২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ৮ আগস্ট ২০২০

আপডেট: ১৩:২৩, ৯ আগস্ট ২০২০

দেড় মাস যাবৎ পানিতেই ফালান মিয়ার সংসার

দেড় মাস যাবৎ পানিতেই ফালান মিয়ার সংসার

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: বর্ষার শুরুতেই বুড়িগঙ্গার পানিতে প্লাবিত হয় ফতুল্লার রাজাপুর এলাকার দিনমজুর ফালান মিয়ার (৬০) বাড়ি। গত দেড় মাস যাবৎ পানিবন্দি তিনি ও তার স্ত্রী মহিতন বেগম। প্লাবিত হওয়ার দুইদিনের মাথায় পানির স্রোতে ভেসে যায় তাদের রান্নাঘর ও টয়লেট। এক সময় পানির পরিমাণ বেড়ে তাদের ঘরে প্রবেশ করে। সেই স্রোতে ঘরের এক তৃতীয়াংশ ভেসেও যায়। ভাগ্যক্রমে পরদিন পানি নেমে যাওয়ায় আশপাশ থেকে মাটি কেটে ঘর ঠিক করে নেন ফালান মিয়া। রান্নার জন্য ঘরের মধ্যে দুই মোড়ার উপর কাঠ বিছিয়ে কোন রকম একটি চুলা বসিয়ে দেন স্ত্রীকে। বিছানায় বসে বসে প্রতিদিন রান্না করেন মহিতন বেগম। নিজেদের টয়লেট না থাকায় বাধ্য হয়ে প্রতিবেশিদেরটা ব্যবহার করেন। তবে সে জন্য প্রতিবার সাতার কেটে সেখানে যেতে হয় তাদের।

দেড় মাস আগে পানির স্রোতের তোড়ে ভেসে গেছে ফালান মিয়ার বাড়ি থেকে বের হওয়ার একমাত্র কাচা সড়কটি। সে সড়কে এখনো গভীর গর্ত ও পানি। ফলে প্রতিদিন সাতার কেটে কাজে ও বাজারে যেতে হয় ফালান মিয়াকে। মহিতন বেগম জানান, বৃদ্ধ ফালান মিয়ার শ্বাসকষ্ট আছে। হালকা ঠান্ডায় কাবু করে ফেলে তাকে। তারপরও গত দেড় মাস যাবৎ প্রতিদিন ৪ থেকে ৬ বার সাতার কেটে বাইরে যেতে হয় তার। দিনশেষে রাতে তার শ্বাসকষ্ট বাড়ে। দীর্ঘক্ষণ ভোগার পর শ্বাসকষ্টে হাপাতে হাপাতে ঘুমান তিনি।

জানা যায়, বৃদ্ধ ফালান মিয়ার দুই ছেলে দুই মেয়ে। বিয়ের পর তারা কেউ ফালান মিয়া ও মহিতন বেগমের সঙ্গে থাকেন না। এক সময় ফালান মিয়ার কিছু জমিজমা ছিলো। তিন বছর আগে ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর চেষ্টায় বৃদ্ধ ফালান জমিজমা বিক্রি করে ছোট ছেলে শামীমকে বিদেশ পাঠান। কিন্তু তার ভাগ্যে সেটাও সইলো না। খালি হাতে ফিরে এলো শামীম। শেষে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেলো সে। বর্তমানে ফালান মিয়া ভাড়া জমিতে ঘর করে বসবাস করছেন।

নিত্য ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরে মহিতন বেগম বলেন, ‘২০০৪ এরপর এই প্রথম পানি দেখছি। অন্যান্য সময় একটু আধটু পানি হত তা আবার দুদিন পর নেমে যেত। গত দেড় মাস খুব কষ্টে দিন পার করছি। সারাক্ষণ পানিতে থাকতে থাকতে পায়ে ঘা হয়েগেছে। আর ঠান্ডা-জ্বর তো লেগেইে আছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পরি যখন টয়লেটে যাবার সময় হয়। প্রত্যেকবার সাতার কেটে পাশের বাড়ি যাই। এই বয়সে শরীর আর পারে না, খারাপ করে। আমি যাও ভালো থাকি আমার স্বামী একদমই পারে না। ঔষধ খাওয়ারও স্বামর্থ নেই। করোনার কারণে দুইবার কিছু চাল পেয়েছিলাম এরপর আর কিছুই পাইনি, কেউ খবরও নেয়নি। খেয়ে না কেয়ে দিন কাটাইতে হয়।’

ফালান মিয়া বলেন, ‘অনেক কষ্টে আছি। জীবনটাই আমার কষ্টের। সেই প্রথম থেকে পানিবন্দি আমরা। ঠিক মত রানতেও পারে না। বাথরুমে যাইতে পারি না। সাতরাইয়া মাইনষের বাড়িতে গিয়া বাথরুম করতে হয়। সাতরাইয়া বাইরে যাইতে হয়। করোনা শুরু হওয়ার পর থেইক্কা আমার কাজ নাই। ছেলেমেয়েরাও আমাগো দেখে না। দেখবো কি! ওরাও তো দিন আনে দিন খায়। বয়স হইয়া গেসে, তাই কেউ কাজেও নিতে চায় না। একদিন খাই আরেকদিন না খাইয়া থাকি। এ কষ্টের শেষ নাই। কষ্টের কপাল আমার।’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়