২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ১৩ নভেম্বর ২০২১

আপডেট: ২১:৫৫, ১৩ নভেম্বর ২০২১

নির্বাচনী বিতর্কে শামীম ওসমান

নির্বাচনী বিতর্কে শামীম ওসমান

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান। তিনি সারাদেশে বহুল আলোচিত ও সমালোচিত। নানা সময়ে তিনি তার কাজ কিংবা বক্তব্য দিয়ে মিডিয়ায় আলোচনায় থাকেন। আলোচনায় নির্বাচনী মাঠেও বাদ যান না তিনি। নির্বাচনের আগে আগাম নাশকতার আশঙ্খা করে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় থাকেন আবার নির্বাচনের দিনও নানান ঘটনায় তিনি সমালোচিত হন। নির্বাচনের দিন বিরোধী প্রার্থীর কর্মীকে মারধোর কিংবা ভোট দিয়ে এসে তা প্রকাশ্যে প্রদর্শন করে সমালোচিত হয়েছিলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথেও বাদানুবাদে জড়িয়েছেন সরকারদলীয় এই সাংসদ। দুইবার নির্বাচনী এই বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। একবার ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে উপনির্বাচনের সময় এক সহকারী পুলিশ সুপারকে হুমকি দিয়ে বিতর্কে জড়ান। ওই নির্বাচনে তার মেজো ভাই সাংসদ সেলিম ওসমান প্রার্থী হয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার অতি সম্প্রতি, গত ১১ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে এক র‌্যাব কর্মকর্তার সাথে বাদানুবাদে জড়ান সাংসদ শামীম ওসমান। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। পূর্বের ঘটনাতেও গণমাধ্যমে এএসপির দেওয়া বক্তব্য ফেসবুক ও ইউটিউবে ভাইরাল হয়।

ঘটনা-১
জানা যায়, সাংসদ শামীম ওসমানের বড় ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বড়ভাই নাসিম ওসমানের মারা যাওয়ার পর ওই আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হন শামীম ওসমানেরই আরেক ভাই সেলিম ওসমান। ওই সময় শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ। ওই নির্বাচনের সময়ে নারায়ণগঞ্জে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. বশিরউদ্দীনকে মুঠোফোনে হুমকি ও গালিগালাজের অভিযোগ ওঠে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে।

পরে ঘটনার বিবরণ দিয়ে এএসপি বশির ওই সময় সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এ উপনির্বাচনে মদনপুর ইউনিয়ন ও ধামগড় ইউনিয়নের দায়িত্বে ছিলেন। বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে তিনি কেওঢালা কেন্দ্রে গেলে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ সহায়ক দলের (মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স) কর্মকর্তারা তাঁকে জানান, মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করেছেন। তিনি হুমকি দিয়েছেন, তাঁকে কেন্দ্র ছেড়ে না দিলে পুলিশ, আনসার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ মাথা নিয়ে যেতে পারবেন না।

বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) জানালে চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের নির্দশে দেন এসপি। এএসপি বশির জানান, নির্দেশ পাওয়ার পর তিনি র‌্যাব ও বিজিবির টহল দল ডেকে পাঠান এবং সালাম চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় তাঁর মুঠোফোনে একটি কল আসে। তিনি বলেন, ‘ওই প্রান্ত থেকে বলা হয়, “আমি সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলছি।” আমি বললাম, আপনি কেমন আছেন? উনি বললেন, “তুমি আমার চেয়ারম্যানকে অ্যারেস্ট করার প্রিপারেশন নিচ্ছ কেন?” আমি বলি, কেন্দ্র দখল করতে এলে আমি অ্যারেস্ট করব না? আর আপনার চেয়ারম্যান কি না, এটা তো দেখার বিষয় না।’

