২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ১৮ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ২২:১১, ১৮ জানুয়ারি ২০২২

নাসিকে প্রভাব কমেছে ওসমান পরিবারের

নাসিকে প্রভাব কমেছে ওসমান পরিবারের

সৌরভ হোসেন সিয়াম (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে এইবার ওসমান পরিবারের সমর্থন পাওয়া ১০ জন কাউন্সিলর প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। গতবার নাসিকে ১৩ জন কাউন্সিলর ছিলেন ওসমান পরিবারের অনুসারী। এইবার সেই সংখ্যা কমেছে। সে অনুযায়ী বলা যায়, নাসিকে এইবার ওসমান পরিবারের প্রভাব কমেছে।

যদিও এই নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতেই ওসমান পরিবারের অনুসারী প্রার্থী ছিল। কয়েকটি ওয়ার্ডে তাদের একাধিক প্রার্থীও ছিল। এইসব কাউন্সিলর প্রার্থীদের সরাসরি সমর্থন না দিলেও ওসমান পরিবারের দুই সাংসদ শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের আশীর্বাদ ছিল তাদের উপর। এমনকি শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান (অয়ন) এবং প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানেরও সমর্থিত প্রার্থী ছিল। শামীম ওসমানের স্ত্রী নারায়ণগঞ্জ মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপিরও প্রার্থী ছিল এই নির্বাচনে। অভিযোগ রয়েছে, নাসিক নির্বাচনে একাধিক মামলার আসামিও ওসমান পরিবারের সমর্থন পেয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ওসমান পরিবারের ১১ জন সাধারণ কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন ও রাজনৈতিক সূত্রে জানা যায়, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী হয়েছেন শামীম ওসমানের অনুসারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহজালাল বাদল। আলোচিত সাতখুন মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের ভাতিজা বাদল। ৬ নম্বর ওয়ার্ডেও শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান বিজয়ী হয়েছেন। যদিও এই ওয়ার্ডে পরাজিত প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মন্ডলও শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত। ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ যথাক্রমে ই¯্রাফিল প্রধান ও ইফতেখার আলম খোকন বিজয়ী হয়েছেন। ইস্রাফিল প্রধান এক সময় বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে শামীম ওসমানের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত হাশেম শকু বিজয়ী হয়েছেন। তিনি জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত কিসমত হাশেমের ভাই। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছেন মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। অভিযোগ রয়েছে, খোরশেদের ভাই তৈমুর আলম খন্দকারকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করানোর পেছনে কাজ করেছে ওসমান পরিবার। এই নির্বাচনে তৈমুর আলম ও খোরশেদকে সমর্থন দিয়েছিল এই পরিবার। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীও অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, তৈমুর আলম খন্দকারকে দাঁড় করিয়েছেন শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান। খোরশেদের বিজয়ের পথ সহজ করে দিতে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রবিউল হোসেনকে বসিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই কারণে রবিউলকে দল থেকে অব্যাহতিও দেয় আওয়ামী লীগ।

১৭ নম্বর ওয়ার্ডে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুল করিম বাবু। তিনি শামীম ওসমানের অতিঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ১৮ নম্বরেও বিজয়ী শ্রমিক লীগ নেতা কামরুল হাসান মুন্না সাংসদের অনুসারী। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে আজমেরী ওসমানের আত্মীয় মোখলেছুর রহমান চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন। ২৪ নম্বরে সেলিম ওসমানের পছন্দের প্রার্থী জাতীয় পার্টির নেতা আফজাল হোসেন জয় পেয়েছেন।

ওসমান পরিবারের সমর্থনেও হেরেছেন যারা
১ নম্বর ওয়ার্ডে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমানের ছেলে মাহমুদুর রহমান হেরেছেন। ২ নম্বর ওয়ার্ডেও হেরেছেন ওসমান পরিবারের পছন্দের প্রার্থী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক ভূঁইয়া। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে শামীম ওসমানের অনুসারী ও সাবেক কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসান পরাজিত হয়েছেন। এই ওয়ার্ডে জিতেছেন সাতখুন মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের ছোট ভাই বিএনপি নেতা নূর উদ্দিন। নূর হোসেন এক সময় শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন।

৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সাবেক সাংসদপুত্র গোলাম মুহাম্মদ সাদরিলের কাছে পরাজিত হয়েছেন ওসমান পরিবারের সমর্থন পাওয়া আনিসুর রহমান। তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান (অয়ন)। ৭ নম্বর ওয়ার্ডেও তার ঘনিষ্ঠ মো. সালাউদ্দিন পরাজিত হয়েছেন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে শামীম ওসমানের অনুসারী মহসিন ভূঁইয়া হেরেছেন। ১১, ১৪, ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ওসমান পরিবারের অনুসারী যথাক্রমে সাইফুল হাসান, শফিউদ্দিন প্রধান, জি এম আরমান ও কবির হোসেন পরাজিত হয়েছেন। ২০ নম্বরে সহিদুল হাসান মৃধা, ২১ নম্বরে আজিজুল হক সাংসদ সেলিম ওসমানের সমর্থন পেয়েও হেরেছেন। ২২ নম্বরে যুবলীগ নেতা মাসুদ খান পেয়েছিলেন শামীম ওসমানের সমর্থন অন্যদিকে ইসরাত জাহান স্মৃতি পেয়েছিলেন তার স্ত্রী সালমা ওসমান লিপির সমর্থন। দু’জনেই হেরেছেন। এই ওয়ার্ডে জিতেছেন সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি সমর্থক সুলতান আহমেদ ভূঁইয়া।

২৩ নম্বরে হেরেছেন সাবেক কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন। ২৫ নম্বরে সাইদুর রহমান লিটন ও ২৬ নম্বরে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশীদের ভাই আনোয়ার হোসেন শামীম ওসমানের সমর্থন পেয়েও পরাজিত হয়েছেন। ২৭ নম্বরে সেলিম ওসমানের অনুসারী ফারুক ও শামীম ওসমানের অনুসারী আলমগীর মিয়া দু’জনেই পরাজিত হয়েছেন। জিতেছেন সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম।

এছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদেও ওসমান পরিবারের সমর্থিত প্রার্থী ছিল। তাদের মধ্যে যুব মহিলা লীগ নেত্রী শারমিন শাকিল মেঘলা ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পরাজিত হয়েছেন। ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডেও সানজিদা আহমেদ জুয়েলীর প্রতি ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের সমর্থন ছিল। তিনিও হেরেছেন। তবে ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শারমিন হাবিব বিন্নি ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তিনি গতবারও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়