২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৭:৫৩, ১ মে ২০১৮

আপডেট: ০৩:১৫, ২৭ মে ২০১৮

‘আমাগো আর কিসের চাওয়া পাওয়া’

‘আমাগো আর কিসের চাওয়া পাওয়া’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ(নুসরাত জাহান সুপ্তি): শ্রমিকের রক্তে কেনা মে দিবস। প্রায় সর্বস্তরের শ্রমিকদের জন্য দিনটি ছুটির দিন। তবে কেউ বিভিন্ন মিছিল সমাবেশে যোগ দিয়ে আবার কেউ পরিবারের সঙ্গে দিবসটি পালন করে। কিন্তু যে সমস্যাগুলোর কারণে একদিন শ্রমিকরা সংগ্রাম করেছিল এবং দিবসের উৎপত্তি হয়, প্রতিনিয়ত তাদের আজও সেই সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দেশের সংবিধানে শ্রমিকদের অধিকার ও শোষন মুক্তির যে কথা বলা হয়েছে তা পড়ে আছে আড়ালেই।

প্রতিটা ক্ষেত্রেই সকল শ্রেণির শ্রমিকদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে নানা বিড়ম্ভনায়। তবে বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের। অর্থের মাপকাঠি সামলাতে না পেরে একজন নারী ঘরের বাহিরে বের হয়, অর্থ উপার্জনের আশায়। কিন্তু সেখানেও সে সমাজের বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হয়।

ফতুল্লা থানার পূর্ব শিয়াচর এলাকার একটি গার্মেন্টসের কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় প্রেস নারায়ণগঞ্জের। তাদের মধ্যে একজন মহিলা শ্রমিক বিউটি বেগম। তিনি বললেন তার কর্ম জীবনের নানা কথা।

বিউটি বেগম বলেন, ছয় বছর ধরে কাজ করি। আগে বেতন দিত চার হাজার আর এখন সাড়ে পাঁচ হাজার পাই। কিন্তু আমাগো গার্মেন্টসে নিয়মকানুন ভালা না। আমাগো ছুটির পয়সা দেয় না, হাজিরা বোনাস অনেক কম দেয়। গত কয়েক বছর ধইরা ছুটির পয়সা দেয় না, কবে দিব জানি না।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: ওভার টাইম বা অতিরিক্ত শ্রমের টাকা কীভাবে দেয়া হয় আপনাদের?

বিউটি বেগম: ওভার টাইমের টাকা ঘন্টা প্রতি দেওয়ার কথা কিন্তু কোন দিন এমন হয় একদিন সকালে যাই, পরেরদিন সকালে আসি। এই যে এত ওভারটাইম করি তখন ওভারটাইম এর টাকা বেশি হইলে আবার কাইটা রাইখা দেয়। এরপর কি আর ওভারটাইমে কাম করতে ইচ্ছা করে, কন? আবার নাস্তার বিল ১২ টা পর্যন্ত করলে ১৫ টেকা, সারা রাত করলেও ওই ১৫ টেকাই দেয়।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আপনাদের সঙ্গে গার্মেন্টেসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যবহার কেমন ?

বিউটি বেগম: ব্যবহার সবাই খারাপ করে না। কিন্তু গত মাসে ৪ জন শ্রমিককে ছাটাই কইরা দিছে। পরে সব শ্রমিক মিলা আন্দোলন করছে, কেউ কাজে যায় নাই। পরে সবাইরে কাজে ফিরতে বলছে কিন্তু সব শ্রমিকদের ওই কয়দিন এ্যাবসেন্ট (অনুপস্থিত) করে দিছে। সবাইরে কাজ করতে দিলেও ১৫ জন শ্রমিকরে মিলে ঢুকতে দেয় না। তাদের বেতন আটকায় রাখছে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: ১৫ জন কর্মচারীদের কি কাজ দিয়েছে?

বিউটি বেগম: না।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: তবে কি তাদেরকে ছাটাই করে দিয়েছে?

