বিরোধী প্রার্থীসহ নিজ দলের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও লড়তে হবে গাজীকে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পত্র বিক্রি শুরু করেছে। তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই জমে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে ভোটের মাঠ। বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুঁইয়ার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ চালাচ্ছেন উভয় বলয়ের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। রূপগঞ্জ আসনে এবার আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নের জন্য প্রস্তুতি নিলেও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন গোলাম দস্তগীর গাজী এমনটাই মত রূপগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। মনোনয়ন দৌড়ে আছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও দলের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভুঁইয়া। এদিকে তৃনমূল বিএনপির কেন্দ্রীয় মহাসচিব রূপগঞ্জের সন্তান তৈমুর আলম খন্দকারেরও রূপগঞ্জ আসনে লড়ার গুঞ্জন রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে তিনবারের 'হ্যাট্রিক' সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে যেমন সফলতার পরিচয় দিয়েছেন তেমনি রাজনীতিতেও দেখিয়েছেন কারিশমা। দেশের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান পদের পাশাপাশি দক্ষতার সাথে সামলেছেন রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি। সততা ও স্বচ্ছ ইমেজের রাজনীতি চর্চার কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর গুডবুকে থাকায় দায়িত্ব পেয়েছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রিত্বের ৫ বছরে নিজের গায়ে কাঁদা লাগতে দেননি। বিতর্কের উদ্ধে রেখেছিলেন নিজেকে সহ পুরো মন্ত্রণালয়কে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম মনোনয়ন পান গোলাম দস্তগীর গাজী। সে নির্বাচনে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরকে প্রায় ৫৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন গাজী। দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ডা. শওকত আলীকে দেড় লাখেরও অধিক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন তিনি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে গোলাম দস্তগীর গাজী ২ লাখ ২৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে ধানের শীষের প্রার্থী কাজী মনিরকে হারিয়ে 'হ্যাট্রিক' সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। চতুর্থ বারের লড়াইয়ের জন্য আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও দলের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়া। বড়বড় শোডাউন আর দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমে এতদিন নিজের প্রার্থিতার জানান দিয়েছেন তিনি। তাঁর পিছনে আছেন কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামিম আজিজ, দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মশিউর রহমান তারেকসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি বিরাট অংশ। গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে তারা প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন।
গত ১৫ বছর আগে যখন সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব নেন তখন অনেকটায় অবহেলিত জনপথ ছিল এই রূপগঞ্জ। সেই 'মফস্বল' রূপগঞ্জকে আজকে দেশের সবচেয়ে আধুনিক শহরে রূপান্তর করেছেন তিনি। তাঁর রাজনীতির এই দীর্ঘ পথচলা কখনো সহজ ছিল না। রাজনৈতিক বিরোধিতার পাশাপাশি তাঁকে লড়তে হয়েছে দেশের শীর্ষ 'ভুমিদুস্যদের' বিরুদ্ধে। প্রবল ক্ষমতাশালী 'গণশত্রুদের' সাথে আপস করেননি কখনো, এমনকি তাদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে কখনো নিজের স্বচ্ছ ইমেজেও দাগ লাগতে দেননি। প্রতিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলে অদৃশ্য শত্রুর পাশাপশি তাঁকে লড়তে হয় প্রকাশ্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারও তাঁকে লড়তে হচ্ছে অদৃশ্য শত্রুর পাশাপশি প্রকাশ্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
কিংস পার্টি খ্যাত তৃনমূল বিএনপি থেকে যদি তৈমুর নির্বাচন করেন তবে রূপগঞ্জের নির্বাচনের মাঠের সমীকরণ অনেকটাই বদলে যাবে বলে মত রাজনীতি সচেতন মহলের। শেষ পর্যন্ত গোলাম দস্তগীর গাজী মনোনয়ন পেলেও নির্বাচনের মাঠে তাঁর নিজ দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কতটা পাশে পাবেন তা নিয়ে অনেকটাই সন্দিহান তৃনমূল আওয়ামী লীগের কর্মীরা। পাশে পেলেও গোপন বিরোধিতাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে। তখন গোলাম দস্তগীর গাজীকে বিরোধী প্রার্থীকে মোকাবেলার পাশাপশি অদৃশ্য শত্রুর ও প্রকাশ্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়তে হবে সমানতালে।