২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২১:৫২, ১৩ মে ২০১৮

মা দিবসে সাকিব খান

‘আমি তখন তোলারাম কলেজের ছাত্র’

‘আমি তখন তোলারাম কলেজের ছাত্র’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: ‘মায়ের সঙ্গে এই স্মৃতিটা খুব মনে পড়ে। আমি তখন নারায়ণগঞ্জে তোলারাম কলেজের ছাত্র। ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে পড়ছি। পড়াশোনায় ভালোই ছিলাম। পাশাপাশি মার্শাল আর্টস ও আধুনিক নাচ শিখছি। তখনও নায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি। এলাকার অনুষ্ঠানে টুকটাক নাচি। তাতেই আমি মহাখুশি। নিজের ভিতর একটা হিরো হিরো ভাব ছিল বলে এলাকার সবাইও অন্য চোখে দেখতেন। মহল্লায় সবাই একটু আলাদা চোখে দেখে। আমার নিজের মধ্যে তখন হিরো হিরো একটা ভাব!

১৯৯৮ সালের গল্প। আজিজ রেজা ভাই বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়। তিনি আমাকে একটা ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলেন। সব মিলিয়ে সময় লাগবে তিন মাস। তাতে পড়াশোনার তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু সে আমার আব্বার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন। তিনি রাজি হলে আমি সুযোগ পাবো। আর এর জন্য আব্বাকে নিয়ে যেতে হবে এফডিসিতে।

আব্বা-আম্মা দুজনই ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। একথা তাদের কীভাবে বলবো দুশ্চিন্তায় তো আমার রাতে ঘুম আসে না। আমরা দুই ভাইবোন। আমিই বড়। আম্মার সঙ্গে আমার দারুণ ভাব। আমার যত আবদার সব আম্মার কাছে। সাহস করে আম্মাকে পুরো ব্যাপারটি বললাম। তিনি আব্বাকে রাজি করাতে চাইলেন। কিন্তু কিসের কী! যতই তাকে রাজি করানোর চেষ্টা চলে ততই সে নিষেধ করে। আব্বার এক কথা, আগে পড়াশোনা শেষ করুক, তারপর দেখা যাবে।

শেষ পর্যন্ত আম্মাকে বুদ্ধি দিলাম তুমি খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেও। আমরাও দেই। আম্মার চাপের কাছে নতি স্বীকার করেন আব্বা। এফডিসিতে এসে কথা বলেন বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে। কিন্তু কোন কারণে বুলবুল ভাইয়ের কাজটি করা হয়নি। প্রথম কাজ করলাম সোহানুর রহমান সোহান ভাইয়ের ‘অনন্ত ভালোবাসা’ ছবিতে। শুটিং শেষে একটাই ভাবনা, কখন আমার ছবি মুক্তি পাবে।

ছবির মুক্তির দিন চুড়ান্ত হলো। ঢাকাসহ সারা দেশের প্রেক্ষাগৃহে আর সড়কের পাশে আমার ছবির পোস্টার। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন। কিন্তু এই ব্যাপারটি আত্মীয়স্বজন, আব্বা-আম্মার সহকর্মী, প্রতিবেশীদের কেউই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি তখন। আর এর জন্য কথা শুনতে হচ্ছিলো আম্মাকে। আম্মা চুপ ছিল। আম্মার বিশ্বাস ছিল আমি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেইনি।

ছবি মুক্তি পেল, আমার মনে আনন্দ যেন ধরে না। চারদিক থেকে নানা কথা শুনছি। সবই আমার পক্ষে। কিন্তু তখন বারবার আম্মার মুখটা ভেসে উঠেছে মনে, ছবি দেখে তিনি কী বলবেন? বাসার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম ছবিটা দেখতে। ছবি দেখে আম্মা আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। আব্বাকে বললেন,‘দেখছ, বলছিলাম না! ও দেখো একদিন রাজ্জাক সাহেবের মতো নাম করবে।’

বিপদে আপদে মা এখনো সাহস দেয়। বলে তুই না পারলে কে পারবে বোকা। আমি মায়ের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী ছেলে।’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়