতে যার বলে দ্রুতই সমস্যা নিরসন করছেন সেলিম ওসমান।

সমালোচকরা বলছেন, প্রভাবশালী এই সাংসদ ও ব্যবসায়ী নেতা পোশাক কারখানাসহ সকল সেক্টরে প্রভাব বজায় রেখেছেন। তার উর্ধ্বে গিয়ে কেউ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এমনকি তার প্রস্তাব উপেক্ষা করারও সাধ্য নেই কারও। সেই প্রস্তাব অন্যায্য হলেও মেনে নিতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্ট মালিক কিংবা শ্রমিক প্রতিনিধিরা। ভিতরে ক্ষোভ থাকলেও তাই হয়তো দেখা যায় এক বৈঠকেই মিঠে যাচ্ছে সকল সমস্যা।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়