২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২১:৪৭, ১০ অক্টোবর ২০২০

আপডেট: ১৬:২৫, ১১ অক্টোবর ২০২০

কী কারণে খুন হলো নাঈম (ভিডিওসহ)

কী কারণে খুন হলো নাঈম (ভিডিওসহ)
বা থেকে নিহত নাঈম; আসামি হৃদয়, হাবিব, সাইফ, সালাম, শাহীন

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: একই এলাকার পোশাক শ্রমিক লিমনের (১৯) সাথে কথা কাটাকাটি হয় আলামিনের (১৮)। দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হলেও সেদিন কথা কাটাকাটি রূপ নেয় হাতাহাতিতে। ক্ষিপ্ত হয়ে দলবল নিয়ে হামলা চালায় আলামিন। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মতো ঘটনা। এক পর্যায়ে আলামিনের চাচা হৃদয় ধারালো ছুরি বসিয়ে দেয় লিমনের পিঠে। বন্ধু লিমনকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে নাঈম (১৭)। হৃদয় ছুরিকাঘাত করে তাকেও।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রাতে সদর উপজেলার পূর্ব ইসদাইরের বুড়ির দোকান বলে পরিচিত এলাকার চেয়ারম্যান রোডে ঘটে এ ঘটনা। এই ঘটনায় মারা গেছে নাঈম। গুরুতর আহত অবস্থায় বিছানায় লিমন। ছুরির আঘাতে পিঠে বিরাট গর্ত তৈরি হয়েছে তার।
এদিকে নাঈমকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়েছে হৃদয় ও হাবিব। তারা সম্পর্কে একে অপরের বেয়াই। এই মামলার অন্য চার আসামি আলামিন, সাইফ, সালাম, শাহীন পলাতক। তবে গ্রেফতার হৃদয় শনিবার বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন।

স্থানীয় এলাকাবাসী, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত ৯টায় ফতুল্লার পূর্ব ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকায় দুই কিশোর দলের মধ্যে তর্কবিতর্ক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে গ্রেফতার আসামি হৃদয় শাকিল হোসেন নাঈম ও তার বন্ধু লিমনকে ছুরিকাঘাত করে। দুইজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে নাঈম সেখানে মারা যায়।

নিহত নাঈম জামালপুর সদরের বায়রা পলাশতলা গ্রামের মৃত খলিল মিয়ার ছেলে। সে পূর্ব ইসদাইরের রসুলবাগ এলাকার হারাধন বাবুর ভাড়াবাড়িতে মা ও তিন বোনের সাথে ভাড়া থাকতো। স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতো সে।

অন্যদিকে আহত লিমন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থানার বড়বাইশদিয়া এলাকার দুলাল শিকদারের ছেলে। সে পূর্ব ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার নান্নু দেওয়ানের বাড়ির ভাড়াটিয়া। কথা হয় লিমনের সাথে। তিনি বলেন, এলাকায় একটা ডিজে পার্টির আয়োজন করতে চাচ্ছিলেন তারা। শুরুতে সাথে থাকবে বলে মত দিয়েছিল আলামিন। এই বিষয়ে কথা বলতে গেলেই তর্ক বাধে তার সাথে। তর্কের এক পর্যায়ে আলামিন লিমনকে থাপ্পর দেয়। লিমনও আলামিনকে থাপ্পর দেয়। কিছুক্ষন হাতাহাতির পর আশেপাশের লোকজন তাদের ছাড়িয়ে দেয়। তবে এখানেই শেষ হয়নি দ্বন্দ্ব।

লিমন বলেন, রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই হাতাহাতির পর আলামিন তার চাচা হৃদয় ও মামা হাবিবসহ কয়েকজন নিয়ে তাদের ধাওয়া করে। সে সময় একত্রে ছিলেন নাঈম ও লিমন। লিমনদের সাথে তখন ইলিয়াস ও জিসান নামে আরও দুই কিশোর ছিল। ধাওয়া করে চেয়ারম্যান রোডের খান টাওয়ারের সামনে তাদের মারতে থাকে আলামিন, হৃদয় ও হাবিব। আবারও মারামারি বিধে যায় তাদের মধ্যে। এক পর্যায়ে লিমনের পিঠে ছুরি বসিয়ে দেয় আলামিনের চাচা হৃদয়। পরে ছুরিকাঘাত করে নাঈমকেও। এই ঘটনায় মারা যায় নাঈম।

