২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৫:৩৬, ১৬ ডিসেম্বর ২০২০

আপডেট: ২১:০২, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

নারায়ণগঞ্জ কারো বাপের নয়: আইভী

নারায়ণগঞ্জ কারো বাপের নয়: আইভী

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, যারা পদ পদবীর লোভে অথবা নিজেদের দুর্বলতাকে ঢেকে রাখার জন্য আমাদের নিজেদের মধ্যে ফাটল ধরানো চেষ্টা করেন। নিজেদেরকে বেশি জাহির করার চেষ্টা করেন। তাদের মনে হয় সাবধান হওয়া প্রয়োজন। কারণ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যারা নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছে তারা কিন্তু মেরুদন্ডহীন নেতৃত্ব দেয় না। তারা কিন্তু বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিকে ভালোবাসে ও শেখ হাসিনার সৈনিক। বঙ্গবন্ধুর চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে শেখ হাসিনার সৈনিকরা কখনো পরাজিত হয় না। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবে। সেই দিন এখন আর নাই। যে আপনারা নিজের দলের ভিতরেই ষড়যন্ত্র করে মামলা মোকাদ্দমা দিয়ে ফাসিয়ে তারপর কোনঠাসা করে দিবেন। সেই সময় এখন কিন্তু আর নাই।

বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আয়োজিত সভায় তিনি এইসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, যারা ভন্ড তারা সাবধান হয়ে যান। বাজে কথা বলে নারায়ণগঞ্জবাসীকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করবেন না। এই ধরনের বাজে কথা আপনাদের মুখে অনেক শুনেছে মানুষ। কিছুই বলে না। তার একটাই কারণ আওয়ামী লীগ করেন। যখন কোন কারণে দল ক্ষমতায় ছিল না তখন শহরে আপনাদের টিকিটিও খুজে পাওয়া যায়নি। বড় বড় কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্তি না করে নিজের অবস্থান থেকে শেখ হাসিনার জন্য, দেশের ও মানুষের জন্য কাজ করুন।

আইভী বলেন, ভাস্কর্য নিয়ে অনেকেই কথা বলেছেন। এই শহরে যত ভাস্কর্য দেখছেন সেটা কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন করে দিয়েছে। এর আগে এখানে যে প্রতিরোধ স্তম্ভ করেছেন সেটা সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন করেছেন। বিজয়স্তম্ভও এমপি গিয়াস উদ্দিন করেছিলেন। তার বাইরে আপনি যা দেখবেন শহীদ মিনার থেকে শুরু করে এই ভাস্কর্য এইপাড় ওইপাড় সেইগুলো কিন্তু সব নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন করেছে। যারা মিথ্যে কথা বলেন যে মেয়র কেন কথা বলেন না। মেয়রের কাজ মেয়র করেছেন রক্ষা করার দায়িত্ব জনগণের, আওয়ামী লীগের, এই শহরের জনগণের।

তিনি আরও বলেন, দেখেন দুর্বৃত্তায়ন কোথায় চলে গেছে। মহানগর আওয়ামী লীগে সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভেঙ্গে ফেললো জাতীয় পার্টি এমপি। প্রতিবাদ করতে গিয়ে সেখানে আবার অব্যাহতি দিতে হয় আমাদের জেলা আওয়ামী লীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর আলমকে। কি বিচিত্র এই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি। মুখ দিয়ে একটা কথা বের হয়ে গেছে। যিনি আপাদ মস্তক আওয়ামী লীগ করলেন। জয়বাংলা ছাড়া যার মুখে কোন দিন অন্য কোন শব্দ উচ্চারিত হলো না। জেল জুলুম খাটলেন। একটা মানুষ বক্তৃতা দিতে গেলে সময় সময় স্লিপ অব টাং হয়। সেটাই তার ক্ষেত্রে হয়েছে। তিনি মাফও চেয়েছেন। কিন্তু কত বড় ষড়যন্ত্রকারী তারা এটা ক্ষমা দৃষ্টিতে না দেখে তাকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য চিঠি লিখলো। তারা সুযোগ সন্ধানী, যখনই দল ক্ষমতায়, দলের সবকিছু লুটপাট করে খাওয়ার জন্য তারা এই ধরনের কর্মকান্ডগুলি করে থাকে।

তিনি বলেন, আমি কোনদিনও কোন্দলে বিশ্বাসী না। ২০০৩ থেকে এই পর্যন্ত আমার কোন ধরনের বিদ্বেষমূলক, বিভেদমূলক কোন বক্তব্য আপনারা খুজে পাবেন না। একমাত্র ত্বকী হত্যা ছাড়া। ত্বকী হত্যা সজোরে প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক কিছুতে অনেক কিছু বলা হয়েছে। আর যেটা সত্য সেটা আজীবন বলবো। যতদিন বেঁচে থাকি। এর বাহিরে গিয়ে দলীয় প্লাটফর্মে আমি সবসময় আহ্বান জানিয়ে এসেছি আসেন এক সাথে রাজনীতি করি। ২০০৩ থেকে শহর আওয়ামী লীগ, শহর যুবলীগ, জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে আমি সরব ছিলাম কিনা তা দেখার ব্যাপার আছে এবং আমার নেতৃত্বে এই সম্মেলনগুলো হয়েছে কিনা সেটাও একটু চিন্তা করেন। আমরা সহজেই সব কিছু ভুলে যাই। আসলে এতকিছু ভুলে যাওয়া মনে হয় ঠিক না।

