১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:২১, ৩ আগস্ট ২০২৪

নারায়ণগঞ্জে ৫ ঘন্টা অবরোধের পর সড়ক ছাড়ে শিক্ষার্থীরা

নারায়ণগঞ্জে ৫ ঘন্টা অবরোধের পর সড়ক ছাড়ে শিক্ষার্থীরা

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় অবস্থান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটি সড়ক প্রায় ৫ ঘন্টা অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আবারও মাঠে নামবেন জানিয়ে অবরোধ তুলে নেন তারা।

এর আগে, সকাল সাড়ে ১১টায় শহীদ মিনার থেকে মিছিল বের করে হাজারো শিক্ষার্থী। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও চাষাঢ়ায় এসে অবস্থান নেয়। তারা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক ও নবাব সলিমউল্লাহ সড়ক; গুরুত্বপূর্ণ এই চারটি সড়ক অবরোধ করে রাখে।

সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েকবার বৃষ্টি নামলেও এক মুহুর্তের জন্য সড়ক ছাড়েনি বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের অনেকের অভিভাবকদেরও দেখা যায়।

এদিকে, অবরোধ তুলে নেওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পর চারটি সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা, কয়েকজন মন্ত্রীর পদত্যাগ, হত্যাকারীদের বিচারের দাবিসহ ৯ দফার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ না হওয়ায় তাদের ৯ দফা দাবি ১ দফায় রূপান্তরিত হয়েছে। বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা এই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

তবে, পুরো সময়জুড়ে শহরে কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। এমনকি শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করার পর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরাও সড়ক ছেড়ে চলে যান।

যদিও, অবরোধ শুরুর কিছুক্ষণ পর বেলা ১২টার দিকে বিজিবি সদস্যদের বহন করা কয়েকটি গাড়িকে আটকায় শিক্ষার্থীরা। গাড়ির ভেতরে থাকা কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার কিছুক্ষণ পরই গাড়িগুলোকে নবাব সলিমউল্লাহ সড়ক দিয়ে এগিয়ে যেতে দেয় শিক্ষার্থীরা।
সারাদিনে শহরে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

বিকেলে শহীদ মিনারে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালীন ‘গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তার’ এর প্রতিবাদে ‘দ্রোহের গান ও কবিতা’ শিরোনামে সাংস্কৃতিক কর্মসূচির আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। এই সময় গান ও কবিতা পরিবেশন করা হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ এই আয়োজনে অংশ নেন।

সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জে নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা রফিউর রাব্বি বলেন, ‘আমরা একটি চরম বিপদগ্রস্ত সময়ের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছি। গত কয়েকদিনে শত শত মেধাবী শিক্ষার্থী, ছাত্র-জনতাকে হারিয়েছি। নির্বিচারে গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়েছে। একটি স্বাধীন দেশে জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এভাবে জনগণের উপর গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। এমনকি হেলিকাপ্টার থেকেও গুলি করা হয়েছে। কোনো গণতান্ত্রিক সরকার এই কাজ করতে পারে না।’

‘গণহত্যার’ বিচার ও অবিলম্বে গণগ্রেপ্তার বন্ধ করে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রংপুরে নিরস্ত্র যুবক সাঈদকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তা বিশ্ববাষী দেখেছে। কিন্তু এই সরকার কখনই এসব হত্যার বিচার করতে পারবে না। যে পুলিশ তার এই দুঃশাসন টিকিয়ে রেখেছে তার বিচার শেখ হাসিনা করতে পারবে না। তাই আমরা এই মুহুর্তে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানাই। তিনি যদি স্বেচ্ছায় এইসব গণহত্যার দায় নিয়ে পদত্যাগ না করেন তাহলে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে। তারপর যে জনগণের সরকার গঠিত হবে সেই সরকার দিয়ে প্রতিটি হত্যার বিচার আদায় করা হবে।’

তিনি দেশের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার ভাঙচুর বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সাথে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে কিন্তু এই দেশ আমাদেরই থাকবে। এই দেশকে রক্ষার দায়িত্বও তাই আমাদের।’

সর্বশেষ

জনপ্রিয়