২৭ জুলাই ২০২৪

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৩:০৫, ১৭ মে ২০২৪

আওয়ামীলীগ নেতা বিরুর বংশ উচ্ছেদের হুমকি চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুর

আওয়ামীলীগ নেতা বিরুর বংশ উচ্ছেদের হুমকি চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুর

নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার দুই মাসের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরুর বংশ সোনারগাঁ থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি দিয়েছেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমর। দুই মাসের মধ্যে  'চৌধুরী বংশ' উচ্ছেদ করতে না পারলে চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেবেন বলেও জানান এই প্রার্থী।  

গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার জামপুর ইউনিয়নে নিজের একটি নির্বাচনী উঠান বৈঠকে এমন বক্তব্য দেন বাবুল। তার বক্তব্যের একটি ভিডিও চিত্র  বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তারপরই জেলাজুড়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা শুরু হয়। 

বাবুল ওমর সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের বর্তমান  ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। চেয়ারম্যান পদে তিনি এবার আনারস প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তার বিপরীতে ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচন করছেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সদস্য মাহফুজুর রহমান কালাম। সোনারগাঁ উপজেলা যুব লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার কাগজে কলমে নির্বাচনে প্রার্থী হলেও তারা প্রচারের মাঠে নেই। 

সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী না থাকলেও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার ও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার সমর্থন পাচ্ছেন বাবুল ওমর। অপরদিকে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরু, সাবেক সংসদ সদস্য মোবারক হোসেনের ছেলে এরফান হোসেন দ্বীপসহ আওয়ামী লীগের একাংশের সমর্থন পাচ্ছেন মাহফুজুর রহমান। 

আবু জাফরকে উদ্দেশ্য করে বাবুল ওমর তাঁর বক্তব্যে বলেন, 'খেলা হবে বিরুর সাথে আমার সাথে। আমি খেলবো একা। আমার নাম বাবু। বইলা দিবা নারায়ণগঞ্জের সিপ্রোসিন ট্যাবলেট বাবু। তর যদি কোন মায়ের লা*** থাকে মাদা***, ভোট কেন্দ্রে থাকবি। আমিও থাকবো। ২১ তারিখ খেলা হবে তোর সাথে।'

এসময় ভোটারদের উদ্দেশ্যে ভোট চান বাবুল। বলেন, 'আমি জিতলে আমার পাঁচ বছর লাগবো না। আমি হেরে ঠিক কইরা ফেলমু এক মাসে। এমনিতেই তো ঠিক কইরা ফেলসিলাম, আল্লাহ জানে বাঁচাইসে। লুঙ্গি রাইখা দিসিলাম। আমি তো তার বাড়ির সামনেই হুমকি দিলাম। তার যদি বুকের পাটা থাকে আমার বাড়ির সামনে মিছিল করতে বইলেন। আমি তো তোমার বাড়ির সামনেই উল্টাপাল্টা কথা বলছি। তুমি যদি তোমার মায়ের দুধ পান করে থাকো তাইলে আমার বাড়ির সামনে মিটিং করে দেখাও,ওপেন চ্যালেঞ্জ করে গেলাম।'

বক্তব্যের এক পর্যায়ে বাবুল বলেন, আমি যদি পাশ করি, আর আবদুল্লাহ আল কায়সারের (সংসদ সদস্য) সাথে কাজ করার সুযোগ পাই। তাহলে দুই মাস পরে যদি এই চৌধুরী বংশ আমি উচ্ছেদ না করতে পারি আমি রিজাইন দিব ক্ষমতা থেকে।'

ওই উঠান বৈঠকে উপস্থিত একজন যুবলীগ নেতা জানান, মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে জামপুর ইউনিয়নের পেচাইন এলাকায় উঠান বৈঠকটি হয়। উঠান বৈঠকের স্থানটি ছিল আবু জাফর চৌধুরীর বাড়ির ৫০০ গজের মধ্যে। জামপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সানাউল্লাহ। ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম। সোনারগাঁ থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেওয়ান শরীফ এসময় উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনে সমর্থন দেয়া না দেয়াকে কেন্দ্র করে বাবুল ওমর আবু জাফরকে নিয়ে এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। 

এবিষয়ে জানতে চাইলে আবু জাফর চৌধুরী বলেন, ' এধরণের বক্তব্য রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। এমন বক্তব্য সোনারগাঁয়ের রাজনৈতিক মাঠকে অস্থির করে তুলবে। দল কাউকে কোন প্রতীক দেয়নি। ফলে আমরা যে কেউ যে কারো জন্য নির্বাচন করতে পারি। জ্যেষ্ঠ নেতা হিসেবে আমি কালাম ভাইকে সাপোর্ট দিয়েছি। কালাম ভাইকে কেন সাপোর্ট দিলাম সে কারনে ওই প্রার্থী এমন আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমি দল এবং প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাইবো।'

বাবুল ওমরের এমন বক্তব্য ভোটাররা ভালোভাবে নেয়নি বলে মন্তব্য করেন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ' রাজনীতিতে এটা অসভ্যতা। এমন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য জনগণ ভালো ভাবে নেয়নি৷ একজন  প্রার্থী জয়ের আগেই এমন বেপরোয়া বক্তব্য দিচ্ছেন, তিনি বিজয়ী হলে কতোটা বেপরোয়া হয়ে উঠবেন সেটা ভোটাররা আন্দাজ করতে পারছেন।'

এবিষয়ে বক্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকালে বাবুল ওমরের মুঠোফোন নম্বরে ফোন করে এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়