খোকন সাহার উদ্দেশ্যে বলেন, ১১শ কোটি টাকার মালিক বানিয়ে দিয়েছেন মেয়র আইভীকে। সে টাকা যদি আপনি দেখাতে না পারেন আপনার বিরুদ্ধে সাইবার এ্যাক্টে মামলা হবে। এই ধরনের কথাবার্তা বলার আগে হুশ করে বলবেন। দায়িত্বশীল পদে আছেন দায়িত্ব নিয়ে সবাই কথা বলবেন। বলার আগে তিনবার চিন্তা করবেন কি বলছেন। যাকে ঘায়েল করার জন্য এই সব করছেন সে নমিনেশনের লালায়িত না। নমিনেশনের মালিক, নৌকার মালিক একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনা। ওনি যাকে নৌকা দিবে সেই নৌকার হয়ে নির্বাচন করবে। সেটা যে কেউ হতে পারে। সেটা জননেত্রী সিদ্ধান্ত নিবে। যে নারায়ণগঞ্জে ওনি কাকে দিয়ে সিটি কর্পোরেশন নৌকা নির্বাচন করাবে, কাকে দিয়ে আওয়ামী লীগ চালাবে। সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব তার। সিদ্ধান্তে মালিক যিনি তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে দেন। মন চায় না তো কইরেন না। কিন্তু দয়া করে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।

তিনি বলেন, আইভীর এই নারায়ণগঞ্জ শহর না সারা পৃথিবীতে একটা কানাকড়ি ও এক ভরি গয়নাও নাই। একটি জায়গাও নাই। কিন্তু এখানে হিন্দু, মুসলমানদের ডিভিশন করার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারগুলো চালানো হচ্ছে। মুসলমানদের মধ্যে কালি পূজা করি বলে প্রচার করে হেফাজতকে ক্ষ্যাপানোর জন্য। এই পুরোনো রাজনীতির থিওরী কিন্তু আমরা নারায়ণগঞ্জবাসি জানি। পুরানো থিওরী দিয়ে সবসময় কাজ হয় না। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কল্যাণে আমাদের দেশ কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ। কোথায় কোন জায়গায় সুক্ষ্ম পলিটিক্স করতেছেন কার বিরুদ্ধে কেন করতেছেন সেটা এখন প্রকাশ হয়ে যায়।

মেয়র আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জে আমরা যে সম্প্রীতি নিয়ে আছি। সেই সম্প্রীতির উদাহরণ আমার ব্যাখ্যা এখানে দিব না। আরেকদিন দিব। আমি কি করেছি আমার হিন্দু সম্প্রাদয়ের জন্য, মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রাদায়ের জন্য। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা প্রধানমন্ত্রীর, বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে চলে। অসম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। দলমতে উর্ধ্বে উঠে ধর্মীয় চেতনার উর্ধ্বে উঠে মানুষের কল্যানে কাজ করি। মানুষের কল্যানে কাজ করি বলেই মানুষের মাধ্যমে আমি খোদাকে খুঁজে বেড়াই। সুতরাং আমাকে যা বলবেন, আমাকে বের করে দিবেন, আমি তাহলে কোথায় যাবো বরিশাল যাবো। বরিশাল যাদের বাড়ি ঐখানে আমাকে বাড়ি ঘর করে দেন। অথবা আমাকে দাউদকান্দি একটা বাড়ি করে দেন। দাউদকান্দিতে সেখানে সুন্দর করে ঘরবাড়ি বানিয়ে দেন চলে যাই। নারায়ণগঞ্জ কারো বাপের নয়। ভিটা মাটি সিএসএস আরএসএস অনুযায়ী মালিক। চাইলেই বের করে দিবে। এত সুন্দর কথা যদি আর বলেন তাহলে কিন্তু সাবধান হয়ে যান আমি বললাম। আর যেটা চাচ্ছেন যে ইলেকশেনের আগে নারায়ণগঞ্জের মাটি গরম করবেন, রাস্তায় নামাবেন। হবে না। এইগুলি হবে না। আপনাদের জবাব আপনি নিজ দলের নিজ কর্মীদের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন। বাইরের লোক লাগবে না।

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আনিসুর রহমান দীপু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আরজু রহমান ভূইয়া, যুগ্ম সম্পাদক (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, সাবেক নারী সাংসদ হোসনে আরা বাবলী প্রমুখ।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়