২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ২৯ আগস্ট ২০১৮

আপডেট: ১৫:৩০, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

অবহেলিত এক জনপদ ইসদাইর

অবহেলিত এক জনপদ ইসদাইর

আফসানা আক্তার (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): শিল্পাঞ্চল ফতুল্লা অঞ্চলের অবহেলিত এক জনপদ হচ্ছে ইসদাইর। যদিও এর একটি অংশ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন। বর্ষা কি শীত কোন ঋতুতেই তারা স্বস্থিতে নেই। জলাবদ্ধতা, ভাঙ্গা চুরা রাস্তা, নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সব মিলিয়ে ভালো নেই ইসদাইরবাসী। দেখারও যেন কেউ নাই। অথচ প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকা এটি। তার উপর দুটি ইউনিয়ন পরিষদ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এই চারটি সংস্থার নজরদারীতে এলাকাটি হলেও দুর্ভোগ লাগবে কার্যকরী কোন প্রদক্ষেপ চোখে পড়ছে না দীর্ঘদিন ধরে। এমন অভিযোগ ইসদাইরবাসীর। ফলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বাধ্য হয়ে নিজেরাই করছেন প্রশাসনের কাজগুলো।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইসদাইর এলাকার বাজার পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। এ এলাকার পরের অংশ এনায়েত নগর ইউনিয়ন ও অন্য আরেকটি অংশ ফতুল্লা ইউনিয়নের আওতাধীন। উক্ত তিনটি স্থানীয় প্রশাসনের আওতা ভিত্তিক হওয়া সত্ত্বেও এলাকাটিতে হচ্ছে না কোনো উন্নয়নমূলক কাজ। দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকার প্রধান সড়কটি ভাঙা এবং বেহাল দশায় পড়ে আছে। সারা বছর এলাকাটি হাটু পানির নিচে ডুবে থাকে। যার ফলে কোনো রিকশাচালক ইসদাইর এলাকায় যেতে নারাজ। কেউ যেতে রাজি হলেও যাত্রীদের গুণতে হয় দ্বিগুণ ভাড়া। রাতের বেলায় এই টাকার অংক বেড়ে দাড়ায় তিনগুণ।

এদিকে পয়:নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন থাকলেও তা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় চরম দুভোর্গে জীবনযাপন করছে এলাকাবাসী। এলাকাটিতে ২৫ থেকে ৩০টি সড়কবাতি থাকলেও ১টি ছাড়া বাকী বাতিগুলো জ্বলে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই বাতিটি দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা জ্বলতে থাকে। এ রকম নানাবিধ সমস্যা নিয়ে এলাকাবাসী একাধিকবার কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন মেম্বারদের দারস্থ হওয়া সত্ত্বেও নেয়া হয়নি কোনো কার্যকরি ব্যবস্থা। প্রশাসনের কোনো সাহায্য না পাওয়ায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে এলাকাবাসীর মধ্যে। শেষে বাধ্য হয়ে নিজেরাই এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন।

বুধবার (২৯ আগস্ট) ইসদাইর বাজার এলাকাটি ঘুরে এলাকাবাসীর এসব ভোগান্তি ও সমস্যা চোখে পড়ে।

এছাড়া ইসদাইর রেল লাইনের পর থেকে বাজার ও বাজারের আশেপাশের রাস্তার দশাও বেহাল। জায়গায় জায়গায় গর্ত। পুরো সড়কের কোথাও পিচ ঢালাইয়ের নেই কোনো চিহ্ন। বাজারের পাশের রাস্তাগুলো পানি জমে আছে, কাদায় থকথক করছে পুরো সড়ক। রাস্তা দিয়ে খুব কষ্টে চলাচল করছেন পথচারীরা। অল্প সংখ্যক যানচলাচল করছে। এলাকাবাসীর এ বিষয়ে অভিযোগের কোন অন্ত নেই।

