১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২২:০১, ৩ অক্টোবর ২০১৮

আপডেট: ২২:৪৫, ৩ অক্টোবর ২০১৮

সাক্ষাৎকার

আমরা জয় বাংলার লোক: উজ্জল

আমরা জয় বাংলার লোক: উজ্জল

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের পৌর পিতা আলী আহাম্মদ চুনকার দুই ছেলের মধ্যে ছোট আহম্মদ আলী রেজা উজ্জল। রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গে মিশে আছেন তিনি। খেলা-ধূলা পাগল এই তরুণ রাজনীতিবিদ ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন নিজের সাংগঠনিক দক্ষতার মধ্য দিয়ে। তার বড় বোন ডা. সেলিনা হায়াত আইভী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি। বাবা ও বোনের ইমেজ রাজনীতিতে তাকে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। তাই বাবা ও বোনের মতো তিনিও স্বপ্ন দেখেন একদিন জনপ্রতিনিধি হবেন। শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জল রাজনীতির বাইরেও নানা বিষয়ে কথা বলেছেন ‘প্রেস নারায়ণগঞ্জ’ এর সাথে। তার সাক্ষাৎকারটি প্রেস নারায়ণগঞ্জের পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হল।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: কেমন আছেন?

উজ্জ্বল: আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: শুরুতে আপনার রাজনীতিতে জড়ানোর গল্পটা বলেন।

উজ্জ্বল: আসলে আমি খুব ছোট বেলা থেকেই বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে। সারাটা জীবনই দেখেছি বাবা রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের সাথেই চলাফেরা করেছেন। আমি আসলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি যে আমার বাবা প্রয়াত আলী আহাম্মদ চুনকা একজন মানবদরদী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ছিলেন। রাজনীতির শিক্ষা-দীক্ষা আমার বাবার মাধ্যমেই। পদের দিক দিয়ে আমি সর্বপ্রথম শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হই। সেটা সম্ভবত ২০০৪ কিংবা ২০০৫ হবে। তখন নির্বাচনের মাধ্যমে আমি বিপুল ভোটে শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: রাজনীতিতে জড়ানোর পেছনে কার অনুপ্রেরনা ছিল?

উজ্জ্বল: আমার বাবার।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: পরিবারের কোন বাধা ছিল কি না?

উজ্জ্বল: না। একেবারেই বাঁধা ছিল না।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: দীর্ঘদিন ধরে শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে একটা বিভাজন লক্ষনীয়, এবং দলীয় কর্মসূচিও আপনারা পৃথক পৃথকভাবে পালন করছেন, এটা কেন?

উজ্জ্বল: আসলে এটা রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হয়। এটা সব জায়গাতেই আছে। আর এটা না থাকলে দলের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা হয় না। যেমন, আমি একটা ভাল কাজ করলাম। সেটা দেখে তিনিও কিন্তু একটা ভাল কাজ করবে। আমরা যেহেতু একটা দলই করি। তাই আমাদের নীতি, আদর্শ বঙ্গবন্ধুর মতোই হওয়ার কথা। কে কার লোক সেটা দেখার বিষয় না। আমরা জয় বাংলার লোক সেটাই মুখ্য বিষয়। আমরা সবাই চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবার ক্ষমতায় আসুক।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: সবাই বলে যুবলীগ দুইভাগে বিভক্ত, এই বিভক্তি দলের উপর প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন?

উজ্জল: আমার তো মনে হয় না। আমারটা আমি করি। উনারটা উনি করেন। আমার মতে কোন প্রভাব ফেলছে না। একটা কথা হলো, আমরা শহর যুবলীগ খুব এক্টিভ ছিলাম প্রথম থেকেই। ওয়ান ইলেভেনে নেত্রী যখন গ্রেপ্তার হয়, তখন আমার নেতৃতে আন্দোলন করেছিলাম। এজন্য আমি বেশ কয়েকদিন বাসায়ও থাকতে পারি নি। নেত্রীর জন্য আমরা সবসময় সবকিছু করতে রাজী আছি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: এই বিভক্তি কি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে?