বশির সাংবাদিকদের বলেন, ‘...এরপর তিনি বলেন, “প্লিজ, আমি শামীম ওসমান বলছি, আমি কাউকে প্লিজ বলি না। আমি বলছি, গিভ হিম দ্য ক্লিয়ারেন্স। তুমি কেন্দ্রটা ছেড়ে দাও, তুমি তোমার মতো করে চলে যাও। সময় দ্রæত ফুরাইয়ে যাচ্ছে, চারটার মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ পারসেন্ট ভোট কাস্ট করতে হবে, তুমি কেন্দ্রটা ছেড়ে দাও এবং চলে যাও।” আমি বললাম, আমি পারব না। এখন আমার চাকরি ইলেকশন কমিশনের আন্ডারে। আমি এখানে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে এসেছি, প্রজাতন্ত্রের চাকরি করতে এসেছি।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এরপর শামীম ওসমান আবার ফোন করেন। তিনি আমাকে ফোনে লাইনে রেখে আরেক ফোনে প্রধানমন্ত্রীর পিএস-ওয়ান মালেক সাহেবের সঙ্গে কথা বললেন। ওই ফোনে তিনি বললেন, “তুমি প্রধানমন্ত্রীকে বলো, আমি রাজনীতি করব কি করব না।” তিনি এ কথা আমাকে শোনালেন ফোনে। তখন আমি বললাম, আপনি কার সঙ্গে কথা বলছেন, সেটা দেখার বিষয় না, আমি খুব ছোট অফিসার। আমি এখানে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। আমার দায়িত্বটা আমাকে পালন করতে দিন। এরপর তিনি “কুত্তার বাচ্চা, শুয়োরের বাচ্চা, বাস্টার্ড” গালি দিয়ে বলেন, “তুই কী পারবি কর। তোরে আমি দেইখা নিব।”’

শামীম ওসমানের হুমকি প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে দেওয়া এএসপির এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে বিতর্কে জড়ান সাংসদ শামীম ওসমান। যদিও ওই নির্বাচনে সাবেক সাংসদ এসএম আকরামের বিপরীতে সেলিম ওসমান বিজয়ী হন।

ঘটনা-২
গত ১১ নভেম্বর এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছিল। ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র দখলের চেষ্টা ও অরাজক পরিবেশের সৃষ্টি চেষ্টা করলে সেখানে লাঠিচার্জ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই ঘটনায় পিটুনি খান মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদসহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এই ঘটনায় কেন্দ্রে আসেন সাংসদ শামীম ওসমান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জের ঘটনায় বিকেল সোয়া ৩টায় কেন্দ্রে যান শামীম ওসমান। তাকে অভিযোগ করে ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ বলেন, ‘আমাদের কুত্তার (কুকুর) মতো পিটিয়েছে।’ তখন শামীম ওসমান উপস্থিত র‌্যাব কর্মকর্তাদের অভিযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন।

জবাবে সিদ্ধিরগঞ্জের র‌্যাব-১১ এর স্কোয়াড্রন লিডার এ কে এম মনিরুল আলম বলেন, ‘ওদেরকে মারি নাই স্যার। ওরা দেখেন এসব জিনিসপত্র নিয়ে (ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোটা দেখানো হয়) আসছে। ওখানে ককটেল আছে। তারা এখানেই ছিল। আপনি সবাইকে জিজ্ঞাসা করেন।’

জবাবে শামীম ওসমান বলেন, ‘এখন নারায়ণগঞ্জ আপনি সামাল দেন। দেখি আপনি পারেন কিনা আর আমি পারি কিনা। আপনি ছাত্রলীগের জয়েন্ট সেক্রেটারিকে চোরের মতো মারবেন?’ র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি সর্বদা চেষ্টা করব। ব্যাপারটা ওইরকম নয় স্যার। চোরের মতো পিটানো হয় নাই স্যার। তাদের প্রতিহত করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে আসায়।’

র‌্যাব কর্মকর্তার সাথে শামীম ওসমানের বাদানুবাদের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন এই সাংসদ। যদিও ১৩ নভেম্বর রাইফেল ক্লাবে সাংসদ শামীম ওসমান দাবি করেছেন, তিনি ওই ইউনিয়নে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। এবং সেখানে নাটক সাজানো হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমি এনায়েতনগর ইউনিয়নের ভোটার। আমি ওই এলাকায় ভোট দিতে যাবো। আমি কবরস্থান পার করে পুলিশ লাইন পর্যন্ত গিয়েছি, তখন শুনলাম, যে র‌্যাবের একটি বাহিনী মাসদাইরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েছেন। কোনো গন্ডগোল নাই, কোনো ঝামেলা নাই, নির্বাচন তখন শেষ পর্যায়ে। তখন আমি দেখলাম কিছু অনিবন্ধিত পত্রিকার গাড়ি সেখানে দাড়িয়ে আছে। মনে হলো, সবকিছু ফিটফাট, হঠাৎ করে যাওয়া হলো এবং যেয়ে দেখলাম ভুল বোঝাবুঝি হোক আর যে কারণেই হোক সেখানে সাজানো ঘটনা দিয়ে ওই এলাকার আওয়ামী লীগের সভাপতি কামালের সামনে এ ঘটনা সাজানো হয়েছিল। আমি যদি আর ৫ মিনিট পর যেতাম তাহলে আরও বড় নাটক সাজানো হতো। আমি যাওয়ার পরে অফিসাররা বুঝতে পেরেছে এটি একটি সাজানো ঘটনা।’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়