২৯ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ১৭:৪৬, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

আপডেট: ১৯:৪৭, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

ঘুরে আসুন অপার সৌন্দর্যের নেত্রকোনা

ঘুরে আসুন অপার সৌন্দর্যের নেত্রকোনা
সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে ১৫৯ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলা লাগোয়া জেলা নেত্রকোনা। এর উত্তরে মেঘালয়ের গারো পাহাড়, দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলা। কংস, সোমেশ্বরী, মগরা, ধলা প্রভৃতি এ জেলার প্রধান নদী। নেত্রকোনার বিভিন্ন জয়গায় ভ্রমণ নিয়ে কড়চার এবারের বেড়ানো।

সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি
জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি। সুসং দুর্গাপুরের সোমেশ্বর পঠকের বংশধররা এ বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। বাংলা ১৩০৪ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে জমিদার বাড়িটি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের বংশধররা এটি পুনরায় নির্মাণ করেন। এ জমিদার বাড়িটি চারটি অংশে বিভক্ত। বড় বাড়ি, মেজ বাড়ি, আবু বাড়ি ও দুই আনি বাড়ি। জানা গেছে যে, ১২৮০ মতান্তরে ১৫৯৪ খ্রীস্টাব্দের কোনো এক সময়ে কামরূপ কামাখ্যা থেকে সোমেশ্বর পাঠক নামে এক ব্রাহ্মণ এ অঞ্চলে ভ্রমণে আসেন। এখানকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানে থেকে যাবার পরিকল্পনা করেন। সোমেশ্বর পাঠক গারো রাজা বৈশ্যকে পরাজিত ও নিহত করে রাজ্য দখল করে নেন। সে সময়ে সুসং রাজ্যের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী ছিল আদিবাসী, যাদের অধিকাংশই আবার গারো। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় তিনশ বছর তার বংশধররা এ অঞ্চলে জমিদারি করে।

নেত্রকোনার হাওর
জেলার মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুড়ি, কলমাকান্দায় কম বেশি ৫৬ টি হাওর ও বিল আছে। শুষ্ক মৌসুমে হাওড়ে চাষাবাদ হলেও বর্ষা মৌসুমে তা পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। তখন এসব এলাকার একমাত্র বাহন হয় নৌকা। মোহনগঞ্জ শহর থেকে রিকশায় দিকলাকোনা গিয়ে এখানকার ডিঙ্গাপোতা হাওড়ে প্রবেশ করা যায়। এখান থেকে ইঞ্জিন নৌকায় করে হাওড়ের বিভিন্ন গ্রামে যাওয়া যায়। বর্ষাকালে হাওড়ের গ্রামগুলো একেকটি ছোট দ্বীপের মতোই মনে হয়।

          

বিরিসিরি আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি
জেলার দূর্গাপুর থানার বিরিসিরি ইউনিয়নে অবস্থিত আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি। এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার নানান নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এখানে। এখানে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় ক্ষুদে জনগোষ্ঠীগুলোর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

টঙ্ক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ
১৯৪৬-৫০ সালে কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে পরিচালিত টঙ্ক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ। আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি থেকে কিছুটা সামনে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে কিছুদূর এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে স্মৃতিসৌধটি। বর্ষা মৌসুমে সোমেশ্বরী জলে পূর্ণ থাকলেও শীত মৌসুমে নদীটি পায়ে হেঁটেও পার হওয়া যায়। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর কমরেড মণি সিংহের মৃত্যু দিবসে এখানে তিন দিন ব্যাপি ‘মণি মেলা’ নামে লোকজ মেলা বসে।

সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী
বিরিসিরি থেকে শোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকশায় রানীখং গ্রাম। এখানে আছে সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী। রানীখং গ্রামের এ ক্যাথলিক গির্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১২ সালে।

রাশমণি স্মৃতিসৌধ
রানীখং থেকে বিজয়পুর পাহাড়ে যাবার পথে বহেরাতলীতে আছে হাজং মাতা রাশমনি স্মৃতিসৌধ। ১৯৪৬ সালের ৩১ জানুয়ারি সংঘটিত কৃষক ও টঙ্ক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের অন্যতম নেত্রী হাজং মাতা রাশমণির স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে রাশমণি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এখানে নির্মাণ করেছে রাশমণি স্মৃতিসৌধ।

বিজয়পুর পাহাড়
রাশমণি স্মৃতিসৌধ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিজয়পুরে আছে চীনা মাটির পাহাড়। এখান থেকে চীনা মাটি সংগ্রহের ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট পুকুরের মতো গভীর জলাধারের। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ জলাধারগুলো দেখতে চমৎকার।

কীভাবে যাবেন
ঢাকা মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সরাসরি দূর্গাপুর যাবার বাস ছাড়ে। ভাড়া ১৮০-২০০ টাকা। নেত্রকোনা সদর থেকে দূর্গাপুর যাবার বাস সার্ভিস আছে। ঢাকা থেকে সরাসরি মোহনগঞ্জ যায় ঢাকার কমলাপুর থেকে বিআরটিসি ও মহাখালী থেকে নেত্র পরিবহন, রফ রফ পরিবহন, ইকোনো পরিবহনের বাস। ভাড়া ১৭০-১৮০ টাকা। ময়মনসিংহ থেকে মোহনগঞ্জ লোকাল ট্রেন থাকলেও তা সঠিক সময়ে চলাচল করে না।

                                                       

কোথায় থাকবেন
দূর্গাপুরে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হলো ইয়ুথ মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএ-এর রেস্ট হাউস। এখানকার তিনজনের কক্ষের ভাড়া ২০০ টাকা এবং একজনের কক্ষের ভাড়া ১৫০। ফোন- ০১৭৩১০৩৯৭৬৯।

এছাড়া এখানে ইয়ুথ ওমেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইডব্লিউসিএ পরিচালিত আরেকটি রেস্ট হাউস আছে। ফোন- ০১৭১২০৪২৯১৬।

এছাড়া দুর্গাপুরে থাকার জন্য সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। উল্লেখযোগ্য দু-একটি হলো- স্বর্ণা গেস্ট হাউস, ফোন- ০১৭২৮৪৩৮৭১২। হোটেল সুসং, ফোন: ০১৯১৪৭৯১২৫৪। হোটেল গুলশান, ফোন- ০১৭১১১৫০৮০৭। এসব হোটেলে ১০০-৫০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে। হাওড় অঞ্চলে থাকার কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই হাওড় ভ্রমণে গেলে মোহনগঞ্জ থানা শহরে থাকতে হবে। এ শহরে থাকার জন্য নিম্নমানের কিছু হোটেল আছে। এ রকম দু-একটি হোটেল হলো স্টেশন রোডে হোটেল শাপলা, ফোন: ০১৭১২১৩৭৬৫৯। স্টেশন রোডের আরেকটি হোটেল হলো হোটেল পাঠান, ফোন- ০১৯১৬৮৮৮৪৬০। এসব হোটেলের কক্ষ ভাড়া ৫০-১০০ টাকা।

অনলাইন ডেস্ক

সর্বশেষ

জনপ্রিয়