নারায়ণগঞ্জে লকডাউনেও চলছে সাতঘোড়া সিমেন্ট ফ্যাক্টরি
প্রেস নারায়ণগঞ্জ: করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা প্রতিরোধে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লোকডাউন ঘোষনা করেছে আইএসপিআর। এছাড়াও সরকার সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে ২৫ এপ্রিল করেছে। বন্ধ রয়েছে সকল সরকারী-বেরসকারী অফিস, আদালত, গার্মেন্টস, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন। জনসমাগম ঠেকাতে রাস্তায় লোক চলাচলে বিধি নিষেধ আনা হয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জের ৬নং ওয়ার্ডের আইলপাড়ায় সেভেন হর্স সিমেন্ট (সাতঘোড়া সিমেন্ট) কারখানা এখনো চালু রয়েছে। যার ফলে এখানে কর্মরত প্রায় ৪ শতাধিক শ্রমিক রয়েছে করোনা আতঙ্কে। সিমেন্ট কারখানাটিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন প্রবেশ করছে শতাধিক ট্রাক। সিমেন্ট বোঝাই করে এসব ট্রাক যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন শহরে। এসব ট্রাকের ড্রাইভার, হেলপার কারখানায় প্রবেশের ফলে খুব সহজেই তাঁদের থেকে শ্রমিকরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে চরম উৎকন্ঠায় দিন যাচ্ছে কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের। দেশে করোনাভাইরাস ছড়ানোর একটা অন্যতম বড় স্থান এখন নারায়ণগঞ্জ। যা সরকারীভাবেও বলা হয়েছে। সেখানে সাতঘোড়া সিমেন্ট ফ্যাক্টরী এখনো চলছে কিভাবে? কেনো প্রশাসন এটাকে বন্ধ করছে না? এমন প্রশ্ন এলাকাবাসী ও ফ্যাক্টরীতে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, আমরা ইচ্ছে করলে এই ফ্যাক্টরী বন্ধ করে দিতে পারি। কারণ করোনার ভয়াবহতা থেকে আমাদের বাঁচতে হলে বা নিরাপদে থাকতে হলে এর বিকল্প নাই। কিন্তু প্রশাসন মালিক পক্ষের হয়ে তখন আমাদের নানা ঝামেলায় ফেলবে।
কারখানার এক শ্রমিক বলেন, আমরা দ্রুত ছুটি চাই এবং ছুটি থাকাকালীন সময়ে রেশনিং চাই। কোম্পানী ডিরেক্টর শত শত কর্মচারীকে চাকরি থেকে বাদ দিবেন বলে হুমকির মুখে ফ্যাক্টরি চালু রেখেছেন।
তারা করোনা ভাইরাস এর জন্য কারখানাটি বন্ধ করার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা আরো জানান, নারায়ণগঞ্জ যদি লক ডাউন হতে পারে সারা বাংলাদেশের কর্মসংস্থান যদি বন্ধ হতে পারে সাতঘোড়া সিমেন্ট ফ্যাক্টরী বন্ধ হবে না কেন? আমরা কি নিরাপত্তায় যেতে পারবো না? আমাদের কি জীবনের দাম নাই?
এদিকে রোববার (১২ এপ্রিল) সকালে সরোজমিনে কারখানার সামনে গিয়ে দেখা গেছে, ফ্যাক্টরীতে শ্রমিক-কর্মচারীদের সমাগম। প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় ১০-১২ টি করে গাড়ী দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রবেশ করছে আর বের হচ্ছে। যার ফলে করোনা ভাইরাস যদি করোর মধ্যে সক্রামিত হয় তাহলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আরও ঝুঁকির মধ্যে আসবে।
ওদিকে এলাকাবাসী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, সাতঘোড়া সিমেন্ট ফ্যাক্টরি থেকে প্রতিদিন নির্গত হয় ক্লিংকারের গুঁড়া, চুনাপাথর, ফ্লাই অ্যাশ, মাটিতে থাকা ধূলিকণা ও পারদ মিশে যাচ্ছে বায়ুতে। ফলে মারাত্মক দূষণ ঘটাচ্ছে পরিবেশের। তা আমরা মেনে নিয়েছি। সে রকম প্রতিবাদ কখনও করিনি। এলাকাবাসী কিছু বললে মামলা দেয়। তাই কেউ সাহস করে প্রতিবাদ করে না। কিন্তু এ প্রানঘাতী করোনা ভাইরাসের মধ্যেও তারা এলাকাবাসীকে জিম্মি করে সিমেন্ট ফ্যাক্টরিটি খোলা রেখেছে, এটা আমাদেরকে হতবাক করেছে। আমরা কি মানুষ না? আমাদের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? নাকি বড়লোক কারখানা মালিকরা বেঁচে থাকবে আর সাধারই মানুষ মরবে। কিভাবে একটি জেলায় লকডাউন থাকার পরেও প্রশাসনের চোখের সামনে একটি সিমেন্ট কারখানা চলতে পারে সে প্রশ্ন রেখেছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ফ্যাক্টরীর দায়িত্বশীল কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম