২৯ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ২১:০৭, ১০ জুলাই ২০২১

আপডেট: ২১:০৭, ১০ জুলাই ২০২১

ফকির অ্যাপারেলস’র পেটে কালিয়ানী খাল!

ফকির অ্যাপারেলস’র পেটে কালিয়ানী খাল!

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: সারা বছর জলাবদ্ধতা থাকে সদর উপজেলার ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের অধিকাংশ এলাকা। হোসিয়ারি শিল্প নগরী বিসিকে যাতায়াতের প্রধান সড়কটিও বাদ যায়নি এই তালিকায়। বছরের অধিকাংশ সময় জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগের শিকার এখানকার কয়েক লাখ শ্রমিক। এই জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ বিসিকের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কালিয়ানী খাল। প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খাল দখল-দূষণে পরিণত হয়েছে সরু নালায়। খাল দখলের দৌড়ে এগিয়ে ফকির অ্যাপারেলস।

এক সময় এখানে ছিল বিস্তৃত কালিয়ানী বিল। পরবর্তীতে পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল রেখে বাকি জায়গার ওপরে গড়ে তোলা হয়েছে বিসিক। এ খাল দিয়ে বৃহত্তর মাসদাইর, শাসনগাঁও, বিসিক শিল্প নগরী, হরিহরপাড়া, জামতলা, গলাচিপা এলাকার পানি নিষ্কাশিত হতো। খালের সংযোগ ছিল ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে। নকশা অনুযায়ী এক সময় এ খালের প্রশস্ততা ছিল ৪৫ থেকে ৬৫ ফুট। যা মাসদাইর ও হরিহরপাড়ার মৌজার নকশায় উল্লেখ আছে। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ জায়গায় এটি সরু নালায় পরিণত হয়েছে। খাল দখলের তালিকায় স্থানীয়দের পাশাপাশি আছেন খালের দুই পাশের গার্মেন্টস মালিকরা। খালের ভিতরে ঝুট ও পলিথিন ফেলে কিংবা খালের ভেতরে ভবনের জন্য পাইলিং করে দখল করা হয়েছে কালিয়ানী খাল। এসব কারণে খালে পানি প্রবাহ কমে গেছে। বর্ষাকালে ডুবে যায় বিসিকসহ এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের অনেক এলাকা।

কালিয়ানী খালের অনেকাংশ দখল করে রেখেছে ফকির অ্যাপারেলস। এই প্রতিষ্ঠানটি খাল ও খালের তীর দখল করে তৈরি করেছে ১৫ ফুটের কালভার্ট। এছাড়া আরও ২০০ ফুটের মতো দখল করে শ্রমিকদের চলার রাস্তা ও সাইকেল স্ট্যান্ড নির্মাণ করেছে। খালের দুই পাশে রয়েছে ফকির অ্যাপারেলসের ভবন। এই দুই ভবন আবার সংযুক্ত করতে অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে কালভার্টটি। খাল দখলের তালিকায় আছে শিল্পপতি আসলাম সানির ক্রোনী গ্রুপ, ফারিহা গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠানও খালের বিভিন্ন অংশ দখল করে রেখেছে।

ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফকির মো. মনিরুজ্জামানের মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কলটি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য সংযুক্ত করা যায়নি।

ড্রেজারের পাইপ বসিয়েও কিছু জায়গায় খাল ভরাট করা হয়েছে। টানা ১৩ দিন ধরে কালিয়ানী খালটি উদ্ধার করে জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে কাজ করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। গত ২৪ জুন খাল উদ্ধার ও খনন কার্যক্রম শুরু করে সিটি কর্পোরেশন। পরে ৩০ জুন বিশেষ ভেকু দিয়ে খালটি খনন করা শুরু হয়। ইতোমধ্যে খালের দুই পাশের কিছু অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়েছে।

এবিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র আফসানা আফরোজ বিভা বলেন, দখল হওয়া খালটির কারণে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের দেওভোগ ও মাসদাইরসহ কয়েকটি এলাকার মানুষ বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দী হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৩ জুন নগরীর দেওভোগ ও মাসদাইর এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণ খুঁজতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি দল খাল খননের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। কালিয়ানী খালটি দখল ও দূষণে প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। পরবর্তীতে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্দেশে খালটিকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে মাঠে নামে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। খালের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করতে না পারলে এই সুফল দীর্ঘায়িত হবে না। আমরা দখলদারদের চিহ্নিত করে প্রশাসনের সহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযানে নামবো।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়