১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২১:৫০, ৬ মার্চ ২০২১

কঠোর অবস্থানে অনড় পুলিশ, হকারদের অব্যাহত হুমকি

কঠোর অবস্থানে অনড় পুলিশ, হকারদের অব্যাহত হুমকি
ফাইল ছবি

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে চাষাঢ়ায় এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। তারপরও ফুটপাত দখলমুক্ত করা যায়নি। ঘটনার কয়েকদিন পরেই পুনরায় ফুটপাত চলে যায় হকারদের। বিগত সময়গুলোতে শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিদের কাছে শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার দাবি ছিল নগরবাসীর। পুরোপুরি না হলেও পুলিশের নিয়মিত টহলের কারণে গত মাস দুয়েক ফুটপাতে অন্তত নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারছেন পথচারীরা। কিন্তু গত চারদিন যাবৎ ফুটপাতে বসার দাবিতে টানা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে বঙ্গবন্ধু সড়কের হকাররা। হকারদের সাথে যোগ দিয়েছেন কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। ফুটপাতে বসে ব্যবসা করতে না দিলে নারায়ণগঞ্জকে অচল করে দেওয়ার হুমকিও আসছে সমাবেশ থেকে। হকারদের এমন হুমকির কারণে আবারও প্রশ্ন উঠেছে, আবার কোন দিকে যাচ্ছে হকার আন্দোলন?

নারায়ণগঞ্জ শহরে নাগরিক ভোগান্তির অন্যতম কারণ হকার। শহরের ফুটপাতজুড়ে হকারের দৌরাত্মে ব্যাহত নাগরিক জীবন। শহরে যানজট দূর ও হকার উচ্ছেদের দাবি নারায়ণগঞ্জবাসীর বহুদিনের। অসংখ্যবার বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত থেকে সিটি কর্পোরেশন হকার উচ্ছেদ করে। কিন্তু এই হকার সমস্যার সমাধান মেলেনি।২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে হকারকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আহত হন সিটি মেয়র আইভী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ শতাধিক ব্যক্তি। তবে এ ঘটনার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও হকার সমস্যার সমাধান হয়নি।

সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বরাবরই হকারমুক্ত বঙ্গবন্ধু সড়কের কথা বলেছেন। নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি। ফুটপাত ছিল হকারদের দখলে। এদিকে গত বছরের ডিসেম্বরে ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে অভিযান শুরু করে জেলা পুলিশ। গত ১৩ ডিসেম্বর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে বসা হকারদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। ওই সময় সদর মডেল থানার ওসি শাহ্ জামানও অভিযানে উপস্থিত ছিলেন। এরপর থেকে নিয়মিত বঙ্গবন্ধু সড়কে টহল দিচ্ছে পুলিশ। পুলিশ দেখলে দৌড়ে সড়কের কোনো গলির ভেতর আর সরে গেলেই ফুটপাতে দখল নিচ্ছে হকাররা। এভাবেই চলছিল হকার ও পুলিশের ইদুর-বেড়াল খেলা। তবে গত ২ মার্চ থেকে লাগাতার পুলিশের কঠোর অবস্থানের বিরুদ্ধে সড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে হকাররা।

গত ৪ মার্চ এক সমাবেশে হকার নেতারা বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন মিছিল করছি এবং প্রতিদিনই মিছিল করতে হবে। শান্তিপূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মিছিল করে যেতে হবে। বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আমাদের ফুটপাতে বসার সুযোগ দেন।’ সিটি মেয়র আইভীকে উদ্দেশ্য করে তারা বলেন, ‘আপনারা হকারের পেটে লাথি মেরে, তাদের রুটিরুজি বন্ধ করে শহরের সৌন্দর্যবর্ধন করবেন তা আমরা মেনে নিবো না। বলেছিলেন হকারদের পুনর্বাসন করবেন, ১০ তলা মার্কেট করবেন ও বিশাল জায়গা হকারদের দিয়ে দিবেন। অথচ সেখানে দেখছি আপনারা প্রতিদিন পুলিশ দিয়ে হকার উচ্ছেদের আয়োজন করছেন। আমাদের দাবি মেনে না নিলে আমরা নারায়ণগঞ্জকে অচল করে দিবো। আপনারা কেউ মনোবল হারিয়েন না, আমরা অতি শীঘ্রই কর্মসূচী নিয়ে আসছি। প্রয়োজন হলে সারা নারায়ণগঞ্জের ৪০ হাজার হকারদের নিয়ে বিশাল কর্মসূচীর আয়োজন করা হবে।’

৬ মার্চও শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছে হকাররা। তারা ওই সমাবেশে বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায় ছাড়া আমরা রাজপথ ছাড়ছি না। আলোচনার ভিত্তিতে একটি সমাধানে আসুন। আপনারা তা না করে হকারদের গলা টিপে যাচ্ছেন। পুলিশকে যারা আমাদের প্রতিপক্ষ বানাচ্ছেন আমাদের সংগ্রাম তাদের বিরুদ্ধে। প্রয়োজন হলে আমরা একসাথে কারাগারে যাবো।’

এদিকে হকারদের এই আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দেখছেন কেউ কেউ। নগরবাসী বলছে, হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল চাষাঢ়ার হকার্স মার্কেটে। কিন্তু সেখানের বরাদ্দ দেওয়া দোকান বিক্রি করে দিয়ে পুনরায় সড়কের ফুটপাত দখল করেছে হকাররা। ফুটপাত মুক্ত রাখাকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এবার পুলিশ যখন কঠোর অবস্থানে গিয়ে হকার মুক্ত রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তখন হকাররা বুমেরাং আন্দোলন চালাচ্ছে বলে মন্তব্য নগরবাসীর।

এদিকে পুলিশ বলছে, ফুটপাত হকারমুক্ত রাখার বিষয়ে কোনো আপোস নেই। সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ জামান বলেন, ‘ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার জন্য মহামান্য হাইকোর্ট ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আমরা বাস্তবায়ন করছি। বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে বসে কোনো ধরনের ব্যবসা করা যাবে না। ফুটপাত মানুষের চলাচলের জন্য।’

তিনি আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করাটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু, আইন লঙ্ঘন করে জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করলে তা প্রতিহত করার জন্য পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়