২৯ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ০০:৪৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

‘চুরির অপবাদে’ ৩ শিশুকে মেয়রের নির্যাতন

‘চুরির অপবাদে’ ৩ শিশুকে মেয়রের নির্যাতন

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে মাদরাসা পড়ুয়া তিন শিশুর চুল কেটে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী তিন শিশুর হাত বেঁধে পুরো গ্রামে ঘুরিয়েছেন ওই মেয়র। সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার গোপালদী পৌরসভার রামচন্দ্রদী বাসস্ট্যান্ডে এই ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত হালিম সিকদার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক।

ভুক্তভোগী তিন শিশুর বয়স যথাক্রমে ১১ বছর, ৯ বছর ও ৭ বছর। তাদের মধ্যে প্রথমজন স্থানীয় একটি দাখিল মাদরাসার ষষ্ঠ এবং দ্বিতীয়জন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। অপরজন স্থানীয় একটি মক্তবে পড়েন বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন জানান।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রামচন্দ্রদী বাজার এলাকায় সরকারি জায়গার উপর মেয়র হালিম সিকদার একটি টেক্সটাইল কারখানা তৈরি করেন। সম্প্রতি কারখানাটি উচ্ছেদ করলে কিছু যন্ত্রপাতি এদিক-ওদিক ছড়ানো ছিল। সকালে দুই শিশু মেয়র হালিম সিকদারের কারখানার সামনে খেলছিল। তাদের একজনের হাতে একটি শেকল দেখতে পান মেয়র। পরে তিনি ওই দুইজনের হাত পেছনদিক করে বেঁধে অপর আরেক শিশুর বাড়িতে গিয়ে তাকে ধরে নিয়ে আসেন। পরে তিনজনকে একইভাবে বেঁধে পুরো গ্রাম ঘোরান। তাদের মারধরও করেন পৌর মেয়র। প্রায় তিন ঘন্টা এভাবে ঘোরানোর পর বাজারে নিয়ে জনসম্মুখে তিনজনেরই চুল কেটে দেন।

এই ঘটনার পর বিষয়টি জানাজানি হলে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজনের বাড়িতে গিয়ে শাসিয়েছেন মেয়রের লোকজন। এক শিশুর অভিভাবক বলেন, ‘আমার বাড়িতে মেয়রের ছোটভাই মনির শিকদার ও চাচাতো ভাই আফাজউদ্দিন শিকদারসহ আরও কয়েকজন পরিবারের লোকজনকে শাসিয়েছেন। এই নিয়ে কারও সাথে কোন কথা বললে শিশুদেরসহ তাদের অভিভাবকদেরও মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।’

ওই অভিভাবক আরও বলেন, ‘এরা তো স্থানীয় মাতবর। তাগো বিরুদ্ধে তো এমনিতেই যাইতে পারমু না। তাগো বিরুদ্ধে কিছুই করমু না, থানায়ও যামু না। আপনারা লেখালেখি করলে গ্রামে থাকতে পারি কিনা সেইটাও ঠিক নাই।’

শিশুদের বেঁধে গ্রাম ঘোরানো এবং জনসম্মুখে চুল কেটে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও এই ঘটনাকে অন্যায় মনে করছেন না মেয়র হালিম সিকদার। তিনি বলেন, ‘ওরা আমার কারখানার জিনিসপত্র চুরি করেছে। এই কারণে একটু শাস্তি দিয়েছি।

অভিভাবকদের ডেকে বিষয়টি না জানিয়ে শিশুদের সাথে এমন আচরণ করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা খালি অন্যায়ের কথা বলেন। আমার ৬০-৭০ হাজার টাকার জিনিসপত্র চুরি হইছে সেইটাও তো অন্যায়। ওই পোলাপানের একটার চাচায় আমার কারখানায় কাজ করে, আরেকজনের মায়রে আমি মাতৃত্বকালীন ভাতা কইরা দিছিলাম। ওরা আমার গ্রামে থাইকা আমার থেকে সুবিধা নিয়া আমার জিনিস চুরি করলে ছাইড়া তো দেওয়া যায় না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক বলেন, ‘সাংবাদিকদের মাধ্যম বিষয়টি জানতে পেরেছি। পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ আসেনি। তবে আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়