এলাকাবাসীরা জানান, ‘সারা বছর এলাকা পানির নিচে থাকে। ঈদের আগেও রাস্তায় হাটু পানি ছিল। ঈদ উপলক্ষে এলাকাবাসী সবাই মিলে ৪টি পাম্প ব্যবহার করে পানি অপসারণ করেছে। তবু কাদা রয়ে গেছে। তারা অভিযোগ করেন, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাসেম শুকুও এদিকে কোন নজর দেন না। আমরা বারবার তাকে অনুরোধ করেছি আমাদের এই অবস্থা একবার এসে দেখে যেতে। আমরা এ ব্যাপারে কাউন্সিলর বরাবর লিখিত আবেদনও জানিয়েছি। কিন্তু তারপরেও তিনি এই এলাকায় একটিবারের জন্যও আসেননি। অথচ আমাদের ভোটেই তিনি নির্বাচিত হয়েছেন আর আমাদের খবরই তিনি রাখেন না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা সিটি কর্পোরেশনকে নিয়মিত কর দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু সিটি কর্পোরেশন আমাদের সঙ্গে বিমাতাসূলভ আচরণ করে যাচ্ছে। ঈদের সময় আমাদের কাউন্সিলর শুকু সাহেবকে বলেছিলাম রাস্তাটা পরিষ্কার করে দিতে। কিন্তু তিনি তা করেন নি। রাজনৈতিক কারণেও আমাদের এলাকার উন্নয়ন আটকে রাখা হয়েছে। অনেকদিন ধরেই শুনছি এলাকার উন্নয়ণ কাজের টেন্ডার হয়ে আছে। কিন্তু কাজ আর শুরু হচ্ছে না।’

ইসদাইর এলাকার একজন দোকানী বজলু মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকার ড্রেনটি প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর আগে করা হয়েছে। এর মধ্যে একবারো সঠিকভাবে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়নি। যার ফলে সারা বছর পানিবন্দি অবস্থায় থাকতে হয়। পচা, আবর্জনা যুক্ত পানি দিয়ে চলাচল করতে করতে পায়ে ঘা হয়ে গিয়েছিল। অনেকে নানা রকম পানিবাহিত রোগে ভুগেছেন। তাই মাঝে মধ্যে আমরা এলাকাবাসীরাই ড্রেন পরিষ্কার করাই। তা না হলে জলাবদ্ধতায় আমাদের দিন কাটে।’

জানা যায়, সোমবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় মসজিদের পাশ্ববর্তী এলাকার রাস্তার গ্যাস লাইনের লিক থেকে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসীর তৎপরতায় তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও সঠিক সময়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভয়াবহ আগ্নিকান্ড ঘটে যেতো বলেন জানান এলাকাবাসী।

অগ্নি সংযোগের কারণ সম্পর্কে এলাকাবাসী জানান, ইসদাইর জামে মসজিদ এলাকার পাশের রোডের গ্যাস লাইনে অনেকদিন ধরে লিকেজ। রাস্তার ভাঙা অংশ দিয়ে গ্যাস লাইনের পাইপটি বেড়িয়ে ছিল। মূলত রাস্তা সংস্কার না করায় রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের চাপে গ্যাস লাইনের পাইপে লিকেজগুলো হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় রাস্তা দিয়ে একটি অতিক্রম করার সময় ইজিবাইকটির স্পার্ক গ্যাস লাইনের লিকেজে থেকে নির্গত গ্যাসে গিয়ে আগুন ধরে যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ গ্যাস লাইনটি লিক থাকায় মুহূর্তের মধ্যে আগুন পুরো সড়কে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এলাকাবাসীর তৎপরতায় তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। এলাকাবাসীর মতে, আগুন প্রায় ৩ ফুট উচু এবং ১০ মিটার বিস্তৃত ছিল। এলাকাবাসী অগ্নিসংযোগের ঘটনাটির জন্য প্রশাসনকে দায়ী করছে।

এতো সব ভোগান্তি নিয়ে ইসদাইর এলাকাবাসী দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করলেও এদিকে কোন নজর নেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। এ বিষয়ে ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাসেম শুকুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘ইসদাইর এলাকার রাস্তা ও ড্রেনের অবস্থা সম্পর্কে আমরা অবগত। টেন্ডার করা হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।’

দীর্ঘদিন ধরে এলাকাটির উন্নয়ন কাজ থেমে আছে আর এর আগে এলাকাটির উন্নয়নের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি কেন এবং কবে কাজ শুরু হবে জিজ্ঞেস করলে রেগে যান কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু। রাগতস্বরে তিনি বলেন, ‘মাত্র ২ বছর ধরে রাস্তাটি হয়েছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সিটি কর্পোরেশন চলে, পৌরসভা চলে বললেই তো আর একটা জিনিস হয়ে যায় না। রাস্তা করলাম, ১ বছর পর সে রাস্তার জন্য আবার টেন্ডার করতে গেলে আমাদেরই জবাবদিহি করতে হয়। বারবার তো আর এসব কাজ করা যায় না। রাস্তা ও ড্রেনের কাজ এক সঙ্গে করা হবে। আর কাজ কবে শুরু হবে তা মেয়রকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়। কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত উনার উপর নির্ভর করে। আমি এর কিছু জানি না।’

তবে দুই বছরের মধ্যে এই রাস্তার এমন বেহাল দশা কি করে হলো সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়