নাঈমের বন্ধু লিমন বলেন, ‘হৃদয় কোনো কথা ছাড়াই সুইচ গিয়ার দিয়া পার দেয়। আমাকে বাঁচাইতে আইসা বন্ধু নাঈম মইরা গেলো। পেছন থেইকা এই মারামারিটা বাড়াইছে সাইফ, সালাম ও শাহীন।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, সাইফ, সালাম, শাহীনের নাম পুলিশের কাছে না বলার জন্য উজ্জ্বল নামে এক ব্যক্তি বাসায় এসে হুমকি দেন তাকে।

নিহত শাকিল হোসেন নাঈমের মা নাজমা বেগম বলেন, সন্ধ্যার পর মোবাইলে কোনো এক বন্ধুর কল পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় নাঈম। নিজের মোবাইল ফোন ঘরে চার্জে রেখে যায় সে। এরপর রাত সাড়ে ৮টার পর তার মোবাইলে একটা কল আসে। সেই কল রিসিভ করে মা নাজমা বেগম হৈ-চৈ শুনতে পান। কয়েক সেকেন্ড পরই কলটি কেটে যায়। উদ্বিগ্ন মা প্রতিবেশীর মোবাইল ফোন দিয়ে ওই নম্বরে কল করে জানতে পারেন তার ছেলে ছুরিকাহত হয়ে হাসপাতালে। হাসপাতালেই মারা যায় তার ছেলে।

কাঁদতে কাঁদতে নাঈমের মা বলেন, ‘কেমনে কী হইছে কিচ্ছু জানি না। দুইডা কথাও শুনতে পারি নাই পোলার মুখে।’

স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইসদাইর বুড়ির দোকান নামে পরিচিত এই এলাকায় একাধিক কিশোর দল (কিশোর গ্যাং) তৎপর। প্রায় সময়ই তাদের মধ্যে মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মহড়া দিতেও দেখা যায় কিশোর দলের সদস্যদের। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে সেখানে। দীর্ঘদিনের বড় ভাই, ছোট ভাই সম্বোধন, মাদক ক্রয়-বিক্রয়, এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিরোধের জের ধরেই এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদের নিয়ন্ত্রণ করেন নেপথ্যের প্রভাবশালী স্থানীয় কয়েকজন। এলাকাবাসীর কথাবার্তায় উঠে এসেছে ইয়ামিন ও নাসির নামে দুই ব্যক্তির নাম। তবে এদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি কেউ। এই প্রসঙ্গ তুললেই নিরব হয়ে যান তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক যুবক জানান, ঘটনার রাতে কাজ থেকে ফেরার পর হৈ-চৈ শুনতে পাই। ঘর থেকে বেরিয়ে দৌড়াদৌড়ি দেখতে পাই। কিছুক্ষন পরই শুনতে পাই কোপাকুপি হইছে। একজন মারাও গেছে। প্রায় সময়ই এইসব ঝামেলা এই এলাকাতে হয়। এর পেছনে কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এইসব মারামারিতে যাদের লাভ তারাই এই পোলাপানগুলারে মাতাইয়া রাখে। বেশি কিছু বলতে গেলে কালকে আপনে আমার রিপোর্ট করবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন বলেন, ওই ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামরার দুইজনকে গ্রেফতার করার পর আসামি হৃদয় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ইসদাইরে কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে জানিয়ে ওসি আসলাম হোসেন বলেন, আমরা বেশ কয়েকবার এইখানে অভিযান চালিয়েছি। অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। রুটিন ওয়ার্কের মধ্যেই আমরা এই বিষয়গুলো রেখেছি। নেপথ্যের লোকজনকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়