বিউটি বেগম: ছাটাই করে নাই কিন্তু হেগো কাজ এখনো দেয় নাই । ওই কয়জনের একজনের নাম কেলন রানী। ওই মহিলারে একদিন অফিস রুমে ডাকছে। পরে হেরে সাদা কাগজে সই করতে বলছে। মহিলা করতে চায় নাই। ওনি চেঁচামেচি করছে। বলছে" আমারে মাইরা ফেললেও আমি এই কাগজে সই করমু না"। এই কথা বলাতে পাশের মহিলা ইনচার্জ কেলন রানীরে ধাক্কা দিয়া নিচে ফালায় দেয়।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: মে দিবস; শ্রমিকদের জন্য একটা বিশেষ দিন। এ দিনে আপনাদের চাওয়া-পাওয়া কি?

বিউটি বেগম: আমাগো আর কিসের চাওয়া পাওয়া ! আমাগো ঠিক মত বেতন মুজুরি দিলেই খুশি। কিন্তু কষ্ট লাগে, আমাগো কাজ দিয়া মালিক টেকা কামায়, আর আমাগো কোন দাম নাই।

বিউটিদের মত এমন অনেক শ্রমিকরাই কাটাচ্ছে কস্টের জীবন। কেউ ঘরে কেউবা ঘরের বাহিরে। এরূপ এক শ্রমিক নূরজাহান। তিনি প্রেস নারায়ণগঞ্জকে জানান তার জীবনের প্রতিনিয়ত ঘটে চলা কিছু কথা।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: গৃহস্থালী কাজকর্মও করেন আপনি আবার গার্মেন্টের কর্মজীবন কেন বেছে নিয়েছেন?

নূরজাহান: ঢাকা শহরে থাকতে গেলে ওনার (স্বামীর) টাকায় সংসার চলে না। সংসা‌রে হাজারটা খরচ। ৪ বছর, কাজ করতাছি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: বাহিরের কাজের সঙ্গে সঙ্গে ঘরের কাজকে কিভাবে সামলে রাখেন?

নূরজাহান: সকাল পাঁচটায় ওইঠা রানতে যাই। সাতটা ভাড়াটিয়া চাইট্টা চুলায় রান্না করি। আবার মাঝে মধ্যে থাকে না গ্যাস। ৮ টায় অফিস, দেরী হইলে এ্যাবসেন্ট (অনুপস্থিত) কইরা দেয়। বিকাল ৫ টায় ছুটি হইলেও ওভারটাইম কইরা আসতে আসতে রাইত ১০-১১টা বাজে। আইয়া ঘরের সবাইরে খাওয়াই। সবজি কাইটা রাখি, সকালে সময় পাই না নাইলে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আপনার সন্তান কয়জন?

নূরজাহান: আমার দুই পোলা আরেকটা মাইয়া।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: তারা কী করে?

নূরজাহান: দেশে (গ্রামে) ওগো দাদা-দাদী থাকে। প্রত্যেক মাসে ওনাদেরও টাকা পাঠাই। মাইয়াটা ছোট। বড় পোলাটারে কামে লাগায় দিসি। বড় পোলাটা ফাইব (পঞ্চম শ্রেণি) পর্যন্ত পরছে পরে আর পরে নাই। পোলায় কাম না করলে আমাগো টাকায় আমার ঘর চলে। কিন্তু দেশে টেকা পাঠাইতে পারি না। সব ঠিকমত চলে না। ছোট পোলারে স্কুলে দিছি, কিন্তু পড়তেই চায় না। কামে লাগায় দিমু। পেটের টানে পোলা পাইন দিয়া কাম করাইতে হয়।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: মে দিবসে কিছু চাওয়া পাওয়া আছে কি?

নূরজাহান: না, কি আর চামু। কিন্তু আমাগো বেতন টা আরেকটু বাড়ায় দিলে আমার সংসারটা একটু ভাল চলত।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: ধন্যবাদ আপনাদের আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য।

শ্রমিকবৃন্দ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়