২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২২:০১, ১০ অক্টোবর ২০২০

একমাত্র উপার্জনকারী ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা মা

একমাত্র উপার্জনকারী ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা মা

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: স্বামী মারা গেছেন বহু বছর। স্বামীর বাড়ি জামালপুরে, বাপের বাড়ি শরীয়তপুরে। গ্রামের বাড়িতে জমিজিরাত নেই। নেই থাকার মতো জায়গাও। ফতুল্লার পূর্ব ইসদাইরের রসুলবাগে ভাড়াবাড়িতে তিন মেয়ে এবং একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ছিল নাজমা বেগমের সংসার। একমাত্র ছেলে শাকিল হোসেন নাঈমই ছিল বিধবা এই নারীর অন্ধের যষ্টি। গত শুক্রবার পূর্ব ইসদাইরে দুই কিশোর দলের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে মারা গেছে নাঈম। ছেলেকে হারিয়ে এখন দিশেহারা মা।

শনিবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে নাঈমের বাড়িতে গিয়ে মিলল তেমনই এক চিত্র। ছেলের মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে আসেন মা। স্বজনরা থামান তাকে। স্নেহের ছেলেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আর কখনও দেখবেন না তার মুখ এই ভেবেই হয়তো পাগলের মতো হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি। পরে প্রতিবেশী ও স্বজনরা তাকে ধরে মাথায় পানি দেন। নিয়ে যান ঘরে। চিৎকার করে কাঁদছিলেন নাঈমের ফুফু কুলসুম বেগমও।

পূর্ব ইসদাইরের রসুলবাগ এলাকার হারাধন বাবুর বাড়িতে সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাড়ায় একটি কক্ষে মা ও তিন বোনের সাথে থাকতো কিশোর নাঈম। নাঈমের বয়স ১৭ হলেও চাকুরির সুবিধার্থে জন্মনিবন্ধন কাগজে বয়স বাড়ানো হয়েছে বলে জানান মা নাজমা বেগম। কাগজে তার বয়স ২০ বছর। অভাবের সংসারে পড়াশোনা হয়নি নাঈমের। কাজ করতেন স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায়। ওভারটাইম ও মূল বেতন মিলিয়ে ১২ হাজার টাকা আয় ছিল তার।

কাঁদতে কাঁদতে নাঈমের মা বলেন, ‘স্বামী মারা গেছে আগেই। ছোট একটা মেয়ে আছে, আরেকটার অসুখ। তাগোরে দেইখা রাখতো বড় মেয়ে। ছেলে বাইরে কাম করতো। তার বেশি কষ্ট হয় দেইখা ১৯০ টাকা রোজে হোটেলে কাজ করতাম। গত মাস থেইকা কাজ নাই। আমার ছেলেই সংসার চালাইতো। আমার ছেলে ছাড়া কেউ নাই। পোলারে হারাইয়া দুনিয়াতে আমার আর কিচ্ছু নাই।’

নাজমা বেগম বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যার পর মোবাইলে কোনো এক বন্ধুর কল পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় নাঈম। নিজের মোবাইল ফোন ঘরে চার্জে রেখে যায় সে। এরপর সাড়ে ৮টার দিকে পর তার মোবাইলে একটা কল আসে। সেই কল রিসিভ করে মা নাজমা বেগম হৈ-চৈ শুনতে পান। কয়েক সেকেন্ড পরই কলটি কেটে যায়। উদ্বিগ্ন মা প্রতিবেশীর মোবাইল ফোন দিয়ে ওই নম্বরে কল করে জানতে পারেন তার ছেলে ছুরিকাহত হয়ে হাসপাতালে। হাসপাতালেই মারা যায় তার ছেলে।

‘কেমনে কী হইছে কিচ্ছু জানি না। দুইডা কথাও শুনতে পারি নাই পোলার মুখে। আমারে বইলা যদি যাইতো, মৃত্যুর সময় যদি পাইতাম তাইলেও হইতো। বাবার লগে মনডা ভইরা কথা কইতাম।’ বলেন নাজমা বেগম।

স্থানীয় এলাকাবাসী, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত ৯টায় ফতুল্লার পূর্ব ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকায় দুই কিশোর দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মারা যায় শাকিল হোসেন নাঈম। নিহতের মা বাদী হয়ে থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলার দুই আসামি হৃদয় ও হাবিবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্য চার আসামি পলাতক রয়েছে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়