২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২২:০৬, ৩ এপ্রিল ২০২১

আপডেট: ১৫:২৪, ৪ এপ্রিল ২০২১

নারীসহ রিসোর্টে মামুনুল হক, হেনস্থার প্রতিবাদে ভাঙচুর-সড়ক অবরোধ

নারীসহ রিসোর্টে মামুনুল হক, হেনস্থার প্রতিবাদে ভাঙচুর-সড়ক অবরোধ

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে এক নারীসহ অবরুদ্ধ হন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়, যুবলীগ নেতার রেস্তোরাঁসহ রিসোর্টটিতেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত হেফাজতের কয়েকশ’ কর্মী-সমর্থক। পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান মামুনুল হককে। রিসোর্টে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ইউএনও, এসিল্যান্ড, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আরও কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেয় হেফাজতের কয়েকশ’ কর্মী-সমর্থক। সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সংবাদকর্মীদের ধাওয়া দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

শনিবার (৩ এপ্রিল) রাত দশটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সোনারগাঁয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ছুড়েছে পুলিশ।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী, রিসোর্টের কর্মকর্তা ও হেফাজতের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অবকাশ যাপনের জন্য দুপুরে সোনারগাঁয়ে আসেন মামুনুল হক। তার সাথে থাকা নারীকে মামুনুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করা হচ্ছে। সোনারগাঁয়ের জাদুঘরে ঘোরাঘুরি পর রয়েল রিসোর্টের পঞ্চম তলার ৫০১ নম্বর কক্ষটি ভাড়া করেন। এদিকে মামনুল হক এক নারীকে নিয়ে রয়েল রিসোর্টে অবস্থান করছেন এমন খবর পেয়ে সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সোহাগ রনিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ স্থানীয় এলাকাবাসী সেখানে যায়। পরে মাওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে রাখে তারা। তাকে লাঞ্চিত করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হেফাজতে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হক দু’টি বিবাহ করেছেন। তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গতকাল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে এসেছিলেন। পরে স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাকে অবরুদ্ধ করে লাঞ্চিত করে। স্থানীয়দের সাথে ধস্তাধস্তিতে মামুনুল হকের পরনে থাকা জামাটিও ছিড়ে গেছে বলে জানান এই হেফাজত নেতা।

এদিকে এক ভিডিওতে আটক মামুনুল হককে বলতে শোনা যায়, তার সাথে থাকা নারীর নাম আমিনা তাইয়্যেবা। ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। তিনি খুলনাতে বিয়ে করেছেন। তার শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম বলে জানান মামুনুল হক। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বক্তব্য পরিষ্কার, আমরা এখানে একটু রিফ্রেশমেন্টের জন্য এসেছিলাম।...এখানে অনেক উচ্ছৃঙ্খল লোক এসেছে। মাস্তান প্রকৃতির লোকেরা এসে আমাকে আমার ওয়াইফসহ নাজেহাল করেছে। আমাকে আক্রমণ করেছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, রয়েল রিসোর্টের একটি কক্ষে মামুনুল হক নারীসহ অবস্থান করছেন এমন খবরে স্থানীয় লোকজন রিসোর্ট ঘেরাও করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। মামুনুল হক পুলিশকে জানিয়েছেন, সঙ্গে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। পরে পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিয়ে কক্ষের ভেতরেই জ্ঞিাসাবাদ করে।

এদিকে নেতার অবরুদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে হেফাজতে ইসলামের কয়েকশ’ কর্মী-সমর্থক রয়েল রিসোর্টের সামনে এসে জড়ো হন। ঘটনাস্থলে যান জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টিএম মোশারফ, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম মোস্তফাসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাররাও। সন্ধ্যার পর রিসোর্টের মূল গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হেফাজতের কয়েকশ’ কর্মী-সমর্থক। তারা পুলিশের হেফাজত থেকে মাওলানা মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় সমর্থকদের সঙ্গে মিছিল সহকারে মোগড়াপাড়ার দিকে যান মামুনুল হক। পরে স্থানীয় একটি ঈদগাহ ময়দানে বক্তব্য রাখেন তিনি। মামুনুল হক বলেন, ‘আপনাদের ভালোবাসার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। সাংবাদিক ও পুলিশ আমার সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করেনি। কিছু বাইরের লোক খারাপ আচরণ করেছে। লাগাতার কাজের চাপের কারণে আমার একটু রিফ্রেশমেন্ট দরকার ছিল। এ জন্য আমি আমার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছিলাম।’

এদিকে হেফাজতের কর্মী-সমর্থকরা রিসোর্টের ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। আগুন দেওয়ার চেষ্টা চলে সেখানে। রিসোর্টের চারদিক ঘেরাও করে ফেললে ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ইউএনও, এসিল্যান্ডসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। তাদের উপরও হামলা চালানোর খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে ছিলেন হেফাজতে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানসহ জেলার অন্যান্য নেতারা।

রাত আটটার দিকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে কোনোমতে বেরিয়ে আসেন প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পৌনে নয়টার দিকে ইউএনও আতিকুল ইসলাম প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘পুলিশি হেফাজত থেকে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিক্ষুব্দ কর্মী-সমর্থকরা আক্রমন করেছে। আমাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। কোনোমতে আমরা বেরিয়ে এসেছি।’

সন্ধ্যায়ই মোগরাপাড়া চৌরাস্তা বড় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন খানের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নেমে আসে। রাতে সড়কে টায়ার ফেলে তাতে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে। ভাঙচুর চালানো হয়েছে যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম নান্নুর রেস্তোরাঁ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ আরও কয়েকটি দোকানে। সংবাদ সংগ্রহের জন্য গেলে সংবাদকর্মীদেরও ধাওয়া দিয়েছে হেফাজতের উত্তেজিত কর্মী-সমর্থকরা। অরক্ষিত হয়ে পড়েছে উপজেলা পরিষদ ও থানা এলাকা। হামলা এড়াতে উপজেলা পরিষদ ও থানা ঘেরাও করে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সর্বশেষ দশটার দিকেও সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা, উদ্ভবগঞ্জ, দীঘিরপাড় এলাকায় লাঠি হাতে মিছিল করতে দেখা গেছে হেফাজতের কর্মীদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে ফাঁকা গুলি ছুড়তে দেখা গেছে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়