২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৮:০৫, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

আপডেট: ১৪:০৯, ২৭ জুন ২০১৯

প্রয়াত রণজিত কুমারকে নিয়ে ফেসবুকে শোকগাঁথা

প্রয়াত রণজিত কুমারকে নিয়ে ফেসবুকে শোকগাঁথা

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: বুধবার (২ জানুয়ারি)সন্ধ্যা ৬টায় মৃত্যুবরণ করেন নারায়ণগঞ্জের অন্যতম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা রণজিত কুমার। ৫৭ বছর বয়সে অসংখ্য সতীর্থ, সহকর্মী আর ভক্তদের কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিলেন এই গুনী ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশে আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের নির্বাহী সদস্য, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের সংগঠক রনজিৎ কুমারের এই মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেননি তাঁর আপনজনেরা। শোকগাঁথায় পুর্ণ তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের ওয়াল।

কবি সাংবাদিক আবু হাসান শাহরিয়ার তার প্রথম কবিতার বইয়ের উৎসর্গপত্রে রণজিত কুমারকে ‘কুসুমকুমারী দেবীর সেই কাজে বড় ছেলেটি’ বলে আখ্যয়িত করেছিলেন। রণজিৎ কুমারের মৃত্যুতে কবি আবু হাসান শাহরিয়ার তাঁকে স্মরণ  করে লিখেন, “নিজের জমি নেই; পরের জমিতে তিন সহস্রাধিক গাছ লাগিয়েছিলাম। একফোঁটা জীবনে এটুকুই আমার অর্জন। এত এত গাছের মধ্যে একটিই চাপালিশ গাছের চারা রোপণ করেছিলেম নারায়ণগঞ্জ চুনকা পৌর পাঠাগারসংলগ্ন প্রাঙ্গনে। কবি শামসুর রাহমানকে নিয়ে পাঠাগার-ভবন সংস্কারকালে গাছটি কৈশোরেই উৎপাটিত হয়েছে বলে জানি। গাছটিকে রেখেও সংস্কারসাধন সম্ভব ছিল। হায়, অভাগা দেশে কে আর কবিকে রাখে মনে! তাই, কবি শামসুর রাহমানের স্মৃতিবিজড়িত সেই গাছটি আজ আর নেই। যার জন্য সেই চাপালিশ রোপণ, ধাবমান ও শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা প্রাবন্ধীক-বাচিকশিল্পী সেই রনজিত কুমারও গতকাল চলে গেলেন চিরনিরুদ্দেশে (আজ সকাল ১০.৩০ এ শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আনা হবে)। শেষ সম্ভবপর মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সৎছিলেন শিল্প-সাহিত্যের সাধনায়। সাংগঠনিকতাকে পুঁজি করে কোনও ব্যক্তিগত ফায়দা লোটেননি কখনও। ২০০৩ সালে প্রকাশিত আমার `অর্ধসত্য` বইটি এই রণজিত কুমারকে উৎসর্গ করেছিলাম। উৎসর্গপত্রে লিখেছিলাম `রণজিত কুমার/কুসুমকুমারী দেবীর সেই কাজে বড় ছেলেটি`। তার সম্পর্কে আজও একবাক্যে একই কথা বলব আহত চিত্তে।চিরশ্রদ্ধা, হে প্রণম্য সতীর্থ!”

দৈনিক সমকালের সাংবাদিক রাজীব নুর সামাজীক যোগাযোগ মাধমে লিখেন, রণজিৎদা` নেই। বঙ্গবন্ধু (পি.জি.) হাসপাতালে তাঁর হৃদযন্ত্রে বাইপাস সার্জারি হয়েছিল সকালে। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মারা গেছেন তিনি। তাঁর কথা জানতাম। পরিচয় ছিল না। বন্ধু আলফ্রেড খোকন আর আমাকে ডেকেছিলেন নারায়ণগঞ্জে, সাহিত্য আসরে। আমাদের সঙ্গে শিল্পী শাহীনুর রহমান গিয়েছিল। সেই পরিচয়। পরে নারায়ণগঞ্জ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তাঁর বাসায় থাকা হয়েছে। সেবার বাসায় থাকতে গিয়ে জানা হয়েছিল ময়মনসিংহে ছিলেন, সেখানে পড়তেন মেডিকেলে। কবিতা লিখতেন। বামপন্থী রাজনীতি করতেন। ডাক্তারি পড়াটা শেষ করা হলো না তাই। জেলখাটার গল্পও করেছিলেন সেবার। সব কথা মনে করতে পারছি না। সেগুনবাগিচা গেলেই যেতাম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। জাদুঘরে কাজ করতেন দাদা।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক লিখেন, আমাদের রণজিৎকুমার আর নেই। বাম জোট ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন এর কেন্দ্রীয় নেতা রণজিৎ অপারেশনের পর আর ফিরে আসেনি। বড় অসময়ে অকালে এই চলে যাওয়া মেনে নেয়া কঠিন। কাল সকালে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম। নারায়ণগঞ্জ এর সাংস্কৃতিক জগতে বড শুন্যতা তৈরি হল। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের সাথে রণজিৎ যুক্ত ছিলেন বহু বছর। প্রিয় রণজিৎ এর গভীর শোক ও তার স্মতির প্রতি শ্রদ্ধা।

গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফিরোজ আহমেদ লিখেন, খুব পছন্দের একটা মানুষ, রণজিৎ কুমার চলে গেলেন। ৯০ দশকের কোন একটা বছরে তার সাথে পরিচয়। ধাবমান নামে একটা সংগঠন করেছিলেন নারায়নগঞ্জে। যে অজস্র কিশোরের মাঝে তিনি স্ফূলিঙ্গ জাগিয়েছিলেন, তাদের অনেককেই এখন এক একটা বড়সড় বৃক্ষক্ষ হিসেবে দেখতে পাই। চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষার্থী ছিলেন, শেষমেষ হলেন সমাজ গড়ার কারিগর। বইয়ের দোকান, পত্রিকা, গল্প-কবিতা-সাহিত্যচক্র- পাঠচক্রের আসর, কত অজস্র ভাবে জাগিয়ে তুলেছেন অজস্র মানুষকে। প্রথমবার দ্বিজেন শর্মার দেখা পেয়েছিলাম তার ওখানে একটা পাঠচক্রে। প্রথমবার অমল আকাশের সাথে পরিচয়ও মনে হয় সেখানেই। প্র্রথমবার নারায়ণগঞ্জ যাবার উপলক্ষও ছিলেন রণজিৎদা, মশহুরুম আমিন মিলন নিয়ে গিয়েছিলেন। আজকে নারায়নগঞ্জে যে একটা সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ দেখতে পাই গুন্ডাতন্ত্রের বিরুদ্ধে, তার অন্যতম কুশীলব ছিলেন এই সাদামাঠা কর্মঠ আত্মপ্রত্যয়ী মানুষটি। বিদায় রণজিৎদা, আপনার মত মানুষেরা আলো জ্বালিয়ে রেখেছিলেন বলেই নতুনতররা স্বপ্ন দেখতে পারে।

দৈনিক আমাদের সময়ের সিনিয়র সাব এডিটর কাজল কানন লিখেন, সবারই আকাশ থাকে-রনজিত কুমার চলে যাওয়ায়,আমার মাথার ওপর কোনো আকাশ রইল না।

ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার ইকবাল আলী লিখেন, এ শহরে একজন হ্যামেলনের বাঁশিওয়ালা এসেছিলেন। তাঁর সম্মোহনী বাঁশিতে ওলটপালট করে দিয়েছিলেন অসংখ্য কিশোর কিশোরীর চিন্তার জগৎ। শতফুল ফুটানোর মন্ত্র নিয়ে চাষ করেছেন অনুর্বর জমি। অফুরন্ত উজ্জীবনী শক্তি দিয়ে মাতিয়ে রেখেছেন নারায়ণগঞ্জের সাহিত্য ও সংস্কৃতির পরিমন্ডল। হঠাৎকরেই এই অনন্য ভালোবাসার মানুষটির পথ চলা থেমে গেলো আজ। রনজিত কুমার। আমার শিক্ষক । এখনও যাঁর ছায়ায় আমার বিচরণ।

উল্লেখ্য, বিগত কয়েকদিন যাবত ঢাকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন রণজিত কুমার। বুধবার (২ জানুয়ারি) সকালে তাঁর ওপেন হার্ট সার্জারি করার জন্য অপারেশন কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। অপারেশন সফল না হওয়ায় সন্ধ্যা ৬টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মৃত্যু নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে এক শোকের মাতম বয়ে আনে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়