২৪ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২১:২১, ১৮ নভেম্বর ২০২২

আপডেট: ২১:২৯, ১৮ নভেম্বর ২০২২

‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগের পতন দরকার’

‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগের পতন দরকার’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ‘এক দফাকে সামনে রেখে আন্দোলন করছেন’ বলে জানিয়েছেন সাত রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জে এক সমাবেশে তারা বলেন, “সরকারের পদত্যাগ, অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও শাসনব্যবস্থার বদল; এই তিন মিলে এক দফা। এইবার বাংলাদেশের মানুষ এক দফার সংগ্রাম করবে। এই সংগ্রাম কেউ থামাতে পারবে না। দেশে চলমান জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের পতন দরকার।”

‘সরকার ও শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধ’ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শহরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান। সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারেননি বলে জানান আয়োজকরা।

সমাবেশে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “চাল, তেল, লবন, আটা, চিনির দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যেন বাজারে আগুন লেগে আছে। মানুষ কোন জিনিস কিনে আরামের জীবন যাপন করতে পারছে না। এখন মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এই ব্যবস্থার পরিবর্তন চায়। গণতন্ত্র মঞ্চ বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবে কিনা তা জানতে চায় মানুষ। আমরা এইটা পারবো, পারতে হবে; এই বিশ্বাস নিয়েই গণতন্ত্র মঞ্চ আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। পুরো দেশটাকে আমরা বদলে দেবো। আমরা কোন চোর, ডাকাতকে প্রশ্রয় দেবো না।”

বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশে জনসমাগমের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, “বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে মানুষকে আটকাতে পারেনি সরকার। ঢাকার সমাবেশ কোথায় হবে তা মানুষ জানে না তারপরও মানুষ ঢাকায় আসতে প্রস্তুত। যারা ক্ষমতায় আছে তারা এমনিতে ক্ষমতা ছাড়বে না। মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যাবে তারপরও না। যে সরকার জগদ্বল পাথরের মতো, আমাদের ঘাড়ের উপর সিন্দাবাদের ভূতের মতো বসে আছে তাদেরকে নামাতে হলে সমস্ত জাতির ঐক্য লাগবে। আমরা সেই ঐক্য চাই।”

মান্না বলেন, “আমাদের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বেচ্ছাচারী হওয়ার ক্ষমতা দিয়ে রেখেছে। এই ক্ষমতা থাকার পর প্রধানমন্ত্রী কেন গণতন্ত্রের চর্চা করবেন? এই কারণে আমরা সংবিধানের যেসব জায়গায় স্বেচ্ছাচারকে প্রশ্রয় দেওয়া আছে সেগুলোকে বদলাবো। এই সংবিধান বদলাবার লড়াইটাই আমাদের মূল লড়াই। গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লড়াই আমরা করছি। ন্যায্যতা ও সাম্যের জন্য লড়াই আমাদের।”

জোনায়েদ সাকি বলেন, “আমরা এক দফার আন্দোলন করছি। আমাদের এক দফার তিনটা উপাদান আছে। আমাদের আন্দোলনের কারণ আমরা ভোট দিতে পারি না। আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই সরকার ও শাসনব্যবস্থার অধীনে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম লক্ষ্য এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। দ্বিতীয় কাজ, রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। আমাদের তৃতীয় কাজ, এইদেশে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের কাঠামো তৈরি করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আইয়ুব খানের আমলে এইরকম বড় বড় স্থাপনা আমরা দেখেছি। রাস্তায় পড়ে থাকা চাল কুড়িয়ে নিচ্ছেন মানুষজন। ওএমএসের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। চাল কেনার অবস্থা দেশের বেশিরভাগ মানুষের নাই। ১৪ বছরের উন্নয়ন দুর্ভিক্ষের আওয়াজে পরিণত হয়েছে। আমরা না, প্রধানমন্ত্রী আপনি নিজে এই কথা বলেছেন।”

“এই সরকারের কাছে বাংলাদেশের মর্যাদা নাই। এদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে, এরা ক্ষমতায় থাকবেন কিন্তু মানুষ ভোট দিতে পারবে না। নির্বাচন নির্বাচন খেলা হবে কিন্তু মানুষের ভোটাধিকার থাকবে না। ভোটের দাবিতে আন্দোলন করলে গুম, খুন, হামলা, মামলা দিয়ে নির্যাতন চলবে। খেলা পরে হবে, আগে আন্দোলন হবে, লড়াই হবে। আমরা এইদেশে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। এই কারণে আওয়ামী লীগের পতন দরকার। কারণ শেখ হাসিনার কাছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়।”

রাষ্ট্রচিন্তার হাসনাত কাইয়ূম বলেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সকলেই জানেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো একই কায়দায় আর নির্বাচন করতে পারবেন না। শাসন ব্যবস্থায় আর আপনারা থাকতে পারবেন না। আগামীতে যে আপনারা আর দশ সিটও পাবেন না সেইটা বক্তৃতায় করে বলার দরকার নেই। জনগণ সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।”

জেএসডির নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার সভাপতি মোতালেব মাস্টারের সভাপতিত্বে ও গণসংহতি আন্দোলনের জেলা কমিটির নির্বাহী সমন্বয়কারী অঞ্জন দাসের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের জেলা কমিটির সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন প্রমুখ।

বিকেল সোয়া তিনটায় শুরু হয়ে সমাবেশ শেষ হয় সন্ধ্যা সাতটায়।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়