২৭ জুলাই ২০২৪

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৮:৪১, ২৩ নভেম্বর ২০২৩

পরিবারের অভিযোগ ‘প্রতিপক্ষের হাতে খুন’, পুলিশের দাবি ‘গণপিটুনিতে’

পরিবারের অভিযোগ ‘প্রতিপক্ষের হাতে খুন’, পুলিশের দাবি ‘গণপিটুনিতে’

নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জে ছিনতাইয়ের অভিযোগে ‘গণপিটুনিতে’ শাহাদাত হোসেন ওরফে হাবু নামে ৩০ বছর বয়সী এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পুরোনো দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করে ‘গণপিটুনি’ বলে চালিয়ে দিচ্ছে।

গত বুধবার দিবাগত রাতে সাড়ে বারোটার দিকে নিতাইগঞ্জের ঋষিপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। রাত দেড়টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহত শাহাদাত চাঁদপুর জেলার প্রয়াত শাহ্জাহান মিয়ার ছেলে। তিনি পরিবারের সাথে নারায়ণগঞ্জ নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপাড়া এলাকায় থাকতেন।

রাতে ঘটনাস্থলে যাওয়া সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা স্থানীয়দের বরাতে বলেন, রাতে একটি মোটরসাইকেলে চড়ে ওই এলাকায় যায় নিহত ওই যুবক। পরে ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলে তাকে গণপিটুনি দেয় স্থানীয়রা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে রাস্তার উপর লাশটি দেখতে পায়।
‘লাশের পাশ থেকে একটি ছুরি পাওয়া যায়। পুলিশ ছুরি ও মোটরসাইকেলটি জব্দ করেছে।’

এদিকে, নিহতের স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, ছয় মাস আগে তাদের বিয়ে হয়েছে। বুধবার রাতে তিনি বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকায় বাবার বাড়িতে ছিলেন। দিবাগত রাত তিনটার দিকে তিনি তার স্বামীর মৃত্যুর কথা জানতে পারেন। তার স্বামী শহরের নয়ামাটি এলাকায় একটি হোসিয়ারি কারখানায় চাকরি করতেন।
শাহাদাতের সাথে নিতাইগঞ্জের ঋষিপাড়া এলাকার কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর সাথে পুরোনো দ্বন্দ্ব ছিল। ওই দ্বন্দ্বের জেরে একবার মারামারিও হয়। ওই সময় মামলার আসামিও হন স্বামী। গতরাতে পরিচিত লোকজন তাকে মোটরসাইকেল চালিয়ে ঋষিপাড়া এলাকায় ঢুকতে দেখেছেন। রাতে স্বজনরা তার মৃত্যুর খবর পান বলে জানান তানিয়া।

‘ওই এলাকার প্রতিপক্ষের লোকজন আমার স্বামীকে খুন করেছে। খুন করার পর তারা এইটাকে গণপিটুনি বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আমার স্বামীরও দোষ আছে, তাকে পুলিশ পূর্বে গ্রেপ্তারও করেছিল। কিন্তু কাউকে তো প্রাণে মেরে ফেলার অধিকার কারও নাই। আমি মামলা করবো, আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই’, নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন নিহতের স্ত্রী।

বৃহস্পতিবার বিকেলে এই প্রতিবেদক ঋষিপাড়া এলাকাটি ঘুরে কথা বলেছেন অন্তত ১২ জন স্থানীয় নারী-পুরুষের সাথে। স্থানীয় লোকজনের কাছে শাহাদাত হোসেন আগে থেকেই পরিচিত। তাকে সকলে ‘হাবু’ নামে চেনেন। প্রায় সময়ই সে এই এলাকায় এসে আড্ডা দিতেন।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, রাত আনুমানিক ১টার দিকে স্থানীয় মসজিদের মাইকে এলাকায় ‘ডাকাত পড়েছে’ বলে ঘোষণা আসে। এরপর লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে দেখেন শাহাদাতের লাশ রাস্তার উপর পড়ে আছে। পাশে একটি মোটরসাইকেলটি ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে।

ঋষিপাড়ার চন্দ্রমোহন দাস বলেন, ‘মাইকের ঘোষণা শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি হাবুর লাশ পড়ে আছে রাস্তায়। হাবু ভয়াবহ লোক ছিল। প্রায় সময় সে রাস্তা দিয়ে যাওয়া লোকজনের টাকা-পয়সা ছিনতাই করতো। তবে তার সাথে এই এলাকার কয়েকজন ব্যক্তির দ্বন্দ্ব ছিল এটা সঠিক। যাদের সাথে দ্বন্দ্ব তারাও ভালো লোক না, সবগুলা ক্রিমিন্যাল। উভয়পক্ষের মধ্যে একাধিকবার মারামারিও হইছে।’
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়