১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:৩১, ২৮ আগস্ট ২০২১

আপডেট: ২০:১৩, ২৯ আগস্ট ২০২১

অপ্রতিরোধ্য মেয়র আইভী

অপ্রতিরোধ্য মেয়র আইভী

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: গত ১৮ বছরে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার অনেক পালাবদল হয়েছে। তবে দীর্ঘ এই সময়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র। ২০০৩ সালে প্রথম নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি। বিগত পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনগুলোতে প্রভাবশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়েছেন বিপুল ভোটের ব্যবধানে। অপ্রতিরোধ্য মেয়র আইভীর জনপ্রিয়তা ও কর্মদক্ষতার পুরস্কারস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দিয়েছিলেন উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা। তিনিই দেশের একমাত্র মেয়র যিনি উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা পেয়েছিলেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং উপমন্ত্রীর পদমর্যাদার নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সাবেক পৌরপিতা আলী আহাম্মদ চুনকার কন্যা। আলী আহাম্মদ চুনকা ও তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা ডা. আইভী এই শহরের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দুই যুগেরও বেশি সময়। আলী আহাম্মদ চুনকা একটানা দু’বার নির্বাচিত হয়ে ৮ বছর পৌর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। কন্যা আইভীও টানা তিন মেয়াদে পৌর চেয়ারম্যান ও সিটি মেয়র হিসেবে মোট ১৮ বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করছেন। পিতা আলী আহাম্মদ চুনকার মতো কন্যা ডা. আইভীও বিএনপির রাষ্ট্রীয় শাসনামলেও আওয়ামী লীগের সমর্থনে ভোটের লড়াই উতরেছেন দোর্দন্ড প্রতাপের সাথে। জনসম্পৃক্ততা ও জনসমর্থনই তাদের এই জয় এনে দিয়েছেন একাধিক সময়ে। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের আমলে আলী আহাম্মদ চুনকা ও কন্যা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ২০০৩ সালে খালেদা জিয়ার সময়ে বিরাট ব্যবধানে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন।

২০০৩ সালে পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে জয়লাভ করেন রাশিয়া থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়া শেষে দেশে ফিরে আসা সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকার জ্যেষ্ঠ কন্যা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। নগরবাসী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুরোধ ও সমর্থনে পৌর নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। ওই বছরের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন আইভী। ওই সময় রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতাসীন দল বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম সরদার। তার পিতা তারু সরদার ছিলেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কমিশনার এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা। তবে সদ্য রাজনীতিতে প্রবেশ করা সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে বিপুল ভোটে ধরাশায়ী হন বিএনপির এই প্রার্থী। পৌরসভার ১২৭ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে জয়ের ইতিহাস গড়েন আইভী। প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থীকে হারান তৎকালীন শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবার বিষয়ক সম্পাদক ডা. আইভী। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে মোমবাতি মার্কায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। বিপুল ভোটে জয় লাভ করে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান ও ২০১১ সাল পর্যন্ত আরও তিন বছর পৌর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। ওই নির্বাচনে ডা. আইভীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন আওয়ামী লীগেরই প্রভাবশালী নেতা সাবেক সংসদ (বর্তমানেও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ) একেএম শামীম ওসমান। নানা নাটকীয়তার পর প্রায় লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে শামীম ওসমানকে হারান চুনকা কন্যা সেলিনা হায়াৎ আইভী। এবার কেবল নির্বাচনী লড়াইয়ে বিজয়ী হওয়া নয়, বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত নারী মেয়র হওয়ার সম্মানও অর্জন করেন আইভী। এরপর ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার প্রার্থী হয়ে আবারও মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। এই নির্বাচনে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ৭ খুন মামলার আইনজীবী হিসেবে সারাদেশে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া বিএনপি নেতা অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খান। তবে আইভীর জনপ্রিয়তার কাছে টিকতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয় দফায় সিটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন আইভী।

২০০৩ সালে আইভী যখন মেয়রের চেয়ারে বসেছিলেন, তখন পৌরসভার দেনা ছিল দুই কোটি আট লাখ টাকা। রাস্তায় ঠিক মতো বাতি জ্বলতো না। একটু বৃষ্টি হলেই শহরে হাঁটুপানি জমে যেত। সেই পানি দীর্ঘসময়েও নামতো না। শহরের অনেক গলিতেই একটা রিকশা প্রবেশ করলে আরেকটা বের হতে পারতো না। আইভী দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৮ বছরে পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে কয়েক হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, পরিবেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ব্যাপক কাজ করেছেন তিনি। আধুনিক ও বাসযোগ্য নগরী গড়তে নিয়েছেন শেখ রাসেল নগর পার্কের মতো নারী-শিশু ও পরিবেশবান্ধব অনেক প্রকল্প। আজকে এই শহরের প্রত্যেক গলিতে বড় সড়ক এবং প্রধান প্রধান সড়ক প্রয়োজনের থেকেও বেশি প্রশস্ত। বাবুরাইল, সিদ্ধিরগঞ্জ ও গঞ্জে আলী খালের মতো দখলদারদের কাছ থেকে আরও অনেক খাল, পুকুর পুনরুদ্ধার, জমি উদ্ধার করে মাঠ-পার্ক, মসজিদ-মন্দির করেছেন। পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ, শহরকে আলোকিত করার জন্য বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি বাতি স্থাপন করেছেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনে বাবুরাইল ও সিদ্ধিরগঞ্জ খাল পুনরুদ্ধার ও সৌন্দর্যবর্ধন ও কদম রসুল সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন ও দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশে পাঠাগার নির্মাণ করেছেন। স্বাস্থ্যসেবায় নগর ক্লিনিক স্থাপন করেছেন।

সবকিছু ঠিক থাকলে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন। ওই নির্বাচনেও অংশ নেওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছেন বর্তমান ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে নৌকার মনোনয়ন প্রার্থনাও করেছেন তিনি। আইভীর সমর্থকদের মতে, মেয়র আইভীর জনপ্রিয়তা, কর্মনিষ্ঠা এবং নারায়ণগঞ্জ নগরীর ব্যাপক উন্নয়নের দিক বিবেচনায় পুনরায় নৌকার মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হবেন তিনি। অপ্রতিরোধ্য মেয়র আইভীর জনপ্রিয়তার কাছে টিকবে না কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়