১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ২২:৩৩, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

পুলিশের সামনে টেঁটা-রামদা নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলা

পুলিশের সামনে টেঁটা-রামদা নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলা

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পুলিশের উপস্থিতিতে টেঁটা, ছুরি ও ধারালো রামদা নিয়ে হামলায় সাতজন আহত; তাদের মধ্যে একজন গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার মদনপুরের আন্দিরপাড় হেদায়েতপাড়া এলাকায় এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা।

হামলায় আহত স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম জানান, হামলায় স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহেল মিয়ার ভাই রাসেল ও আরেক ইউপি সদস্য খলিলুর রহমানের অনুসারী লোকজন এই হামলায় অংশ নেয়। তিনি বলেন, “এক বছর পূর্বে এই এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে জুয়েল নামে এক যুবক খুন হয়। জুয়েল স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহেল মিয়ার ভাই। এই হত্যা মামলায় প্রতিপক্ষের আট-নয়জনকে আসামি করা হয়। ওই সময়ই আসামিদের বাড়িঘরেও হামলা করে বাদীপক্ষের লোকজন। সম্প্রতি আসামিরা জামিনে পেয়েছেন। রোববার মামলার আসামি আলীম তার বাড়িতে আসলে প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা করে। হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে আমিসহ দুইজন সাংবাদিকের উপরও চড়াও হয় হামলাকারীরা।”

হামলায় আরও আহত হয়েছেন আন্দিরপাড় হেদায়েতপাড়া এলাকার আলীম প্রধান (৪০), তার বড়ভাই মো. সেলিম (৪২), বোন সেফালী (৪৫), শাহিদা (৩৮), ভাতিজা সিয়াম (১৭)।

আহত আলীম প্রধান বলেন, “আমরা হামলার আশঙ্কা আগেই করছিলাম। বাড়ির কাজ করাবো তাই ধামগড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের কাছে নিরাপত্তাও চাইছিলাম। তিন দফায় হামলা করছে তারা। প্রথমবার ভাইরে কোপাইছে। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে সোহেল মেম্বারের ভাই রাসেল তার লোকজন নিয়ে আমার উপর হামলা করে। এই হামলায় খলিল মেম্বারের লোকজনও ছিল। তারা পুলিশের সামনেই টেঁটা ও ধারালো রামদা নিয়ে হামলা করে। এই সময় দুইজন সাংবাদিকও আহত হয়। আমার ভাই পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।”

হামলার সময় ঘটনাস্থলে ধামগড় ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) জামিল, বন্দর থানার এসআই বাশার, কনস্টেবল পারভেজ, কনস্টেবল জিয়াসহ ছয়জন পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে আলীম বলেন, “তারা এত বড় সন্ত্রাসী যে পুলিশের সামনেই টেঁটা, ছুরি, রামদা হাতে এই হামলা চালায়।”

স্থানীয় এক সাংবাদিকের ধারণ করা ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, দৌঁড়ে আসছেন কয়েকজন যুবক ও তরুণ। তাদের সকলের হাতে তীক্ষè লোহার ফলাযুক্ত টেঁটা, ছুরি ও রামদা। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাদের নিভৃত করার চেষ্টা করলেও তারা প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হচ্ছেন।

পুলিশের উপস্থিতিতেই টেঁটা ও রামদা নিয়ে হামলার বিষয়টি স্বীকার করে ধামগড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাসিম হাবিব বলেন, “দুইপক্ষের পুরোনো দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বে একজন খুনও হন। তবে আসামিরা জামিনে এসে তাদের বাড়িতে কাজ করাবেন জানিয়ে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলও। কিন্তু সংখ্যায় কম থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি। পরে অতিরিক্ত ফোর্স আসে। পুলিশ ঘটনাস্থলে না থাকলে খুন হওয়ারও সম্ভবনা ছিল।”

তবে হামলার নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, “আমি সারাদিন উপজেলা পরিষদ আর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এই ঘটনার সাথে আমি জড়িত না। আর পুলিশের সামনেই তো সব হইসে দেখলাম ভিডিওতে। পুলিশ কেন তাগোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলো না?”

এদিকে অভিযুক্ত রাসেলের মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। রাসেলের ভাই মদনপুর ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সোহেল মিয়া গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় বিদেশী পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলিসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ (‘খ’ সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসেন জানান, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন যাবৎ দুইপক্ষের দ্বন্দ্বকে ঘিরে সংঘাত লেগেই আছে। হামলার খবর পেয়ে আমরা দুইপক্ষকেই নিবারণ করেছি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।”

পুলিশের সামনেই টেঁটা ও ধারালো রামদা নিয়ে হামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “যখন প্রাথমিক হামলা হয়েছে তখন পুলিশের সংখ্যা খুব কম ছিল। হামলাকারীদের নিয়ন্ত্রণ করার মতো পর্যাপ্ত শক্তি ছিল না। পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তখন হামলাকারীরা সরে যায়।”

পুলিশের সামনে এই ধরনের হামলায় পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিল্লাল হোসেন বলেন, “হামলার ঘটনায় একজন ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এই ঘটনায় তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে হামলাকারীদের সাথে থাকা টেঁটা ও ধারালো অস্ত্রের কিছুই জব্দ করা যায়নি। এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়