১৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ২২:০০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

নারায়ণগঞ্জে ১৬ ইউপি নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু

নারায়ণগঞ্জে ১৬ ইউপি নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর ও রূপগঞ্জ উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তারিখ আগামী ১১ নভেম্বর ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পরপরই নড়েচড়ে বসেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য পদ প্রার্থীরা। বিএনপির পক্ষ থেকে এখনও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা না আসলেও দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাপ শুরু করে দিয়েছেন সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতারা। এলাকায় এলাকায় সাঁটানো হচ্ছে পোস্টার-ব্যানার।

সদর উপজেলা: এই উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ছয়টিতে আগামী ১১ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ বাদে কাশীপুর, বক্তাবলী, এনায়েতনগর, গোগনগর, আলীরটেক, কুতুবপুর ইউপিতে নির্বাচনী কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। এসব ইউনিয়নে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এম সাইফউল্লাহ বাদল। তিনি ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের একনিষ্ঠ অনুসারী। দলীয় সূত্রমতে, এবারও তিনি প্রার্থীতা করতে ইচ্ছুক। এজন্য তিনি নেতা শামীম ওসমানের কাছে তদবির শুরু করে দিয়েছেন। এই ইউপিতে এবার নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক সাবেক চেয়ারম্যান মোমেন শিকদার। তিনি ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। গতবার দলীয়ভাবে তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করা হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন সাইফউল্লাহ বাদল। তবে এবার ফাঁকা মাঠ দিতে নারাজ মোমেন শিকদার। তবে প্রভাবশালী সাইফউল্লাহ বাদলের বিপরীতে প্রার্থী হবার ইচ্ছা পোষণ করায় এখনই অনেকটা কোনঠাসা মোমেন শিকদার।

বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদেও প্রার্থীতা করতে চান বর্তমান চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী। তিনিও সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন। বক্তাবলী ইউপিতে তার প্রভাবের কারণে এখন পর্যন্ত কেউ প্রতিদ্বন্দ্বীতার কথা মুখ ফুটে বলছেন না। তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের একাধিক নেতাই চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। দলীয় মনোনয়ন পেতে আড়ালে তদবির চালাচ্ছেন তারা।

এনায়েতনগর ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান। এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লিটনও। গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নওশেদ আলী মারা যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইউপি সদস্য নূর হোসেন সওদাগর। এই নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে লড়বেন। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন ও নব্য আওয়ামী লীগার ব্যবসায়ী ফজর আলীও রয়েছেন। তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই তারা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। আলীরটেক ইউপিতেও এখন পর্যন্ত তিনজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও সায়েম আহমেদ। তিনজনই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিএনপি নেতা হলেও গতবার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন মনিরুল আলম সেন্টু। তিনি ওই নির্বাচনে জিতেও যান। দলীয়ভাবে বিএনপি এখনও কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেও এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হবার সম্ভবনা রয়েছে মনিরুল আলম সেন্টুর। তবে সরকারি দলের সাথে তার সখ্যতার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নও পেতে পারেন বলে মনে করেন অনেকে। তবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী শাহ্ আলম গাজী টেনু। যিনি টেনু গাজী নামেই অধিক পরিচিত।

বন্দর উপজেলা: বন্দর উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন বন্দর, মুছাপুর, মদনপুর, ধামগড় ও কলাগাছিয়া ইউনিয়নের প্রতিটিতেই একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান রয়েছেন জাতীয় পার্টির এহসান উদ্দিন আহম্মেদ। এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এড. জাহাঙ্গীর আলম ও আওয়ামী লীগ নেতা নূরুজ্জামান। গতবার মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মাকসুদ চেয়ারম্যান। এবারও নির্বাচনে অংশ নেবেন তিনি। তার প্রতি স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানেরও সমর্থন রয়েছে। তবে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল কাদির ডিলার রয়েছেন। তারা দলীয় মনোনয়ন পেতে তদবির শুরু করেছেন। আব্দুল কাদির ডিলার গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন।

মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ সালাম। তিনি বন্দর থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। এই নির্বাচনেও দলীয় সমর্থন প্রত্যাশা করছেন তিনি। তবে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় শ্রমিক নেতা শেখ রুহুল আমিনও। ধামগড়েও বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদের বিপরীতে রয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান আয়নাল হকের ছেলে আজিজুল হক। দু’জনই এবার নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। কলাগাছিয়ায় জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের বিপরীতে প্রার্থী হচ্ছেন বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন।

রূপগঞ্জ উপজেলা: দ্বিতীয় ধাপে রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া, ভোলাব, গোলাকান্দাইল, মুড়াপাড়া ও ভুলতা; এই পাঁচ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কায়েতপাড়া এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বর্তমান চেয়ারম্যান রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। তবে তার পরিবর্তে তার ভাই মিজানুর রহমান ইউপি চেয়ারম্যান হতে চান। ভাইয়ের জন্য দলীয় মনোনয়ন আনতে তদবির চালাচ্ছেন রফিকুল ইসলাম। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জায়েদ আলীও। ভোলাব ইউপি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে এখন পর্যন্ত চারজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক হাসান আশকারী এবং আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. তাইবুর রহমান। গোলাকান্দাইলের বর্তমান চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন ভূঁইয়া। এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য কামরুল হাসান তুহিন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য নাহিন ভূইয়া।

মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ আলমাছ এই নির্বাচনেও অংশ নেবেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে মুড়াপাড়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি মনির হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জব্বার, সাবেক চেয়ারম্যান বরকত হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ ভূইয়া মাসুমের কথা শোনা যাচ্ছে। ভুলতায় প্রার্থীতার তালিকায় রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফুল হক ভূঁইয়া, তার ভাবী ও সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম হারুনুর রশীদ ভূঁইয়ার স্ত্রী শামীম সুলতানা ঝিনু।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের ১৬ ইউপি’র মধ্যে কেবল মুড়াপাড়া ও কায়েতপাড়া ইউনিয়নে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৭ অক্টোবর। এছাড়া মনোনয়নপত্র বাছাই ২০ অক্টোবর, বাছাইয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর, আপিল নিষ্পত্তি ২৪ ও ২৫ অক্টোবর, প্রার্থীতা প্রত্যাহার ২৬ অক্টোবর, প্রতীক বরাদ্দ ২৭ অক্টোবর ও ১১ নভেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে আগামী ২ অক্টোবর থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন ফরম বিক্রি চলবে আগামী ৬ অক্টোবর পর্যন্ত। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে হবে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়