২৯ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ২২:২৮, ৮ মার্চ ২০২১

আপডেট: ২২:৩২, ৮ মার্চ ২০২১

ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আইভীর অনুরোধ

ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আইভীর অনুরোধ

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচারকার্য সম্পন্ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। সোমবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় শহরের ৫ নম্বর খেয়াঘাট এলাকায় ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ৮ বছর উপলক্ষে আয়োজিত ‘আলোর ভাসান’ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন অনুরোধ জানান।

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে এ সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) মেয়র বলেন, ‘ত্বকী হত্যার বিচার হয়নি কোনো না কোনো কারণে। কিন্তু এটা যে হবে না এ কথা ঠিক না। এ বিচার হতেই হবে। ত্বকী আমাদের প্রতিবাদের প্রতীক, ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যায় অবিচার, অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ত্বকী শুধু নারায়ণগঞ্জে সীমাবদ্ধ নয়, সে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে। ত্বকীর আত্মদানের মধ্যে দিয়ে এ শহর একদিন অবশ্যই সন্ত্রাসমুক্ত করবো।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ডা. আইভী বলেন, ‘আপনি অনেক হত্যার বিচার করেছেন। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের বিচার হয়েছে। তাহলে ত্বকী হত্যার বিচার থেমে কেন? কারা এর পেছনে দায়ী আপনি জানেন। তারা কি রাষ্টের চেয়ে বড়? তারা কি এতোই প্রয়োজনীয় যে, ত্বকী হত্যার বিচার করা যাবে না? আমি অনুরোধ করছি, রাসেল হত্যার বিচার যেভাবে করেছেন সেভাবে এই খুনিদের বিচার করুন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আশিক হত্যার একমাসে আগে আমার বাড়ি গিয়েছিল। বলেছিল, আজমেরী ওসমান আমাকে বাঁচতে দিবে না। আমি বলেছিলাম, তাহলে দেশের বাইরে কোথাও চলে যেতে। আশিক যায়নি, দেশেই ছিল। নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি যখন সেটা ডিসি অফিসের মিটিং এ বললাম, তখন একজন সাংসদ বলেছেন, এই রকম দুই-চারটা হত্যাকান্ড হতেই পারে। তারপর আমাদের আদরের সন্তান ত্বকীকে হারাতে হয়েছে। এরপর মিঠু, চঞ্চল, ভুলুসহ অসংখ্য হত্যা হয়েছে। এর আগেও হয়েছে। কোনো হত্যারই সঠিক বিচার হয়নি বলে আজকে খুনিরা এত দুঃসাহসী হয়েছে।’

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে উদ্দেশ্য করে সিটি মেয়র আইভী বলেন, ‘তারা মিথ্যাচার করে বেড়ায়। এত মিথ্যা বলে, এমন প্রমাণ দাঁড় করায় যে মনে হচ্ছে, কি পন্ডিত! তারা ভাবে, তাদের পান্ডিত্য এই শহরের মানুষ, দেশবাসী কেউ বুঝতে পারে না। দু’টি ছবি মানুষের চোখে ভেসে উঠে, একটি মমতার আরেকটি ঘৃণার। কী পরিমাণ ক্ষোভ ও ঘৃণা নিয়ে মানুষ এই খুনিদের দিকে তাকায় তারা যদি তা জানতো। তাহলে তারা বুঝতে পারতো মানুষ কী পরিমাণ তাদের ঘৃণা করে। অথচ এই ঘৃণা, ক্ষোভকে তারা ভয় দেখিয়ে দমাতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ শহরকে ভীতুর শহরে পরিণত করতে চায়। খেয়াল করে দেখবেন, মার্চ মাস আসলে সকলে মিলে এমন সব কর্মকান্ড, এমন সব আলোচনা, এমন জুজুর ভয় দেখানো শুরু করে যেন কোনো কিছুই তারা জানে না। নারায়ণগঞ্জ তাদের হাতের মুঠোয়, যা খুশি করবে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনোকিছুই তারা করতে পারেনি।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে ত্বকীর স্মৃতিতে শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমী ‘খেরোখাতার পঙ্ক্তি’ ও নাট্যদল এই বাংলায় ‘কাটুই’ শিরোনামে দু’টি নাটক প্রদর্শন করে। ত্বকীকে নিয়ে লেখা কবিতা ও গান পরিবেশন করেন যথাক্রমে জিয়াউল ইসলাম কাজল ও শাহীন মাহমুদ। আলোচনা পর্ব শেষে মোমশিখা প্রজ্জ্বলিত কলাগাছের ভেলা শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে ‘আলোর ভাসান’র আয়োজন শেষ হয়।

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, নিহত ত্বকীর পিতা শিল্পী রফিউর রাব্বি, ঊদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন, জেলা সভাপতি জাহিদুল হক দিপু প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়