১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৫:১১, ১৮ মে ২০২৩

আপডেট: ১৫:১১, ১৮ মে ২০২৩

আজমেরী ওসমানকে অস্ত্রের লাইসেন্স না দেয়ার আহবান

আজমেরী ওসমানকে অস্ত্রের লাইসেন্স না দেয়ার আহবান

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আজমেরী ওসমানের দু’টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদনের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে নারায়ণগঞ্জ শহরজুড়ে৷ আলোচিত ত্বকী হত্যাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ থাকা আজমেরী ওসমানকে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হলে নারায়ণগঞ্জবাসী সন্ত্রাসীদের কাছে আবারও জিম্মি হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন নাগরিক প্রতিনিধিরা। আজমেরী ওসমানকে অস্ত্রের লাইসেন্স না দেওয়ার পক্ষে মত জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীও।

তারা বলছেন, ‘আজমেরী ওসমান ও তার বাহিনীর কাছে বিপুল অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। তারা প্রায়সময় এসব ব্যবহার করে শহরের মানুষকে আতঙ্কে রাখে। সে বৈধভাবে অস্ত্র পেলে এই শহরের মানুষ আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। প্রশাসনের উচিত হবে তাকে অস্ত্রের লাইসেন্স না দেওয়া।’

সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘এমনিতেই এই শহরে অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। এখন আবার অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। ত্বকী হত্যাকান্ডে গ্রেপ্তার আসামি ভ্রমর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও আজমেরী ওসমানের নাম বলেছে। তাকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হলে শহরে আরও আতঙ্ক ছড়াবে। এই মুহুর্তে এটি সরকারের পক্ষে পজেটিভ কোন রেজাল্ট বয়ে আনবে বলে মনে হয় না। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। এতে কেবলমাত্র ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল হবে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ আতঙ্কিত হবে, জনপদ আবার সন্ত্রাসে পরিণত হবে, শান্ত পরিবেশ আর শান্ত থাকবে না। প্রশাসনকে অনুরোধ জানাবো, তাকে যেন অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া না হয়।’

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রশাসন তো তার (আজমেরী ওসমান) ব্যাপারে সবই জানে। সবকিছু জানার পরও যদি এই ধরনের মানুষের হাতে অস্ত্র তুলে দেয় তাহলে তা কতটুকু সঠিক হবে তারাই বলতে পারে। অবৈধভাবেই তারা অস্ত্রের ব্যবহার করে তারা বৈধভাবে অস্ত্র পেলে তো আরও বেপরোয়া হয়ে যাবে।’

ত্বকীর পিতা ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, ত্বকী হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হবার পর আজমেরী ওসমানের অন্যতম সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ওই জবানবন্দিতে ভ্রমর জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে অপহরণের পর শহরের আল্লামা ইকবাল রোডে আজমেরীর টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। ত্বকী হত্যার এক বছরের মাথায় সংবাদ সম্মেলনে র্যাবও একই কথা জানিয়েছিল। ত্বকী হত্যার পর র্যাব আজমেরীর টর্চার সেলে অভিযান চালিয়ে রক্তমাখা প্যান্ট, পিস্তলের বাট, মাদক ও নির্যাতনের সরঞ্জামাদি জব্দ করে।

রাব্বি বলেন, ‘শুধু ত্বকী না, নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চল, ভুলু, মিঠু হত্যায়ও আজমেরী ওসমান জড়িত। এই শহরে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আজমেরী ও তার বাহিনী করে যাচ্ছে। চারটা-পাঁচটা টর্চার সেল সে এই নারায়ণগঞ্জে চালাতো। এখনও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও হোন্ডার মহড়া দিয়ে শহর দাপিয়ে বেড়ায় আজমেরী ও তার লোকজন। এমন এক ব্যক্তি কীভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স চায় সেইটাই চিন্তার ব্যাপার। তাকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হলে নারায়ণগঞ্জের মানুষ আতঙ্কিত হবে। সারাদেশের মানুষ জানে, খুনি-সন্ত্রাসী-জল্লাদদের হাতে নারায়ণগঞ্জ জিম্মি; সেটিই আবার সত্য বলে প্রমাণিত হবে।’

আজমেরী ওসমানকে অস্ত্রের লাইসেন্স না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান রফিউর রাব্বি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সমন্বয়কারী (ঢাকা দক্ষিণ) ও নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘আজমেরী ওসমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে বেআইনি অস্ত্রের ছড়াছাড়ি। এইসব অবৈধ অস্ত্র জব্দ করে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। উল্টো যদি এদের কাছে অস্ত্রের লাইসেন্স যায়, তাহলে তারা আবারও শহরটাকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। এই শহর ও শহরের মানুষ আবারও জিম্মি হওয়ার পক্রিয়ার দিকে যাবে। সুতরাং আমার আবেদন থাকবে আজমেরী ওসমান ও তার মতো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত লোকজনকে অস্ত্রের লাইসেন্স না দেওয়া। এবং যাদের কাছে অস্ত্রের লাইসেন্স আছে কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তাদের লাইসেন্সও বাতিল করতে হবে।’

নারায়ণগঞ্জে বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের তালিকা প্রকাশেরও আহ্বান জানান অ্যাডভোকেট মাসুম। তিনি বলেন, ‘অস্ত্রের লাইসেন্স কাদের দেওয়া হয়েছে এই তালিকা প্রকাশ করলে কারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের যুক্ত কিন্তু অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছে সেটি শহরবাসী জানতে পারতো। সন্ত্রাসী ও তাদের দোসররা অস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদন করলে তাদের লাইসেন্স না দেওয়াটাই প্রশাসনের জন্য ফরজ কাজ।’

আজমেরী ওসমানের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন অবাক করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েলকে। তিনি বলেন, ‘এইটা কোনভাবেই আমরা আশা করি না। আজমেরী ওসমানের মতো চিহ্নিত সন্ত্রাসী অস্ত্রের লাইসেন্স পেলে শহরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আরও বেড়ে যাবে। ফলে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি ঘটবে বলে মনে করছি। অতএব প্রশাসনের কাছে জোর দাবি, তাকে যেন কোনভাবেই অস্ত্রের লাইসেন্স না দেওয়া হয়। এই ধরনের লোকদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া মানে সমাজে অপরাধকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দিকে ঠেলে দেওয়া।’

‘আজমেরী ওসমান শুধু ত্বকী হত্যাকান্ডই না আশিক, চঞ্চল, ভুলুসহ আরও অনেক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। শুধু তাই নয় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, লুটপাটে সম্পৃক্ত আজমেরী ওসমান ও তার বাহিনী। কিন্তু এই শহরে তার ত্রাস এতটাই যে তার বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস কেউ পান না। পুলিশ-প্রশাসন তাদের আজ্ঞাবহ থাকায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা মামলা নেই। দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে সাক্ষী সুরক্ষা আইন নেই। যে কারণে অনেকেই মামলা করার সাহস পান না। তার নামে মামলা না থাকার মানে এই না যে, সে নিরপরাধ এইটা মনে করার কোন কারণ নেই। একজন জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব হচ্ছে, যিনি অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলেন তার সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পোষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।’, যোগ করেন তিনি৷

আজমেরী ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের ছেলে। তার দুই চাচা একেএম সেলিম ওসমান একই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এবং একেএম শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য। আজমেরী ওসমানের মা পারভীন ওসমান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়