উজ্জল: আসলে এটা তো বলা কঠিন। তারপরেও আমরা চেষ্টা করছি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আগামী দিনে শহর যুবলীগ নিয়ে কোন পরিকল্পনা আছে?

উজ্জল: জননেত্রী শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের জন্য যে উন্নয়ন করেছে সেটা মানুষের কাছে তুলে ধরার একটা পরিকল্পনা আমার আছে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আপনার রাজনীতির বয়স কত হলো?

উজ্জল: আমিতো ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত। পদের দিক দিয়ে এই ধরেন ১৩ বছর।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছে করে না? কোন মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করার ইচ্ছে?

উজ্জল: আসলে আমরা যারা রাজনীতি করি তাদের সকলেরই জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছে থাকে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে জনপ্রতিনিধি এবং সরকার দলীয় নেতাদের ভুমিকা কেমন হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন?

উজ্জল: জননেত্রী শেখ হাসিনার মতো। তিনি মানুষের জন্য প্রচুর কাজ করেছেন। সরকার দলীয় নেতাদেরও উচিত জননেত্রী শেখ হাসিনার মতো মানুষের, দেশের উন্নয়নের কাজ করা।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আপনি তো রাজনীতির বাহিরেও অনেক সামাজিক কাজ করে থাকেন। সেগুলো সম্পর্কে কিছু বলেন।

উজ্জল: আসলে আমার বাবার কাছ থেকেই আমি সামাজিক কাজ করার ব্যাপারটা শিখেছি। আমি ধনী, গরীব সবাইকে একই চোখে দেখি। মানুষ আমাকে ভালবাসে এটা সত্য। সামাজিক কাজের মধ্যে আমাদের একটা বঙ্গসাথী ক্লাব আছে। সেখানে বিনামূল্যে সুন্নতে খাতনা, অনেকের বিয়ে হয় না টাকা পয়সার জন্য আমাদের ক্লাব থেকে সহযোগিতা করা হয়। প্রতি বছরই এই ক্লাবটা থেকে ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়। আমার একটি প্লান আছে, ক্লাবটির ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বিশাল আকারের এক আয়োজন করবো। এছাড়াও আমি পাঁচটা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। আর একটা স্কুল করার চিন্তা আছে। সেটা ইনশাআল্লাহ আমার মায়ের নামে করবো।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আলী আহমদ চুনকা সাহেবের ছেলে নাকি ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভির ভাই হিসেবে পরিচয় দিতে স্বস্থি বোধ করেন?

উজ্জল: আমি তো সবসময়ই বলি যে আমি আলী আহমদ চুনকার সন্তান। বোন আছেন। সম্মানের দিক দিয়ে তিনিও খুব উঁচুতে। কিন্তু বাবার পরিচয় দিতেই বেশি স্বস্তি বোধ করি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: রাজনীতিবিদ হিসেবে আইভি আপা আর পরিবারের সদস্য হিসেবে আইভি আপার মূল্যায়ন?

উজ্জল: রাজনীতিবিদ হিসেবে আপা খুবই চৌকস। আর পরিবারের সদস্য হিসেবে, আমাদের পাঁচ ভাইবোনের মধ্যেই একটা আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। আমরা সবাই সবকিছু শেয়ার করি। সেটা হোক রাজনীতি, পারিবারিক, সামাজিক। আপা খুবই সাধারণ। মানুষ হয়তো অন্য কিছু ভাবতে পারে কিন্তু আপা খুবই সাধারণ। নিজের কাজ নিজে করেন। যেমন, মেহমান আসলো বাসায়। নিজেই খাবার রান্না করবে। খুব অতিথিপরায়ন লোক এবং খুব মেধাবী।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: পৌর পিতা ছিলেন আলী আহমদ চুনকা। বর্তমানে নগরমাতা সেলিনা হায়াত আইভি। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে আপনি কি মনে করেন আলী আহমদ চুনকাকে ছাড়িয়ে গেছেন সেলিনা হায়াত আইভি?

