‘এই মেয়ে আমি কি তোমার কাম করি’
সাবিত আল হাসান (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): সরকারি তোলারাম কলেজ ও সরকারি মহিলা কলেজ। নারায়ণগঞ্জের দুটি প্রধান বিদ্যাপীঠ। নারায়ণগঞ্জে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বহুকাল ধরে। এর সুখ্যাতির জন্য ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর থেকেও ছাত্র ছাত্রীরা লেখাপড়া করতে এই দুই কলেজে ভর্তি হয়। কিন্তু সম্প্রতি কিছু অভিযোগ ও আভ্যন্তরীণ কর্মকান্ডে বিতর্কিত হচ্ছে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে এইচ এস সি পরীক্ষা। নারায়নগঞ্জের প্রধান দুই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্র একে অন্যের প্রতিষ্ঠানে হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই দুই পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়া শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে আসছে যে পরীক্ষা হলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়। গুটি কয়েক শিক্ষকরা পরীক্ষার্থীদের লঘু পাপে গুরুদন্ড সহ প্রকাশ্যেই প্র্যাকটিকেলে ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে
এরই ধারাবাহিকতায় নতুন পালক যুক্ত হয়েছে সোমবারের এইচ এস সি পরীক্ষায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আঁখি নামে এক পরীক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে সে সময়কার অবস্থা বর্ননা করে বলেন। প্রায় ৩০ মিনিট হলে কারেন্ট ছিল না। অন্ধকারে বসে থাকার পর এক পরীক্ষার্থী মহিলা কলেজের শিক্ষক সোলেমান স্যারের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন।
কমেন্ট বক্স থেকে সংগৃহিত
ছাত্রী : স্যার আমাদের কি টাইম বাড়ায় দিবেন?
স্যার: (উল্টো হয়ে ছাত্রীর দিকে ঘুরে) এই মেয়ে কথা বলতেছো কেন?
ছাত্রী :(ভয়ে) স্যার অন্য কারো সাথে কথা বলি নাই। আপনাকে জিজ্ঞেস করছিলাম!
স্যার : আমাকে জিজ্ঞেস কেন করবা!
ছাত্রী :স্যার আপনাকেই তো করলাম!
স্যার: এই মেয়ে আমি কি তোমার কাম করি?
শিক্ষকের এমন ব্যবহারে শিক্ষার্থীরা স্বভাবতই ভেঙ্গে পরে। তাছাড়া কলেজে কলেজে রেষারেষি! তারা বলে "তোমরা অমুক কলেজের তাই না। দেখি তোমরা কেমনে পাশ করো’’ তারা এমন কথা বলে যাতে আমরা নিরুৎসাহিত হয়ে পরি।
শিক্ষকদের এমন আচরণ নতুন নয় বলে জানিয়েছে আরো কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থী। রফিক ইসলাম নামে আরেক সাবেক শিক্ষার্থী বলেন ১৯৯৯ সালেও এমন রেষারেষি দেখেছি আমরা।
বৃষ্টি নামে আরেক শিক্ষার্থী জানায়, এক বার কলেজের প্রিন্সিপাল আমারে ফোন করে একটা কাজে কলেজে যাইতে বলছিলো, কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় হঠাত সোলেমান স্যার এর সাথে দেখা হয়
উনি জিজ্ঞেস করে কলেজে কেন আসছো? আমি বললাম স্যার, প্রিন্সিপাল স্যার আমায় আসতে বলছিল।
উনি তখন আমায় উঁচু গলায় বলে প্রিন্সিপাল স্যার কি তোর বাবার কাজ করে..? তার চাকর ??
কমেন্ট বক্স থেকে সংগৃহিত
মাহমুদা সরকার অনার্স ২য় বর্ষে থাকার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ইয়ার ফাইনাল এক্সামে কারেন্ট চলে যাওয়ায় প্রায় আধা ঘন্টা বসে থাকতে হয়। কোন ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানালে তারা উল্টো ধমক দিয়ে বলেন, আমরা কি এই কাজ করি নাকি? চুপচাপ বসে থাকো নাহলে খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে যাও। আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মজা করে বলছিলো ইমপ্রুভ দিও সবাই।
এ ব্যাপারে এক অভিভাবক জানায়, কিছু শিক্ষকরা অনেক সময় বাজে ব্যবহার করে থাকে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে। বিশেষ করে পরীক্ষাচলাকালীন সময়ে, যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। সভ্য,শিক্ষিত সমাজের অগ্রদূত হিসাবে উনাদের মার্জিত, শোভনীয় ব্যবহার সকল শিক্ষার্থীর একান্ত কাম্য।
এসকল অভিযোগ নিয়ে কথা হয় মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বেদৌরা বিনতে হাবিবের সাথে। জানতে চাওয়া হয় দুই কলেজের মাঝে কোন দ্বন্দ্ব আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমরা সরকারি কর্মকর্তা। চাকরি আজ এখানে তো কাল অন্যখানে। দ্বন্দ্ব থাকবে ক্যানো? তাছাড়া আমি নিজেও তোলারাম কলেজে শিক্ষকতা করেছি। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, হয়ত কড়া গার্ডে তারা অসন্তুষ্ট হয়ে বাড়িয়ে বলছে। এসময় মিথ্যে গুজব বলে উড়িয়ে দেন ও এমন কিছু হয়নি বলে তিনি জানান। তবে একাধিক ছাত্র ক্যানো অভিযোগ করছে জানতে চাইলে বলেন, ব্যাপারটা আমি দেখবো।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম