১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ১৯ মে ২০১৮

আপডেট: ০৩:১২, ২৭ মে ২০১৮

না.গঞ্জের হারিয়ে যাওয়া এক ইতিহাস ‘মুড়ির টিন’

না.গঞ্জের হারিয়ে যাওয়া এক ইতিহাস ‘মুড়ির টিন’

মোঃ ফখরুল ইসলাম (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): মুড়ির টিন। হঠাৎ মনে হবে মুড়ি রাখার পাত্র। স্বাভাবিক ভাবে এমনটাই মনে হওয়ার কথা। কিন্তু এই মুড়ির টিন নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটের প্রথম গণপরিবহন ছিল নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে গুলিস্তান অথবা সদরঘাট যেতে হলে মুড়ির টিন ছাড়া উপায় ছিল না। বাদুর ঝোলা কিংবা মুড়ির মত ভরাট হয়ে যে ভাবেই হোক সে সময় এই বাসটিই ছিল যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম। বাসটিকে শেষবারের মত ৯০’র দশকের ১ম দিকে দেখা গেছে। যা আজ নারায়ণগঞ্জের হারিয়ে যাওয়া এক ইতিহাস।

নারায়ণগঞ্জ থেকে সদরঘাট রুটে মুড়ির টিন বাস চলত। শহরের ১নং রেলগেইট এলাকার ফলপট্টি ও পুরোনো বোস কেবিন ও মিষ্টি মুখের উল্টো দিকে থেকে ছাড়ত বাসগুলো। পুরান ঢাকা ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে থেকে যাত্রী নিয়ে পুরাতন নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা সড়ক হয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতো বাসগুলো। ফলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রিয় বাহন ছিল এটি। যাওয়ার সময় শহরের দিগুবাবুর বাজারের ভেতর দিয়ে (মীর জুমলা সড়ক) বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়ক (বিবি রোড) হয়ে চাষাড়া চত্তর হয়ে ঢাকায় যেত। ঢাকার গুলিস্তান ও ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে থেকে ছাড়ত বাসটি। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের ভাড়া ছিল ‘ছ আনা বা আট আনা’।



মুড়ির টিন নামকরণ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে এ অঞ্চলে মিত্রবাহিনীর ব্যবহৃত ট্রাক ও গাড়ি নিলামে বিক্রি হয়। ট্রাকগুলো কাঠের বডিতে বাসের আদল দিয়ে তৈরি হয় নাক বোঁচা বাস। বাইরের দিকে কাঠের বডির ওপর মুড়ে দেওয়া হয় টিন। সে থেকেই বাসটির নাম হয় মুড়ির টিন। আবার অনেকের মতে, মুড়ির মতো ভরাট হয়ে অধিক যাত্রী ওঠানোর কারণে নাম হয়েছে মুড়ির টিন।

কেমন ছিল মুড়ির টিন
নারায়ণগঞ্জে ঘোড়া আর গরুর গাড়ি থাকলেও গণপরিবহন হিসেবে মুড়ির টিনই ছিল ভরসা। ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করা হতো ইঞ্জিন। কাঠের বডি তৈরি করত স্থানীয় মিস্ত্রিরা। ভেতরে চারধারে বেঞ্চের মতো করে সিট বসানো হতো। ২০-২২ জন বসার সুযোগ পেত। ৫০ জনের অধিক যাত্রী দাঁড়িয়েই থাকত। স্টিলের জানালার পুরোটাই খোলা যেত বলে বাতাস চলাচলের সুযোগ ছিল বেশি। প্রথমদিকে হাতে হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে স্টার্ট দিতে হতো। পরে হ্যান্ডেলের পরিবর্তে চাবি সংযোজন করা হয়। গাড়ির গতি থাকত ঘণ্টায় ১৫-২৫ কিলোমিটার। স্টিয়ারিং ছিল শক্ত। পিতলের হর্ন চাপ দিয়ে বাজানো হতো।
বাসের সামনের দিকটার সিটগুলো বরাদ্দ ছিল মহিলা যাত্রীদের জন্য। তার পরের সারিগুলো ছিল পুরুষদের দখলে। বাসের পেছন দিকটায় যারা বসত তারাই বুঝত আসল মজা! ব্রিটিশ আমলের লোকাল বাস, সামনের আর জানালার কাঁচ ছাড়া বাকি সব পিওর কাঠের তৈরি। পেছনের কারোর মাথা পর্যন্ত ঠেকে যেত ছাদে গিয়ে। কন্ডাক্টরের কাঁধের একপাশে থাকত লম্বা ফিতাযুক্ত চামড়ার ব্যাগ। টাকা, পয়সা ও টিকিট রাখার জন্য আলাদা তিনটি পকেট ছিল তাতে।

ইমদাদুল হক মিলনের স্মৃতিতে মুড়ির টিন
কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক ইমদাদুল হক মিলনের স্মৃতি চারণায় উঠে আসে মুড়ির টিন। তিনি তার স্মৃতিচারনমূলক লেখায় লিখেছেন, এই ধরনের বাসগুলোর একটা ডাকনাম ছিল মুড়ির টিন। আসল নাম ‘টাউন সার্ভিস’। ছ আনা বা আট আনায় ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ। গুলিস্তান থেকে ছাড়ত, ভিক্টোরিয়া পার্কের ওদিক থেকে। ভিক্টোরিয়া পার্কের নাম ততোদিনে ‘বাহাদূর শাহ পার্ক’ হয়ে গেছে। সেই পার্কের দক্ষিণ দিকে রাস্তার ওপাশে ‘মিউজিক্যাল মার্ট’ নামে একটা স্টুডিও ছিল। বিখ্যাত লোকজনরা গিয়ে ছবি তুলত সেই স্টুডিওতে। নারায়ণগঞ্জের বাস ছাড়ত ওই স্টুডিওর সামনে থেকে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়