২৯ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:১১, ১৭ মে ২০২৩

আপডেট: ১৫:১২, ১৮ মে ২০২৩

দু’টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স চান আজমেরী ওসমান

দু’টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স চান আজমেরী ওসমান

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান দু’টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেছেন। গত ৯ মার্চ তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি বন্দুক (শর্টগান) ও একটি পিস্তলের জন্য আবেদন করেন বলে জানান জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ।

তিনি জানান, অস্ত্রের আবেদনের পর আজমেরী ওসমানের বিষয়ে তদন্তের জন্য জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে পুলিশের কাছ থেকে প্রতিবেদনের পাওয়ার পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আজমেরী ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ভাতিজা। তার মা পারভীন ওসমান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য।

আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালের ৬ মার্চ অপহরণের পর নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন কিশোর ত্বকী। দুইদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর শাখা খাল থেকে ত্বকীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ত্বকীর পিতা ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, ত্বকী হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হবার পর আজমেরী ওসমানের অন্যতম সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ওই জবানবন্দিতে ভ্রমর জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে অপহরণের পর শহরের আল্লামা ইকবাল রোডে আজমেরীর টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। ত্বকী হত্যার এক বছরের মাথায় সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবও একই কথা জানিয়েছিল। ত্বকী হত্যার পর র‌্যাব আজমেরীর টর্চার সেলে অভিযান চালিয়ে রক্তমাখা প্যান্ট, পিস্তলের বাট, মাদক ও নির্যাতনের সরঞ্জামাদি জব্দ করে।

আজমেরী ওসমানের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন নিয়ে উদ্বেগ জানান রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, “শুধু ত্বকী না, নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চল, ভুলু, মিঠু হত্যায়ও আজমেরী ওসমান জড়িত। চারটা-পাঁচটা টর্চার সেল সে চালাতো। এসব টর্চার সেলে ব্যবসায়ীদের নিয়ে নির্যাতন করতো। এখনও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও হোন্ডার মহড়া দিয়ে শহর দাপিয়ে বেড়ায় আজমেরী ও তার লোকজন। তাকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হলে নারায়ণগঞ্জের মানুষ আতঙ্কিত হবে।”
আজমেরী ওসমানকে অস্ত্রের লাইসেন্স না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।

জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আজমেরী ওসমানের নিবাস ফতুল্লা মডেল থানায় হওয়াতে এটি পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে ফতুল্লা মডেল থানায় তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

জানতে চাইলে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিজাউল হক দিপু বলেন, “অস্ত্রের লাইসেন্স একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়। এসপি অফিস শেষে তদন্তের জন্য থানায় পাঠানো হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন এসপি অফিসে পাঠানো হবে। সেখান থেকে ডিসি অফিসে যাবে।”

ত্বকী হত্যা ছাড়াও আজমেরী ওসমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, চাঁদাবাজি, ভূমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৬ মার্চ আজমেরী ওসমানের সন্ত্রাসী বাহিনী বন্দর উপজেলার ফরাজিকান্দা এলাকায় ৬৬ শতাংশ জমি দখলে গুলি চালান। এই সময় ওই জমির মালিক মঈনুল হক পারভেজ ও তার স্ত্রী গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার ২০ দিন পর মারা যান পারভেজ। তিনি জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক আহ্বায়ক ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান রাইসুল হকের ছেলে।

এর আগে গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ত্বকী হত্যাকান্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় ‘সময়ের নারায়ণগঞ্জ’ পত্রিকা অফিসে হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনায় পত্রিকাটির সম্পাদক জাবেদ আহমেদ জুয়েল সদর মডেল থানায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। অভিযুক্তরা সকলেই আজমেরী ওসমানের সহযোগী বলে পরিচিত।

২০২০ সালে আজমেরী ওসমান ও তার তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে হত্যার হুমকির অভিযোগে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন মডেল ডি ক্যাপিটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানার ডিজিএম অরূপ কুমার সাহা।

২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের আল্লামা ইকবাল রোডে (কলেজ রোড) আজমেরী ওসমানের ব্যক্তিগত কার্যালয় ও বাসায় অভিযান চালিয়ে এক ব্যসায়ীর কাছে চাঁদাবাজির অভিযোগে তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আজমেরী ওসমানের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদনের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, “আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য যে কেউ আবেদন করতে পারে। তবে তিনি আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়ার যোগ্য কিনা তা খতিয়ে দেখার পরই লাইসেন্সের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজমেরী ওসমান দু’টি অস্ত্রের আবেদন করেছেন। একটি শর্টগান (বন্দুক) ও একটি পিস্তল। শর্টগানটির লাইসেন্স জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে দেওয়া হয়। কিন্তু পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়