২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৯:২০, ১৮ অক্টোবর ২০২২

আপডেট: ১৯:৫৪, ১৮ অক্টোবর ২০২২

পরাজয়ের জন্য শামীম ওসমানকে দায়ী করলেন আ’লীগ নেত্রী

পরাজয়ের জন্য শামীম ওসমানকে দায়ী করলেন আ’লীগ নেত্রী

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে এক নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য পদপ্রার্থী ছিলেন আছিয়া খানম সুমি। তিনি আওয়ামী মহিলা লীগের জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। ভোটে পরাজয়ের জন্য তিনি দলীয় সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে দায়ী করেছেন।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর দেওভোগে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনি বলেন, ‘আমি আমার ভোটারদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি ভোটারদের ভোটে পরাজিত হইনি। আমাকে ওসমান পরিবারের দুই ভাই শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান হাতে ধরে পরাজিত করেছেন। ভোটে কারচুপির মাধ্যমে অযৌক্তিক একটা ফলাফল আমার হাতে তুলে দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে উনি (শামীম ওসমান) নাকি আইডল। আমার মতো সাধারণ নেত্রী যে কখনও তার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেই নাই, তাহলে আমাকে নিয়ে খেলাটা কেন খেললো? নির্বাচন এমন করবো আগে বললেই তো আমি নির্বাচনে অংশ নিতাম না।’

রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, জেলা পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে আছিয়া খানম সুমি ১৯ ভোট পান। এই ওয়ার্ডে যুব মহিলা লীগের মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সাদিয়া আফরিন ১২৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানির স্ত্রী এবং ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলীর কন্যা। সাফায়েত আলম সানি ও শওকত আলী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী।

পরাজিত প্রার্থী আছিয়া খানম সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগ করে বলেন, ‘ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়ার সময় বলছিলাম, “আপনারা আসেন ভোট দেন। ভোটটা দিয়া দেখেন হয়তো জাস্টিস হবে”। এই সময় ওনারা বলছেন, “ওসমান পরিবার যেখানে আছে সেখানে জাস্টিস হবে না”। আমি বলছি, “ভাইয়া (শামীম ওসমান) এত ছোট না। এত ছোট জিনিসের জন্য, সামান্য সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য ভাইয়া এত চীপ মাইন্ডেড হবেন না।” উনি আমার দলের এমপি, আমিও দলের নেত্রী। দলের হইয়া দলের লোকরে ঠকাইবেন না ভাবছিলাম। উনি নিরপেক্ষ থাকবেন বলে আশা করছিলাম।’

আছিয়া বলেন, ‘জেলা পরিষদের নির্বাচন করতে গিয়া আমি অনেক কিছু শিখলাম। আমার দুঃখ কেবল দলের লোকের সাথেই। আমার দলের লোকই আমাকে অসম্মান করেছে।’

সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন মহিলা আওয়ামী লীগের এই নেত্রী। হাতজোড় ভঙ্গিতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘যে নির্বাচন করবে সে যেন ওসমান পরিবারের পারমিশন নিয়ে যেন দাঁড়ায়। এইখানে তাদের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার কোন ক্ষমতা নাই। আমি আমার দলের এমপির বিরুদ্ধেই বলছি। কারণ উনি এই কাজগুলো করছেন। উনি প্রত্যেক চেয়ারম্যানকে নিয়ে মিটিং করেছে, নির্বাচনের আগের রাত দুইটা বাজেও চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সাদিয়া আফরিনের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য চাপ দিছেন। এই কথা মেম্বার-চেয়ারম্যানরাই আমাকে বলছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছোট্ট একটা নির্বাচন। মাত্র ১৯৯টা ভোট। সেইখানেও তাদের প্রভাব খাটাইয়া নিজের প্রার্থীরে জিতাইতে হইবো? নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা হইছে। কিন্তু এইখানে এখন আওয়ামী লীগ নাই। যারা প্রকৃত আওয়ামী লীগ তাদের দলে নাম নাই। এইখানে সব ওসমান লীগ।’

ভোটগ্রহণের দিনও দুই সাংসদের নির্দেশনায় কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আছিয়া খানম। পরাজিত এই প্রার্থী বলেন, ‘৯০টা ভোটার আমার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। ৯০টা না পাইলেও ৩০টা ভোটও তো পাইতাম। যেই ফলাফল আমারে দিতে সেইটা স্বচ্ছ না। এইখানে কারচুপি হইছে। দুই সাংসদের কথায় নির্বাচন অফিসাররাও এই কারচুপিতে যুক্ত। ভোটের দিন আমার ছেলে নিজ কানে শুনেছে, একজন অফিসার বলছে, ১০২টা ভোট হওয়ার পর ইভিএম মেশিনের মেমোরি কার্ড পরিবর্তন করে ফেলবেন। মেমোরি কার্ড কেন পরিবর্তন করতে হবে? ডিসি স্যার (রিটার্নিং কর্মকর্তা) প্রার্থীদের নিয়ে সভায় বলছিলেন, কেন্দ্রে সাংবাদিকও ঢুকতে পারবে না। অথচ পুরো কেন্দ্রভর্তি শামীম ওসমানের অনুসারী নেতা-কর্মীরা ছিল। কেন্দ্রগুলো সব শামীম ওসমানের লোকজনের দখলে ছিল। বারবার এই কথা বলার পরও পুলিশের কোন সদস্য কিছু বলে নাই।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। ফলে তার বক্তব্য সংযুক্ত করা যায়নি।

তবে জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, ‘এই বিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগও করেননি। ফলে এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে পারছি না।’

কারচুপির বিষয়ে কেন নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেননি, জানতে চাইলে আছিয়া খানম সুমি বলেন, ‘ফলাফল পাওয়ার পর থেকে আমি খুবই মর্মাহত ছিলাম। তবে নির্বাচন কমিশনে কারচুপির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

জেলা পরিষদের এক নম্বর সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে সদর উপজেলা, বন্দর উপজেলা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৯৯ জন জনপ্রতিনিধি ভোটার ছিলেন।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়