২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:৩০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০

আপডেট: ১৩:২৪, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

গ্রেফতার আতঙ্কে মসজিদ কমিটির লোকজন

গ্রেফতার আতঙ্কে মসজিদ কমিটির লোকজন

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে (চামারবাড়ি মসজিদ) ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ৯ জন। তাদের মধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির চার প্রকোশলীসহ আটজন রয়েছেন। গ্রেফতার ৯ জনকেই রিমান্ডে নিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। এই ঘটনার সাথে কারোর সম্পৃক্ততা পেলে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি। এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রশাসন, তিতাস, ফায়ার সার্ভিসের পৃথক তদন্ত প্রতিবেদনে মসজিদ কমিটির গাফিলতির বিষয়টি উঠে এসেছে। এমন অবস্থায় গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন মসজিদ পরিচালনা কমিটির লোকজন। যদিও বিস্ফোরণে মারা গেছেন মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হান্নান সাউদ ও কোষাধ্যক্ষ জেলা প্রশাসনের কর্মচারী শামীম হাসান।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ ঘটনায় পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে উৎসারিত আগুন এবং তিতাসের গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে মসজিদের অভ্যন্তরে জমা হওয়া গ্যাস থেকে বিস্ফোরণটি হয়েছে। ঘটনার পর টানা তিনদিন মসজিদের পাশে খোঁড়াখুড়ির পর তিতাসের গ্যাস লাইনের পাইপে ছয়টি লিকেজ পাওয়া যায়। তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদনে তিতাস ছাড়াও ডিপিডিসি ও মসজিদ কমিটির অবহেলার বিষয়টিও উঠে এসেছে।

অপরদিকে এই দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন মিডিয়াতে গ্যাস লিকেজ মেরামতের জন্য তিতাস গ্যাসের লোকজন ৫০ হাজার টাকা চেয়েছে বলে মসজিদ কমিটির সভাপতি একটি অভিযোগ এনেছিলেন। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিতাস গ্যাস নারায়ণগঞ্জ অফিসের গত ছয় মাসের অভিযোগ রেজিস্টার পরীক্ষা করে কোনও কিছু পাওয়া যায়নি। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কাছে তিতাসের কোন লোক টাকা চেয়েছে, তার নাম, পদবি, ফোন নম্বর ইত্যাদি চাওয়া হয়। তবে তারা এ বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে পারেননি। স্থানীয় কমিশনার, মসজিদের মুসল্লিসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের সাক্ষাৎকারে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। কিন্তু মসজিদ কমিটির সভাপতির এ ধরনের মিথ্যা বক্তব্যে তিতাস গ্যাসের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে বলে তিতাস তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।

বিস্ফোরণের ঘটনার পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হলেও বিদ্যুৎ, গ্যাস কর্মকর্তাসহ মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছে।

গত শনিবার ভোরে তিতাসের সাময়িক বরখাস্ত ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে সিআইডি। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন, তিতাস গ্যাস কোম্পানির নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা জোনের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান রাব্বী, সহকারী প্রকৌশলী এসএম হাসান শাহরিয়ার, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া, সিনিয়র সুপারভাইজার মনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী আইউব আলী, সাহায্যকারী হানিফ মিয়া, ওয়েল্ডার ইসমাইল প্রধান। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে বিস্ফোরণের ঘটনার পর ৭ সেপ্টেম্বর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে তিতাস।

শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জে সিআইডির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ডিআইজি মাইনুল হাসান বলেন, ‘তিতাস, বিদ্যুৎ বিভাগ, স্থানীয় মসজিদ কমিটির অবহেলা আছে কিনা সেই বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি। আমরা বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি, স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এছাড়া অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছি। সেসবের ভিত্তিতে তিতাসের স্থানীয় যে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন তাদের মধ্যে ৮ জনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। এই তদন্ত কাজ চলাকালে আরও যে ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।’

এদিকে শনিবার রাতেই গ্রেফতার করা হয় মোবারেক হোসেন নামে পশ্চিম তল্লা এলাকার স্থানীয় বিদ্যুৎ মিস্ত্রিকে। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক বাবুল হোসেন বলেন, ‘পশ্চিম তল্লার ওই মসজিদে দু’টি বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল। যার মধ্যে একটি বৈধ এবং অপরটি অবৈধ। অভিযোগ রয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগটি স্থানীয় বিদ্যুৎ মিস্ত্রি মোবারক হোসেনের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। এতে ডিপিডিসির সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছি। বাকিটা জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যাবে।’

এদিকে গ্রেফতার হতে পারেন বায়তুস সালাত জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির লোকজনও। বিদ্যুৎ মিস্ত্রি মোবারক হোসেনের পর গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন তারা। বর্তমানে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আব্দুল গফুর। তিনি বলেন, ‘শনিবার সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় বিদ্যুতের মিস্ত্রিকে। পরে গ্রেফতার করছে শুনলাম। আমরাও গ্রেফতারের আশঙ্কা করছি। আমরা তো ডিপিডিসিকে জানিয়েই গত রোজায় বিদ্যুতের লাইনটি নিয়েছিলাম। সব মসজিদই এই কাজটি করে।’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়