১৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ২২ জুন ২০২২

আপডেট: ২১:০৭, ২২ জুন ২০২২

ডাক্তার ও ক্লিনিক কান্ড: রোগী আটকে রাখা হলো ৩ ঘন্টা

ডাক্তার ও ক্লিনিক কান্ড: রোগী আটকে রাখা হলো ৩ ঘন্টা

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নিয়মিত চেক-আপ করানো চিকিৎসকের কথামতো শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ভর্তি করান ব্যবসায়ী হায়দার আলী সুমন। ওই চিকিৎসকেরই অস্ত্রোপচার (অপারেশন) করার কথা থাকলেও তিনি সময়মতো আসেননি। পরে অন্য চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেন। জন্ম নেয় কন্যা সন্তান। তবে বিপত্তি ঘটে হাসপাতাল ছাড়ার সময়। চুক্তির দ্বিগুণের বেশি বিল ধরিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিলের টাকা পরিশোধ না করলে প্রসূতি ও নবাগত সন্তানকে নেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন তারা। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে বিলের বিষয়ে সমঝোতা করা সেই চিকিৎসক তার মুঠোফোন বন্ধ করে রেখেছেন। তাকে একাধিকবার ফোন করে পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকজন।

বুধবার (২২ জুন) নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকার হেল রিসোর্ট অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই ঘটনা ঘটে। দুপুর বারোটায় ছাড়পত্র দেওয়ার কথা থাকলেও বিলের টাকা নিয়ে বসচায় তিন ঘন্টা পেরিয়ে যায়। পরে বিল ৩৫ শতাংশ কমিয়ে সমঝোতায় আসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ভুক্তভোগী পরিবার। বিলের টাকা পরিশোধ করে বিকেল ৪টার দিকে প্রসূতি ও নবাগত সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন ওই ব্যবসায়ী।

হাসপাতালের বাইরে কথা হলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী হায়দার আলী সুমন জানান, শহরের চাষাঢ়ার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসেন স্যার সলিমউল্লাহ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড মিটফোর্ড হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. পারুল আক্তার। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে তার তত্ত্বাবধানে ছিলেন সুমনের স্ত্রী নীলিমা। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও গত ১৯ জুন ডা. পারুল শহরের হেলথ রিসোর্ট হাসপাতালে নীলিমাকে ভর্তি করতে বলেন। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হবে বলে জানান। দুপুর একটার দিকে স্ত্রীকে নিয়ে ওই হাসপাতালে যান সুমন। হাসপাতালের লোকজন ডা. পারুলের সাথে সবকিছু আলাপ করে ১৫ হাজার টাকা অগ্রীম দিতে বলেন। অগ্রীম টাকা দেওয়ার পর তার স্ত্রীকে ইনজেকশন দিয়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের লোকজন জানায়, ডা. পারুল ঢাকায় এক মিটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তিনি অস্ত্রোপচার করতে পারবেন না। আরেকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে তিনি রেফার করেছেন। পরে ওই চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেন। সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থাতেই তার স্ত্রী কন্যা সন্তানের জন্ম দেন বলে জানান সুমন।

বিলের কাগজ ও অগ্রীম টাকার রশিদ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল। সিজার করার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। তারপরও ডা. পারুল যেহেতু ওকে সবসময় দেখছে, তার কথাতেই এই হাসপাতালে আসি। হাসপাতালে ঢোকার পরপরই ইনজেকশন দিয়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। পরে ডাক্তার পারুল জানালেন তিনি আসতে পারবেন না, অন্য ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করা হবে। হাসপাতালের লোকজনের কথায় তখন রাজি হয়েছিলাম। অপারেশনের আগে বলেছিলেন, টাকা-পয়সা নিয়ে কোন টেনশন করতে হবে না, সব পারুল ম্যাডাম বুঝবেন। আমরাও কিছু বলিনি। কিন্তু আজকে বারোটা বাজে মা ও মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা তখন ওষুধের খরচ ছাড়াই ৫৪ হাজার ৮০০ টাকার বিল ধরিয়ে দেয়। আর অ্যাডভান্স যে ১৫ হাজার যা দিছি তাও বিলের মধ্যে লেখা নাই। অথচ ১৫ হাজার টাকা তখন রশিদ কেটে দেওয়া হয়।’

সুমন বলেন, ‘অন্য এক হাসপাতালে ২৫ হাজার টাকায় চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু ডা. পারুলের কথায় এই হাসপাতালে এসেছি। এখন বিলের টাকা পরিশোধ না করলে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে যেতে দিচ্ছে না। এদিকে ডা. পারুল ও তার অ্যাসিসটেন্ট বৃষ্টির মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি। কেউই আমার ফোন ধরতেছেন না।’

এদিকে অতিরিক্ত বিলের টাকা পরিশোধে ওই ব্যবসায়ী আপত্তি জানালে এবং সেখানে সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে সেখানে হাসপাতালের মালিকপক্ষের লোকজন উপস্থিত হন। শুরুর দিকে তারা জানান, ডা. পারুল আক্তারের সাথে রোগীর লোকজন চুক্তি করে এসেছেন। তিনি না বললে বিল কমানো যাবে না।

হেলথ রিসোর্ট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক আব্দুল মান্নান মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডা. পারুল আক্তারেরই অপারেশন করার কথা ছিল। তিনি রোগীকে পাঠিয়েও সময়মতো আসতে পারেননি। পরে আরেকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে অপারেশন করানো হয়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে সব ধরনের সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। তবে বিলের বিষয়টি ডা. পারুলের সাথে রোগীর লোকজন আগেই চুক্তি করেন। বিল কমালে ডা. পারুলই কমাতে পারবেন।’

পরে এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে প্রায় ঘন্টাখানেক আলোচনা হয়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে ডা. পারুল আক্তারের সাথেও মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। অবশেষে ৩৫ হাজার টাকা বিল পরিশোধের বিষয়ে সমঝোতা হয়। ওই বিল পরিশোধ করে বিকেল চারটার দিকে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন বলে জানান ব্যবসায়ী হায়দার আলী সুমন৷

এদিকে রোগীকে হাসপাতালে এনে তার অস্ত্রোপচার না করা এবং অতিরিক্ত বিল করার বিষয়ে জানতে স্যার সলিমউল্লাহ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড মিটফোর্ড হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. পারুল আক্তারের মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। একই নম্বরে খুদেবার্তা পাঠানোর পরও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়