২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৯:৫৫, ২ অক্টোবর ২০২২

আপডেট: ২০:০৫, ২ অক্টোবর ২০২২

নারায়ণগঞ্জে দুর্গোৎসবে জমকালো আয়োজন

নারায়ণগঞ্জে দুর্গোৎসবে জমকালো আয়োজন

সৌরভ হোসেন সিয়াম (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে হয়েছে দেবীবোধন। মন্ডপগুলোতে বাজছে ঢাক আর উলুধ্বনি। জমকালো আলোকসজ্জা আর তোরণে শহরজুড়ে দুর্গোৎসবের আমেজ। প্রতিটি মন্ডপে প্রতিমা থেকে শুরু করে সজ্জার মধ্যেও রয়েছে ভিন্নতা। বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে মন্ডপে রাখা হয়েছে বিশেষ আয়োজন। করোনার কারণে গত দুইবছর উৎসবে ভাটা পড়লেও এবার তার কোন কমতি রাখছেন না আয়োজকরা। মন্ডপগুলোতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ২১৮টি পূজামন্ডপে এবার পূজার আয়োজন করা হয়েছে। শহরেই রয়েছে প্রায় অর্ধশত পূজামন্ডপ।

শনিবার দুপুরে শহরের নিতাইগঞ্জের শ্রী শ্রী বলদেব জিউর আখড়া ও শিব মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে প্রতিমা অলঙ্করন ও স্থাপন শেষ হলেও বাইরে চলছিল আলোকসজ্জার কাজ। মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রবাস সাহা বলেন, ১৫০ বছরের পুরোনো এই মন্দিরে প্রতিবছরই দুর্গাপূজার জমকালো আয়োজন করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নেই। মন্দিরে অঞ্জলি দেওয়ার পর প্রতিদিনই প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাইরে সেলফি বুথ ও বিনামূল্যে চা, কফি ও পানি বিতরণের ব্যবস্থা আছে। দর্শনার্থীরা যাতে সুন্দরভাবে উৎসবের আমেজ গ্রহণ করতে পারে সেজন্য এই আয়োজন।

মন্দিরের পুরোহিত অজয় চক্রবর্তী বলেন, এবার দেবী দুর্গা গজে (হাতি) চড়ে মর্ত্যে এসেছেন। মহালয়ায় দেবীর আগমন হয়েছে। বিজয়া দশমিতে তিনি আবার নৌকাতে চড়ে স্বর্গে প্রত্যাবর্তন করবেন। মাঝের কয়দিন প্রতিদিনই নানা ধরনের পূজা-অর্চনা বিভিন্ন মন্দির ও দুর্গামন্ডপে চলতে থাকবে।

বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে টানবাজার সার্বজনীন নতুন পূজা কমিটি তাদের মন্ডপের সজ্জায় রেখেছেন ব্যতিক্রমী ছোঁয়া। মন্ডপের চারপাশের সজ্জায় ঐতিহ্যবাহী পাটের সাথে বাঁশ ও মাটির প্রদীপ ব্যবহার করা হয়েছে। মাথার উপরে সিলিং সাজানো হয়েছে কাগজের তৈরি বাহারি রঙের ফুলে। বিশালাকার মহিষাসুরের সজ্জায়ও ছিল পাটের ব্যবহার।

মন্ডপের কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্বে থাকা তরুণ দুর্জয় সাহা বলেন, সাধারণত সজ্জার জন্য ককশিটের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে পরিবেশের কথা বিবেচনা করে যথাসম্ভব ককশিটের ব্যবহার এড়ানো হয়েছে। পরিবর্তে শুকনা পাট, পাটের চট, বাঁশ, আইসক্রিমের কাঠি, কাগজের ফুল, মাটির প্রদীপ ব্যবহার করা হয়েছে। গত কয়েকবছর যাবৎ তারা মন্ডপের সজ্জায় ভিন্নতা রাখছেন। সুতা ব্যবসার জন্য প্রসিদ্ধ টানবাজারের এই মন্ডপের সজ্জায় গতবছর ব্যবহার করা হয়েছিল বিভিন্ন রঙের সুতা। যা সকলের নজর কেড়েছিল বলে জানান তিনি।

