১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ২৭ অক্টোবর ২০২০

আপডেট: ২০:৫২, ২৭ অক্টোবর ২০২০

নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিক হত্যার আসামিরা অধরা, স্বজনদের ক্ষোভ

নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিক হত্যার আসামিরা অধরা, স্বজনদের ক্ষোভ
নিহত সাংবাদিক ইলিয়াস, আসামি তুর্জয় ও মাসুদ

সৌরভ হোসেন সিয়াম (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): নারায়ণগঞ্জের বন্দরে স্থানীয় সাংবাদিক ইলিয়াস শেখকে প্রকাশ্যে রাস্তার উপর কুপিয়ে হত্যার ১৬ দিন পেরিয়েছে। তবে হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৫ আসামিকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্বজন, সহকর্মী ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে। তবে পুলিশ বলছে, আসামিদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।

হত্যা মামলার এজাহার ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ১১ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের জিওধারা বাজার থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন সাংবাদিক ইলিয়াস। জিওধারা চৌরাস্তা এলাকায় তার পথরোধ করে ধারালো ছুরি দিয়ে বেশ কয়েকটি আঘাত করে আসামিরা। গুরুতর জখম ইলিয়াস লুটিয়ে পড়েন সড়কের উপর। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. গোলাম মোস্তফা ইমন তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. আসাদুজ্জামান জানান, হাসপাতালে তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা তার।

এই ঘটনায় নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী জুলেখা বেগম বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। তারা হলেন, বন্দরের আদমপুর এলাকার মৃত জামানের ছেলে তুষার (২৮), জিওধারা এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মিছির আলী (৫৩) ও মিনা (৬০)। হত্যার রাতে ঘটনাস্থল থেকে তুষারকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এদিকে স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অন্য দুই আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই মামলা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে প্রধান আসামি তুষারের সহোদর হাসনাত আহমেদ তুর্জয় (২৪), জিওধারা এলাকার মৃত নুরুল মিয়ার ছেলে মাসুদ (৩৬), আদমপুর এলাকার আব্দুল বাতেনের ছেলে সাগর (২৬), একই এলাকার মৃত ফালানের ছেলে পাভেল (২৫) ও জিওধারা এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে হজরত আলী (৫০)।

ইলিয়াসের পরিবারের লোকজন জানান, সাংবাদিক ইলিয়াস শেখ নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক বিজয়ের প্রতিবেদক ছিলেন। আসামিদের মাদক ব্যবসা ও অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানের সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি জানতেন ইলিয়াস। এ নিয়ে পত্রিকায় লেখার জন্য তথ্য সংগ্রহ করছিলেন তিনি। এর জের ধরেই ইলিয়াসকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ পরিবারের।

মামলার আসামিরা গ্রেফতার না হওয়াতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত ইলিয়াসের স্ত্রী জুলেখা বেগম। তিনি প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, প্রকাশ্যে তার স্বামীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। মূল আসামিকে স্থানীয় লোকজনই ধরে পুলিশের কাছে দিয়েছে। অন্য দুইজনকেও তাদের সহযোগিতায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ জুলেখার।

তিনি বলেন, ‘পুলিশ সহযোগিতা করছে না। তারা সহযোগিতা করলে আসামিরা এভাবে পালিয়ে থাকতে পারতো না। ২৪ ঘন্টার মধ্যেই গ্রেফতার হতো।’ জুলেখা বলেন, এর আগেও কয়েক দফায় মামলার পলাতক আসামি মাসুদ তার স্বামীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। হত্যার ঘটনার ১৫ দিন আগেও মাসুদ তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে সাংবাদিক ইলিয়াসকে শাসায়। মাদক ব্যবসা, জুয়া পরিচালনাসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত মাসুদ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয়ে সে এসব কার্যক্রম করে বেড়ায়। এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ যাতে না করা হয় সেজন্য ইলিয়াসকে শাসানো হয় দাবি তার স্ত্রীর। দুই সন্তানের জননী জুলেখা বলেন, ‘স্বামী হারিয়ে কষ্টে দিনানিপাত করছি। কিন্তু সেসব নিয়ে চিন্তা নাই। আমি চাই হত্যাকারীদের কঠোর সাজা হোক।’

সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে শহর ও বন্দরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেসব মানববন্ধনে সকল আসামিদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্নের দাবি জানান বক্তারা। একই দাবি জানিয়ে বন্দর প্রেসক্লাবের সভাপতি কমল খান প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, এই পর্যন্ত পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেফতার করেনি। তিন আসামিকে ঘটনার রাতেই এলাকাবাসী ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের কোনো তৎপরতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন কমল খান। তিনি বলেন, ‘আসামিদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি শোনা যাচ্ছে। হয়তো সে কারণেই পুলিশ তাদের গ্রেফতারে তৎপর কম।’ হত্যা মামলাটি সিআইডি, পিবিআই কিংবা অন্য কোনো তদন্তকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তরের দাবি জানান তিনি।

এদিকে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফখরুদ্দীন ভূইয়া প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, মামলার প্রধান আসামিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রক্তমাখা ছুরিসহ গ্রেফতার প্রধান আসামির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও রেকর্ড করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। আসামিদের গ্রেফতারে রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো প্রভাবের অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে নাকচ করেন ওসি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়