১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ৭ নভেম্বর ২০১৭

আপডেট: ২১:২৯, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

বদলে যাচ্ছে নগরবাসীর খাদ্যাভ্যাস

বদলে যাচ্ছে নগরবাসীর খাদ্যাভ্যাস

স্টাফ রিপোর্টার: সময়ের পরিবর্তন ও চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে মানুষের পছন্দ এবং খাদ্যাভ্যাস। যেমন বদলে গেছে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের জীবন ব্যবস্থা। ঘরের খাবারের চেয়ে বেশি পছন্দ হোটেল রেস্তোরা আর ফাস্ট ফুড। ফলে নগরবাসীর চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিগত দুই-তিন বছরে নারায়ণগঞ্জ শহরে লক্ষণীয় মাত্রায় গড়ে উঠেছে রেস্টুরেন্ট, মিনি চাইনিজ ও ফাস্টফুড। এ সকল প্রতিষ্ঠানে ভোক্তাদের সিংহভাগ হলো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা।

কোচিং অথবা ক্লাসের ফাঁকে একটু আড্ডা আর দ্রুত খাবার গ্রহণের জন্য এ সকল তরুণ-তরুণীদের প্রথম পছন্দ এ সকল ফাস্টফুড বা রেস্টুরেন্ট। আবার বন্ধু বা প্রিয়জনের জন্মদিন অথবা কারো বিশেষ সাফল্য উদযাপন করতে এ সকল রেস্টুরেন্টই শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ।

নারায়ণগঞ্জে বিগত এক বছরে এ সকল রেস্টুরেন্টের খাদ্য তালিকায় যেমন স্থান পেয়েছে বিভিন্ন ধরণের খাবার। তেমনি ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে তাদের খাদ্য পরিবেশনের ধরণ এবং অভ্যন্তরীন সাজসজ্জায়। প্রতিষ্ঠানের নামকরণেও ভিন্নতা দেখা যায়।

ভোক্তাদের জন্য নতুন চমক সৃষ্টির একটা প্রতিযোগিতাও লক্ষ্য করা যায় প্রতিষ্ঠানের নামকরণের ক্ষেত্রে। আকর্ষনীয় নাম ও সুন্দর ডেকোরেশন একটি মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যেমন টেম্পো, জালাপিনো, টিটেল- টেটেল জুস পার্লার, চড়ুইভাতি, চাবাও, ৭ সতেরো, নাইট আউল ক্যাফে, কফি হলিক, এক কাপ চা সহ আরো অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে বৈচিত্র্য নিয়ে। জেলার সবচেয়ে ব্যস্ত অঞ্চল চাষাড়াকে ঘিরে গড়ে উঠছে এ সকল রেস্টুরেন্ট। এছাড়া কলেজ রোড এবং জামতলা এলাকাতেও লক্ষ্য করা যায় এ সকল রেস্টুরেন্টের সম্ভার।


জামতলায় অবস্থিত এমনি এক ভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট ‘টেম্পো’। তাদের উপস্থাপনের ভিন্নতা নিয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের অংশীদার আর্কিটেক্ট তারিক বিন আনোয়ার বলেন, বর্তমান প্রজন্ম ভিন্নতা পছন্দ করে। তাই আমরা খাদ্য পরিবেশন এবং অভ্যন্তরীন সাজসজ্জায় নতুনত্ব নিয়ে এসেছি। আমরা লক্ষ করেছি খাবারের চাহিদা মেটাতে নারায়ণগঞ্জের তরুণ ছেলে-মেয়েরা ঢাকামুখী হয়ে পড়ছে । ফলে নারায়ণগঞ্জেই তাদের ফাস্টফুড ও অন্যান্য খাদ্য চাহিদা পূরন করতে আমরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা আমাদের স্বল্প পরিসরের মধ্যে চেষ্টা করছি ভোক্তাদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে।
নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় এক রেস্টুরেন্টে আসেন সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ফারিয়া হোসেন । তিনি প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, এটা বর্তমানে ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে। নারীরা যেহেতু পুরুষদের মতো বিভিন্ন স্থানে আড্ডা দিতে পারেন না সেহেতু এ সকল রেস্টুরেন্টে বসে বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোটাকে নিরাপদ বলে মনে করছেন।


ইস্ট ওয়েস্ট ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থী মুহিত বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক আধুনিক হয়ে গেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষের অভ্যস্ততারও পরিবর্তন হচ্ছে। তাই ভিন্ন সংস্কৃতির নতুন নতুন খাবারের প্রতি আমাদের আগ্রহ বাড়ছে। আর এই চাহিদা মেটাতেই গড়ে উঠছে রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুডগুলো।

‘জালাপিনো’ রেস্টুরেন্টের কর্ণধার আফজাল হোসেন পন্টি জানান, নারায়ণগঞ্জবাসীর দোরগোড়ায় মানসম্পন্ন কন্টিনেন্টাল খাদ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। মানসম্পন্ন এবং ভিন্ন স্বাদের সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।
তিনি আরো বলেন, সমাজের মানুষের অভ্যাস, চাহিদা পরিবর্তন হবে এটি স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে মানুষের রুচি সবসময় একই থাকবে এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। মানুষের চাহিদা পরিবর্তীত হচ্ছে তাই আমাদের পরিবেশনাও পরিবর্তীত হচ্ছে।

ফেসবুক গ্রুপ ‘ফুড লাভারস অব নারায়ণগঞ্জ’ এর এডমিন রুবাইয়াত জুলকার প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমরা এ গ্রুপ শুরু করেছিলাম যেন নারায়ণগঞ্জের খাদ্য রসিক মানুষ এখানে তাদের পছন্দের খাবারের কথা বলতে পারেন। যেমন, যিনি ভাত খেতে ভালবাসেন তিনি ভাতের কথা লিখবেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেহেতু তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ বেশি ফলে তাদের কথা আমরা বেশি জানতে পাই। আমরা চাই ফাস্টফুড ব্যবসায়ী ও নারায়ণগঞ্জের খাদ্য রসিক মানুষের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করতে। আমরা খাবারের মান, পরিষ্কার পরিছন্নতা ও সেবার মান উন্নয়নে কাজ করতে চাই। আমরা ফাস্টফুড ব্যবসায়ী ও খাদ্য রসিক মানুষ উভয়ের সহযোগিতা করতে চাই ।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের আশঙ্কা হচ্ছে, যেকোনো অঞ্চলের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সে অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাস। ফলে এই ফাস্টফুড সংস্কৃতি তরুণ প্রজন্মের উপর কিছু বিরূপ প্রভাবও ফেলতে পারে, যা ঐতিহ্যের শেকড় থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবের ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি তরুণ প্রজন্ম এ ধরনের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এ সকল রেস্টুরেন্টে সময় অপচয় করেন। এটা ঠিক না। এক্ষেত্রে ভোক্তাদের যেমন সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি বিপুল পরিমানে তরুণদের প্রভাবিত করার মতো শক্তি যেহেতু এ সকল রেস্টুরেন্টের আছে তাদেরও উচিত ভিন্ন সংস্কৃতির পাশাপাশি বাঙালী ঐতিহ্যবাহী খাবার তাদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করা।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়