“২০১৮ সাল থেকে ককশিটের ব্যবহার বাদ দেওয়া হয়েছে। সেবার বাঁশ ও পেইন্টিং করা হয়েছিল। পরেরবার মাটির কাজ করা হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনার কারণে কেবল সাত্ত্বিক পূজার মধ্য দিয়ে সব গেছে। তবে গতবছরও টানবাজারের ঐতিহ্য সুতা দিয়ে সাজানো হয়েছিল এই মন্ডপ। এবার পাট ও বাঁশের ব্যবহার হয়েছে বেশি।”

বাহারি প্রতিমা আর সজ্জাই নয় মন্ডপগুলোতে আছে ‘নাটিকা’ প্রদর্শনের ব্যবস্থাও। বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে নিতাইগঞ্জ সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপে পুতুলনাচের আয়োজন রাখা হয়েছে। আয়োজক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিমাদ্রী সাহা বলেন, “বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে পুতুলনাচ। এই সংস্কৃতিকে ধরে রাখতেই মন্ডপে পুতুলনাচের প্রদর্শনী রাখা হয়েছে। এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে সামাজিক বার্তা প্রদান ইতিবাচক করা হবে।”

দুইবছর করোনার কারণে দুর্গোৎসবে ভাটা পড়লেও এবার মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখতে পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন শ্রী শ্রী বঙ্কবিহারী জিউর আখড়া ও হনুমান জিউর মন্দির কমিটির যুগ্ম সম্পাদক তাপস রুদ্র। তাদের মন্দিরে এবার ৮১তম দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। ‘বৃন্দাবনের রাসলীলা’ শিরোনামে তাপস রুদ্রের নির্দেশনায় ছয় মিনিট দৈর্ঘ্যরে পুতুল নাচের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলেও জানান।

তিনি বলেন, “মহালয়ায় দেবীর মর্ত্যে আগমন হলেও উৎসবের আমেজ শুরু হয় দেবীবোধনের মধ্য দিয়ে অর্থ্যাৎ ষষ্ঠী থেকে। করোনার দুইবছর পর এবার মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস আছে। আমরাও সেভাবে ব্যবস্থা রেখেছি। প্রতিবছরই চেষ্টা করি উন্নত ব্যবস্থা রাখার।”

ষষ্ঠীর সন্ধ্যাতেই শহরের বেশ কয়েকটি মন্ডপ ঘোরা হয়ে গেছে বলে জানান মাস্টার্সপড়–য়া তরুণ সুমন দাস। তিনি বলেন, “প্রতিবছরই শহরের সবগুলো মন্ডপ ঘুরি। করোনার কারণে দুইবছর তো তেমন আমেজ ছিল না। আবারও মন্ডপগুলোতে প্রাণ ফিরেছে। এইটা দেখে ভালো লাগছে। আশা করি, সকলের মাঝে এই উৎসব ছড়িয়ে পড়ুক।”

তবে প্রতিটি মন্ডপের সামনেই নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সদস্য ও আনসার-ভিডিপির সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। পূজার আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকেও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও স্বেচ্ছাসেবক রাখা হয়েছে। বিকেলে মন্ডপগুলোতে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের টহলও দেখা গেছে।

তবে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার বলেন, “আসলে নারায়ণগঞ্জে আলাদা করে নিরাপত্তার প্রয়োজন হয় না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই শহরে আমরা হিন্দু-মুসলমান একত্রে উৎসব উদযাপন করি। তারপরও শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার প্রশাসনিকভাবে একাধিক সভা হয়েছে। খবর নিয়েছি, প্রতিটি মন্ডপেই পুলিশ ও আনসার সদস্য আছেন। আমরা কোন ধরনের গোলযোগের শঙ্কা আপাতত করছি না।”

নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো জেলায় পূজামন্ডপগুলোতে ৮শ’ পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে জানিয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু বলেন, “স্থানীয়ভাবে প্রতিটি মন্ডপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা তৎপরতাও রয়েছে।”

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়