২৭ জুলাই ২০২৪

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:১০, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনে গর্ভের সন্তান হারানো তরুণীর মামলা

স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনে গর্ভের সন্তান হারানো তরুণীর মামলা

একই এলাকায় থাকার সুবাদে আরমান খানের সাথে পরিচয় হয় ১৮ বছরের তরুণী রূপা ইসলাম সোহার। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হলে পালিয়ে বিয়ে করেন তারা। পরে উভয় পরিবারের এ বিয়ে সম্মতি দেন। বিয়ের তিন মাসের মাথায় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন ওই তরুণী। এ সময় ১০ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য তরুণীর পরিবারকে চাপ দিতে থাকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কন্যা ও কন্যার অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করে তাঁর পরিবারের লোকজন ৫ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দিলেও বাকি ৫ লাখ টাকার জন্য ওই তরুণীর উপর নির্যাতন চালাতে থাকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে সাড়ে ৪ মাসের অনাগত সন্তান গর্ভেই নষ্ট হয়ে যায়।

এমনই অভিযোগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন রূপা ইসলাম সোহা নামের ওই তরুণী। মামলায় স্বামী আরমান খান (২২), শাশুড়ি রওশন আরা (৫২), শ্বশুর আব্দুল হালিম খান, স্বামীর বড় দুই বোন মিতু খান ও রিমি খানকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় তাদের। পরে উভয় পরিবার এ বিয়ে সম্মতি দেয়। পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। ইতোমধ্যে ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে কন্যা ও তাঁর অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করে ৫ লাখ টাকা, ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ২ লাখ টাকার আসবাবপত্র দেন বাদীপক্ষ। কিন্তু নগদ আরও ৫ লাখ টাকার দাবিতে অন্তঃসত্ত্বা ওই তরুণীকে নির্যাতন অব্যাহত রাখে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। টাকা না দিলে তরুণীকে হত্যা করে লাশ গুম করারও হুমকি দেয় তারা।

ভুক্তভোগী তরুণী সোহা বলেন, ‘আমি প্রেম করে বিয়ে করেছি, এইটাকে ভুল মেনে আমি নিরবে নির্যাতন সহ্য করেছি। বাবার বাড়ির কাউকে জানাইনি। তাদের লাগাতার নির্যাতনে আমার গর্ভের সাড়ে ৪ মাসের সন্তানও নষ্ট হয়ে গেছে। এরপরও তারা নির্যাতন থামাননি। গত ৩১ জানুয়ারি শ্বশুর, শাশুড়ির নির্দেশে আমার স্বামী আমার চুলের মুঠি ধরে বেধরক মারধর করেন। আমার বুকে ও তলপেটে লাথি মারলে আমি জ্ঞান হারাই। পরে লোকমুখে আমার বাবা-মা নির্যাতনের কথা শুনতে পেয়ে পরদিন আমাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করে খানপুর হাসপাতালে (নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল) নিয়ে যান।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই তরুণী বলেন, ‘আমি শত নির্যাতনের পরও চাই সংসার করতে। কিন্তু আমার স্বামীকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে চেষ্টা করছে তার পরিবার। যার জন্য আমি গর্ভের সন্তান হারিয়েও মুখ বুজে নির্যাতন সহ্য করেছি সেও আমাকে গ্রহণ করতে চায় না। আমি এই অন্যায়ের বিচার চাই।’

মামলাটি তদন্ত করছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক হুমায়ূন কবির। তিনি বলেন, ‘গতরাতে (শুক্রবার) মামলার দুই নম্বর আসামিকে (ভুক্তভোগীর শাশুড়ি) গ্রেপ্তার করি। শনিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়। মামলার প্রধান আসামিসহ বাকিরা পলাতক রয়েছেন।’

ভুক্তভোগীর মা সাধনা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়েটার বয়স ছিল কম। তাকে ফুসলিয়ে বিয়ে করেছে। তারপরও মেয়ের ভবিষ্যতের দিকে চিন্তা করে সবকিছু শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে দিছি। আমাদের দেওয়ার মতো আর কিছু ছিল না। কিন্তু আমার মেয়েটাকে তারা নির্যাতনের উপরই রেখেছে। অথচ এই মামলার আসামিকে কোর্টে তোলার পরই জামিন পেয়ে গেল। এইটা কেমন আইন!’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ (শনিবার) কোর্টে আসামিপক্ষের লোকজনের সাথে দেখা হলে তারা আমাদের মামলা তুলে নিতেও হুমকি দেয়। মামলা তুলে না নিলে আমাদের বাড়িতে ঢুকে আমার মেয়েকে খুন করবে বলে হুমকি দেয় আসামির স্বজনরা।’

এদিকে, মামলা ও হুমকির অভিযোগ প্রসঙ্গে মামলার প্রধান আসামি আরমান খান, তার পিতা আব্দুল হালিম খানের পৃথক মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়