২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:৫৩, ১৯ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ২০:৫৩, ১৯ মার্চ ২০২৩

নারায়ণগঞ্জে ময়লা রাজনীতি

নারায়ণগঞ্জে ময়লা রাজনীতি

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আভিধানিক ময়লার সমার্থক শব্দ আবর্জনা। ময়লা কিংবা আবর্জনা যে নামেই ডাকা হোক কোনটাই স্বাস্থ্যকর না। সুস্থ থাকতে চাইলে ময়লা এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়। তবে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ‘ময়লা’ গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। ঘুরে ফিরে বারবার নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আসে এই ময়লা। এই ময়লার রাজনীতি কলুষিত করেছে নারায়ণগঞ্জকে। প্রতিবার গণমাধ্যমের খবর হয়েছে নারায়ণগঞ্জ। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বহুবার ব্যবহার করা হয়েছে এই ময়লা রাজনীতি। সর্বশেষ নগরভবনে ময়লা নিয়ে রাজনীতি দেখল নারায়ণগঞ্জবাসী।

গত ১৪ মার্চ দৈনিক মজুরি ও উৎসব ভাতা বৃদ্ধিসহ ছয় দাবিতে বিক্ষোভরত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নগরভবন চত্ত্বরে ও দাতা সংস্থার গাড়িতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে বিক্ষোভ করে। বেতন বাড়ানোর পরও ময়লা ফেলে বিক্ষোভ করায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

পরিচ্ছন্ন কর্মীদের উদ্দেশ্যে তখন মেয়র বলেন, ‘দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করবেন ঠিক আছে আপনাদের দাবির বিষয়ে আলোচনা হবে। তাছাড়া বেতন বাড়ানোও হয়েছে আপনাদের। কিন্তু ময়লা ফেলে রাখা আপনাদের ঠিক হয়নি।’

এদিকে এই নিয়ে কথা বলার সুযোগ হাতছাড়া করেননি মেয়র আইভীর সবসময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। ওই ঘটনার পরদিন তিনি বক্তাবলী এলাকায় এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন। ওইদিন পরিচ্ছন্ন কর্মীদের কাছে মেয়র আইভীর বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চান। শামীম ওসমান বলেন, ‘একজন মেয়রের কাছে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা গিয়েছিলেন। তাদের বলা হলো ভাত খেতে পাস না, ফোন কিনিস কীভাবে। এটার উত্তর আমি দেব না। যাদের বলা হয়েছে চাকরি খেয়ে দেবো, আমি তাদের সবার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছি।’

এর পাল্টা জবাবও আসে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষ থেকেও। গত ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দেওয়া বক্তব্যে ময়লা নিয়ে ‘নোংরা রাজনীতি’ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আইভী। তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত আর কিছু পেলো না, আমার সুইপারদের নিয়ে রাজনীতি করা শুরু করলো।’ এই ধরনের ‘নোংরা রাজনীতি’ বন্ধেরও আহ্বান জানান তিনি।

নারায়ণগঞ্জের সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের মধ্যে বিরোধ অনেক পুরাতন। সুযোগ পেলেই একজন আরেকজনকে এক হাত নেন। এই ঘটনায়ও সেটা দেখা যায়। তাদের পাল্টাপাল্টি এই বক্তব্যে চাপা পড়ে যায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের আন্দোলনের দাবি দাওয়া। বরঞ্চ আন্দোলনের পিছনে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের রাজনীতিটা সামনে দৃশ্যমান হয় বলে অভিমত অনেকের।

অবশ্য নারায়ণগঞ্জে এই ময়লার রাজনীতি শুরু অনেক আগ থেকে। ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নারায়ণগঞ্জ আগমন উপলক্ষে আওয়ামী লীগেরই একটি অংশ ঢাকা-ফতুল্লা রোডে এইভাবে ময়লা ফেলে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চেয়েছিল। সেই দিনের ঘটনার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আইভী বলেন, ‘ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জে প্রথম জননেত্রী শেখ হাসিনা সংবর্ধনা দিয়েছিল আলী আহাম্মদ চুনকা৷ তিনি একাধারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট ও পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন৷ ওইদিনও কতিপয় নেতা ঢাকা-ফতুল্লা রোডে এইভাবে ময়লা ফেলে রেখেছিল৷ আমার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা সুইপারদের দিয়ে সেই ময়লা পরিষ্কার করে নেত্রীকে সংবর্ধনা দেন৷ ’

তারও অনেকদিন পর আবার ময়লা নিয়ে রাজনীতি শুরু হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, বিবৃতি, মানববন্ধনও করা হয়েছিল ফতুল্লা স্টেডিয়াম সংলগ্ন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে ময়লা ফেলা নিয়ে। ময়লা ফেলার জন্য একাধিকবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে দুষেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। পাল্টা জবাবও দিয়েছিলেন মেয়র আইভী। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, আগে ময়লা ফেলা হলেও ২০১৮ সাল থেকে আর ময়লা ফেলা হয় না। তারপরেও থেমে থাকেনি পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করা। বর্তমানে ৬ লেনের কাজ ধরার পর অবশ্য ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ময়লা নিয়ে রাজনীতি বন্ধ।

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির ইতিহাসে বারবার ফিরে এসেছে এই ময়লা। এই ময়লা এখন প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই অভিমত রাজনীতি বিশ্লেষকদের। তবে এই ‘ময়লা রাজনীতি কিংবা রাজনীতির ময়লা’র শেষ কোথায় সেই প্রশ্ন নারায়ণগঞ্জবাসীর।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়