১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২২:০৯, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ২০:৩৯, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আইভীর বিরুদ্ধে পোস্টারিং, ষড়যন্ত্র বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

আইভীর বিরুদ্ধে পোস্টারিং, ষড়যন্ত্র বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে নগরীর দেয়ালগুলোতে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে৷ ‘প্রচারে সনাতন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী’ উল্লেখ সাঁটানো পোস্টারে জিউস পুকুরের সম্পত্তি দখলের পুরোনো অভিযোগ তোলা হয়েছে মেয়র ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে৷ এদিকে এই পোস্টার সাঁটানোর বিষয়টিকে সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংঠনের নেতাকর্মীরা৷ তারা বলছেন, একটি মহল ‘ঘোলা পানিতে মাছশিকার’ করার পায়তারায় লিপ্ত৷ এই ষড়যন্ত্রে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সামনে রাখা হয়েছে৷

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নগরীর বিভিন্ন দেওয়ালে এসব পোস্টার সাঁটানো হয়৷ সিটি কর্পোরেশন এলাকার শহর বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চল ছেয়ে গেছে এই পোস্টারে। পোস্টারের উপরে আইভীর গতবারের নির্বাচনী প্রচারণার ছবি ব্যবহার করে লেখা হয়েছে, ‘একদিকে রাজনৈতিক স্বার্থে সিঁদুর পরে দেবতাকে প্রণাম, অন্যদিকে দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের ষড়যন্ত্র। এই দেবোত্তর সম্পত্তি দখলকারী ভুমিদুস্য আইভী পরিবারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হউন।’ পোস্টারের নিচে দেওভোগের আলোচিত জিউস পুকুরের ছবি দিয়ে লেখা আছে ‘ভুমিদস্যু মেয়র আইভী পরিবারের কুদৃষ্টি এই দেবোত্তর সম্পত্তির উপর’৷ পোস্টারের শেষাংশে ‘প্রচারে সনাতন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী’ লেখা রয়েছে।

কে বা কারা রাতের আঁধারে এমন পোস্টার সাঁটিয়েছে সে বিষয়ে সঠিকভাবে কিছু জানা না গেলেও হিন্দু নেতারা বলছেন, এটা প্রতিবাদের অংশ৷ মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, ‘দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের বিরুদ্ধে আমরা আগেও প্রতিবাদ জানিয়েছি৷ অনেকেই আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন৷ তাদের মধ্য থেকেই কোনো সংগঠন এই পোস্টার লাগিয়েছে৷’

উত্তম সাহা জানান, শনিবার দুপুর ২টায় জিউস পুকুরের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতারা৷

যেসব এলাকায় লোক সমাগম বেশি, সহজেই মানুষের চোখে পড়বে সেখানেই সাঁটানো হয়েছে এসব পোস্টার। আরও সাঁটানো হয়েছে বিভিন্ন ভবনের দেয়াল, রাস্তায় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিদ্যুতের পিলার, ফুটপাতের দেয়াল জুড়ে।

এ বিষয়ে আইভী সমর্থক আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা বলছেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র আইভী বিরোধী চক্র রাতের আঁধারে এই অপপ্রচার শুরু করেছে। প্রকাশ্যে ঘায়েল করতে না পেরে রাতের আঁধারকে বেছে নিয়েছে তারা। জনগণকে বিভ্রান্ত করতে তারা সাম্প্রদায়িক চাল চেলেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আদিনাথ বসু বলেন, ‘এটা আসলে সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ধরনের প্রোপাগান্ডা চলছে৷ জিউস পুকুরের বিষয়টা তো আজকের না৷ কিন্তু হুট করে নির্বাচনকে সামনে রেখে এরকম প্রচারণা মেয়র আইভীকে প্রতিহত করার একটা হাতিয়ার৷’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা এই বিষয়টার সাথে আসলেই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে আমার কিছু বলার নেই৷ কিন্তু মেয়র আইভী তো এর সাথে জড়িত না৷ মেয়র আইভী তো এটার মালিক না৷ কেননা এ ঘটনা তো ৪০ বছর আগের৷ ১৯৮৪ সালে এটা নিয়ে একবার আলোচনা হইছে তখন মেয়র আইভীর বাবা নির্বাচন করেছিলেন৷ এবার সরাসরি আইভীর বিরুদ্ধে৷ তাহলে তো ধরেই নিতে পারি এটা নির্বাচনকে সামনে রেখে আইভীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র৷’

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘এই কাজ করেছে সেই স্বার্থান্বেষী মহল যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়৷ যারা সিটি মেয়র আইভীর জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত তারাই এমন অপপ্রচার চালাচ্ছেন৷ এ ধরনের নোংরা রাজনীতি এর আগেও হয়েছে৷ কিন্তু নারায়ণগঞ্জের সাধারণ জনগণ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবসময় অবস্থান নিয়েছেন৷ নারায়ণগঞ্জবাসী ২০১১ ও ২০১৬ সালের মতো আগামীতেও এই নোংরা রাজনীতির বিরুদ্ধে তাদের রায় দেবেন৷’

অবশ্য এ বিষয়ে এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘এই পুকুরের সাথে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এই পুকুরের মালিকানার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। পুকুর কোনো ইস্যু না। এটা একটা চক্রান্ত। সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্র শুরু হলো।’

মেয়র আরও বলেন, ‘কে বা কারা সুবিধা নেওয়ার জন্য আমার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উসকে দিতে চাচ্ছে। ৩৬ বছর আগেও আমার বাবার সাথে তারা এই ধরনের খেলায় মেতেছিল। সেই লোকগুলোই আবারও তাদের পুরোনো খেলায় মেতেছে। মিথ্যা অভিযোগ তুলে তো আর সত্যকে আড়াল করা যায় না।’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়