১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:২৩, ২৮ জুন ২০২২

আপডেট: ২২:২৮, ২৮ জুন ২০২২

নগরীতে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে মানববন্ধন

নগরীতে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে মানববন্ধন

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নড়াইলে মির্জাপুর মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনা এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে হয়রানির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা। মঙ্গলবার (২৮ জুন) সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মুন্নি সরদারের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি মো. সেলিম, কবি রঘু অভিজিৎ রায়, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আহ্বায়ক প্রদীপ সরকার, জেলার সদস্যসচিব জামাল হোসেন, জেলা কমিটির সদস্য সেলিম আলাদীন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে অধ্যক্ষের কাছে উত্তেজিত অবস্থায় যান এলাকাবাসী ও কিছু শিক্ষার্থীরা। সে সময় তিনি কলেজের সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে বিষয়টি পুলিশকে জানান। এতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় তিনি ওই শিক্ষার্থীকে রক্ষা করার জন্য পুলিশে ফোন করেন। এ কথা বলে উত্তেজিত ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ওই শিক্ষকের উপর হামলে পড়েন। এ সময়ে কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষকেও নির্মমভাবে প্রহার করে আহত করা হয়। অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস, শিক্ষক প্রশান্ত রায় এবং শিক্ষক আরুণ কুমার মন্ডলের তিনটি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় ধর্মান্ধ দুর্বৃত্তরা। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কলেজে তা-ব চালানো হয়। অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা গলায় দিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। এসময় সেখানে পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে একজন শিক্ষকের এধরণের লাঞ্ছনা শুধুমাত্র সেই শিক্ষক নন গোটা জাতির জন্য লজ্জাজনক। এই ঘটনায় এখনো কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিভিন্ন সূত্রে এখন জানা যাচ্ছে কলেজেরই একটি চক্র শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অন্য একজনকে ওই পদে আনতে চান বলেই এমন মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে লাঞ্চিত করা হয়েছে। এর পেছনে নিয়োগ বাণিজ্য ও অন্যান্য কায়েমী স্বার্থের বিষয় আছে বলে জানা গেছে।

তারা আরও বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান সঞ্জয় সরকার এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়ের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে তাদের বিরুদ্ধে কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। মৌলবাদবিরোধী তাদের অবস্থানকে ধর্মীয় অবমাননা বলে প্রচার করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি এই সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে। সম্প্রতি রংপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা প্রশ্নে একটি উদ্দীপকে নারীর অশালীন পোষাকই ইভটিজিং এর জন্য দায়ী এ সংক্রান্ত বক্তব্য দেয়া হয়। সারা দেশের প্রগতিশীল মানুষ এর প্রতিবাদ করে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকেরাও এর প্রতিবাদ করেন। যেখানে দরকার ছিল ওই পরীক্ষার প্রশ্ন প্রস্তুতকারীকে খুঁজে বের করা এবং শাস্তির আওতায় আনা তা না করে এখন প্রতিবাদকারী শিক্ষকদেরকে হেনস্থা করা হচ্ছে।

রফিউর রাব্বি বলেন, এর আগে নারায়ণগঞ্জে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান শ্যামল কান্তি ভক্ত নামে একজন শিক্ষককে সকলের সামনে চড় মেরেছিলেন এবং কান ধরে উঠবস করিয়ে পুলিশে দিয়েছিলেন। ওই সংসদ সদস্য বা এর সাথে যুক্তদের কোন বিচার হয়নি। মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-লকে বিজ্ঞান পড়ানোর অপরাধে মারা হয়েছিল, জেলে দেয়া হয়েছিল। সে ঘটনার সাথে যুক্ত কারো বিচার হয়নি। নওগাঁয় হিজাব পরার কারণে একজন শিক্ষার্থীকে মারধোর করেছেন এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমোদিনী পাল নামের একজন নারী শিক্ষককে হেনস্থা করা হল। অথচ দেখা গেল স্কুল ইউনিফর্ম না পরে আসায় তিনি শিক্ষার্থীদের বকাঝকা করেছেন। একের পর এক এ ধরণের ঘটনা ঘটে চলছে অথচ রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসন কোন ঘটনার বিচার করছে না।

আবু নাঈম খান বিপ্লব বলেন, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কাউকে ঘায়েল করে কোন গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধার, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও উন্মাদনা তৈরি করা ইত্যাদি আজ হরহামেশাই ঘটে চলেছে। শাসকদলের সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী রাজনীতি তোষণ এবং একের পর এক ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচার না হওয়ার কারণেই এ ধরনের সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির বিস্তার ঘটছে। তিনি অবিলম্বে শিক্ষকদের উপর এই নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এবং ধর্মান্ধ-মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং এদের প্রশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনায় বিশ্বাসী সকল বাম-প্রগতিশীল ধর্মনিরপক্ষ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল-সংগঠন-ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন-গণপ্রতিরোধের মাধ্যমে রুখে দাড়ানোর জন্য আহ্বান জানান।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়