২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:৫০, ২২ মে ২০২২

আপডেট: ১৪:৫৭, ২৩ মে ২০২২

নির্যাতনের ৬ দিন পর হাসপাতালে তরুণের মৃত্যু

নির্যাতনের ৬ দিন পর হাসপাতালে তরুণের মৃত্যু

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে নির্যাতনের শিকার সুব্রত মন্ডল জয় নামে এক তরুণ ছয়দিন পর রোববার (২২ মে) হাসপাতালে মারা গেছেন। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, গত ১৬ মে রাতে তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়।

নিহত সুব্রত মন্ডল (২২) নগরীর দেওভোগ এলাকার সুরেশ চন্দ্র মন্ডলের ছেলে। সে পেশায় একজন হোসিয়ারি শ্রমিক ছিল। তার মৃত্যুর ঘটনায় বড় বোন শম্পা মন্ডল বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ১১ জনের নাম উল্লেখসহ ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী বলেন, গত ১৬ মে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার ছোটভাইকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় দুই ঘন্টা পর রাত আড়াইটায় গুরুতরভাবে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় তাকে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায় আসামিরা। পরে সুব্রতকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) শয্যা না পেয়ে প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতাল নামে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। রোববার সকালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সুব্রত।

নিহতের বড় বোন শম্পা বলেন, তার ভাইয়ের সারা শরীরে গুরুতর জখম ছিল। বা হাতের তিনটি আঙুলের সামনের অংশ কেটে ফেলেছিল আসামিরা। সুব্রত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেন নিহতের বোন।

এদিকে সুব্রত মারা যাওয়ার পূর্বে ধারণ করা একটি ভিডিওতে তাকে নির্যাতনকারীদের চিহ্নিত করে কয়েকজনের নাম বলেন। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে সুব্রত বলেন, তার উপর হামলাকারীরা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মনিরুজ্জামানের অনুসারী। গত সিটি নির্বাচনে সুব্রত সাবেক কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধানের পক্ষে ছিলেন। নির্বাচনের জেরে সুব্রতের সাথে হামলকারীদের সাথে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।

সুব্রত হত্যা মামলায় সায়েম ওরফে ইয়াবা সায়েম (৩০), সাজিদ ভূঁইয়া (৩৬), নাইম উদ্দিন বাবু (৩৫), দোলন (২৫), আল-আমিন (২৫), নোমান (২২), প্রণয় (২২), রাকেশ (২০), সুদেব (৩২), অনিক রাজিব (২৬) ও মানিককে (২৫) আসামি করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, আসামিদের সাথে কাউন্সিলর মনিরুজ্জামানের সখ্যতা রয়েছে। তাদের মধ্যে মানিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

যদিও এই বিষয়ে কথা বলতে নাসিক কাউন্সিলর মনিরুজ্জামানের মুঠোফোনে কল করলে তার একান্ত সচিব ইমরান জানান, কাউন্সিলর অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে শয্যাশায়ী। তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তবে সুব্রতকে নির্যাতনের ঘটনায় কাউন্সিলরের সম্পৃক্ততা নেই।

তবে সাবেক কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান বলেন, ‘সুব্রত’র পুরো পরিবার নির্বাচনে আমার পক্ষে কাজ করেছে। করোনাকালেও ওদের পরিবারকে সহযোগিতা করেছি। সেই সুবাদে সুব্রত আমার কর্মী ছিল। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে এমন নির্মম নির্যাতন কেউ কাউকে করতে পারে সেইটা আমার বোধগম্য না। সুব্রত নিজেই তাকে নির্যাতন করা লোকজন কাউন্সিলর মনিরের কর্মী বলে ভিডিওতে বলেছে। ও (সুব্রত) যাদের নাম বলেছে তারা সকলেই মনিরের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেছে। এইটা তো এলাকার সকলেই জানে।’

‘প্রতিদ্বন্দ্বীতা থাকতেই পারে। কিন্তু নির্বাচন শেষে তা নিয়ে তো এই ধরনের নির্মম ঘটনা ঘটানো কোনভাবেই কাম্য না। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করি আমি’- বলেন সাবেক কাউন্সিলর।

এ বিষয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, তিনি শনিবার থানায় যোগদান করেছেন। বিষয়টি জানতে পেরে রাতেই অভিযোগ গ্রহণ করেছেন। তখন হত্যা চেষ্টার ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। সকালে ভুক্তভোগী মারা যাওয়ায় এই মামলায় হত্যার ধারা সংযোজনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

ওসি আরও বলেন, এই ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান শুরু হয়েছে। মানিক নামে এজাহারনামীয় এক আসামিকে সন্ধ্যায় গ্রেফতারও করা হয়েছে। অনেকে অনেকের সম্পৃক্ততার কথা বলতে পারে কিন্তু তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদেরই আমার গ্রেফতার করবো।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়