উজ্জল: আসলে আলী আহাম্মদ চুনকা এক ধাচের। আর সেলিনা হায়াত আইভি আরেক ধাচের। আমার বাবা ছিলেন আশির দশকের জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। আর আইভি আপা জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল যুগের। তবে আলী আহমদ চুনকা, চুনকাই।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: বিভিন্ন দলীয় কর্মসুচিতে মেয়র সেলিনা হায়াত আইভি ও আপনাকে একই মঞ্চে একই কর্মসুচিতে দেখা যায়, ব্যাপারটা আপনার কাছে কেমন লাগে?

উজ্জল: আসলে মনের ভিতরে এক ধরনের উৎফুল্ল ও আনন্দ ভাব থাকে। আমি যখনই কোন দলীয় কর্মসুচি করি আপা আমাকে নিজে থেকেই অনেক সহযোগিতা করেন।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: এবার ভিন্ন প্রশ্নে আসি, আইভি আপা তিনবারের মেয়র। প্রথমবার পৌর মেয়র, তার পরবর্তীতে সিটি মেয়র। এবং জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। জনপ্রতিনিধি হিসেবে ও রাজনীতিবিদ হিসেবে আইভি আপার মূল্যায়ন কি।

উজ্জল: আসলে তিনি হলেন গড গিফটেড। তার আদর্শও বাবার কাছ থেকেই পাওয়া। তিনি মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় । মানুষকে কিভাবে ভালবাসতে হয় সেটা তিনি খুব ভাল জানেন। আর তিনি রাজনীতিবিদ হিসেবে খুব চৌকস।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু বলেন?

উজ্জ্বল: আসলে ব্যক্তিগত জীবন আর কি! আমার বাবা হলেন আমার আদর্শ। আমরা পাঁচ ভাইবোন। বাবা সবসময় বলতেন মানুষের পাশে দাড়াতে। সেই থেকেই আমি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। পাঁচটা স্কুলের সাথে আমি নিজে জড়িত। আমি সাবেক ফুটবলার। আমার সবসময় মাথায় একটা জিনিসই কাজ করতো সেটা হলো আমি মানবসেবা করবো। এটা আমার বাবার কাছ থেকেই শিক্ষা পাওয়া। আমরা পাঁচ ভাইবোন সবসময় দেখতাম আমার বাবা মানুষের সুখে দুঃখে সবসময় পাশে থাকতেন। তো সেই থেকেই আসলে আমাদের শিক্ষা পাওয়া যে মানবসেবা করার। আমার দুটো সন্তান। একটি ছেলে একটি মেয়ে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে আপনি জাতীয় নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন চাইবেন। এ ব্যাপারটা কতটুকু সত্য?

উজ্জল: যেহেতু রাজনীতি করি অবশ্যই আমি চাইতে পারি। সেই লক্ষেই সংগঠনের পাশাপাশি ভোটারদের মন রক্ষার্থে বিভিন্ন কাজ করেছি এবং করছি। সাংগঠনিকভাবেও আমি সব চেষ্টা করেছি দলীয় সকল কর্মকান্ড পালন করার জন্য। আমার দলের নেতাকর্মী এবং এলাকাবাসী ইচ্ছে আছে আমি যাতে নির্বাচন করি। কিন্তু আমার এক কথা জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে সুযোগ দেন তাহলে নির্বাচন করবো। এবং নির্বাচন করার মতো প্রস্তুতিও আমার রয়েছে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলের কাছে আমি আবদার করতেই পারি। তবে শেষ কথা হলো দল যাকে নৌকার মনোনয়ন দিবে আমি তার পক্ষেই কাজ করবো। আসলে আমি দিলেও আছি না দিলেও আছি। সবসময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিটাই করে যাবো।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

উজ্জল: আপনাকেও ধন্যবাদ।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়