২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:৫০, ৯ জুন ২০১৮

আপডেট: ১৬:৫৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

‘বাবা কখনোই চাইতেন না আমি খেলাধূলা করি’

‘বাবা কখনোই চাইতেন না আমি খেলাধূলা করি’

মাহমুদুন নবী (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’- বিশ্বকাপ ফুটবলের বাকি আর মাত্র ৫ দিন। আর ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই প্রেস নারায়ণগঞ্জ মুখোমুখি হয়েছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ফুটবলার খোরশেদ আলম নাসিরের। তিনি জানালেন নারায়ণগঞ্জের ফুটবল ও ক্রীড়া সংস্থার অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার নানা কথা।

সাল ১৯৭৭। তিনি তখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ফুটবলের প্রতি অকৃত্তিম ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা থেকেই মহল্লার এক বড় ভাইয়ের হাত ধরে ফুটবল মাঠে চলে আসা, নিয়মিত অনুশীলন, জয়-পরাজয়ের স্বাদ নেয়া। বাবা চাইতেন না তার সন্তান খেলাধূলা করে সময় নষ্ট করুক। কিন্তু সন্তানের ভালোবাসা দমিয়ে রাখতে পারেন নি তিনি। সেই ৭৭’এর পর থেকে আজ ২০১৮ পর্যন্ত ৪১ বছরের দীর্ঘ জীবন খেলার মাঠেই কাটিয়েছেন খোরশেদ আলম নাসির, আরও অনেকটা সময় কাটাতে চান এভাবেই। খেলাধূলোর প্রতি সেই ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাবোধ থেকেই হাতে তুলে নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: খেলাধূলার সাথে আপনার যুক্ততা কীভাবে?

খোরশেদ আলম নাসির: ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার টানে ছোট থেকেই মহল্লায় ফুটবল খেলতাম। আর মহল্লার এক বড় ভাই এনামুল হক সবুজের হাত ধরে ফুটবলের মাঠে আসা ১৯৭৭ সালে। যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। আর আমার খেলাধূলার জীবনে যার অবদান স্বীকার না করলেই নয় তিনি আজিজুর রহমান। ফুটবল মাঠে অনুশীলনে এসেই তার সাথে পরিচয়। পেশায় একজন প্রাইভেট কার চালক ছিলেন। তিনিই বিভিন্ন সময় আমাকে মাঠে নিয়ে যেতেন খেলা দেখার জন্যে। তার হাত ধরেই আমি প্রথম জাতীয় পর্যায়ের খেলা দেখতে যাই। যথেষ্ট অনুপ্রেরণাও দিতেন।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: খেলার জীবনে কোনো বাঁধা পেয়েছেন কী ? পেয়ে থাকলে সেটা কার কাছে?

খোরশেদ আলম নাসির: খেলাধূলার জীবনে সব সময়ই বাঁধা ছিলো, এখনও আছে। আর সেটা পরিবার তথা বাবার কাছ থেকেই। বাবা কখনই চাইতেন না আমি খেলাধূলা করি। তিনি খেলাধূলা পছন্দ করতেন না। এখনও করেন বলে মনে হয় না।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: সেই খেলার মাঠ থেকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাথে যুক্ত হলেন কীভাবে?

খোরশেদ আলম নাসির: আমি খেলার সাথে জড়িত থাকার পাশাপাশি খেলার বিভিন্ন দিক নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি করতাম। আর সেই সূত্র ধরে পরিচয় হয় হাবিবুর রহমান হাবিবের সাথে। তখন তিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এরপর তার মাধ্যমেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাথে যুক্ত হই। এখন আমি গর্বিত যে সময়ের বিবর্তনে আমি তার পদেই আছি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের ফুটবল নিয়ে আপনার ভাবনা অথবা স্বপ্নের কথা বলুন?

খোরশেদ আলম নাসির: নারায়ণগঞ্জের ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন, সেটাতো আর কোনো সীমারেখা রাখে না। এক সময় অনেক স্বপ্ন ছিলো নারায়ণগঞ্জে ফুটবল নিয়ে। সে রকম গর্ব করার মতো পজিশনও ছিলো নারায়ণগঞ্জের। কিন্তু বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের ফুটবলের অবস্থা ভয়াবহ। এজন্যে সামগ্রিক ভাবে আমরা সকলেই দায়ি। সরকারের নীতি এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে। নারায়ণগঞ্জে এতো ফুটবলার থাকা সত্ত্বেও নারায়ণগঞ্জে নিয়মিত ফুটবল লীগ হচ্ছে না। ভ্রান্ত কিছু নীতি এখানে কাজ করছে। একটি নীতি এরকম যে যারা ‘বি লীগ’ ও ‘বি টায়ারের’ খেলায় অংশগ্রহণ করছে তারা অন্য কোনো খেলায় অংশ নিতে পারবে না। আর নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ খেলোয়ার ‘বি লীগ’ ও ‘বি টায়ারে’ অংশগ্রহণ করে। ফলে তারা অন্য কোথাও অংশ নিতে পারে না। এখন তারা যদি প্রথম বিভাগ দ্বিতীয় বিভাগ নিয়মিত খেলতো তবে তাঁদের দেখাদেখি নতুন খেলোয়ার তৈরি হতো। তারপরেও নারায়ণগঞ্জের ফুটবল এখনও শক্ত একটি অবস্থানেই রয়েছে। ঢাকার ফুটবল এখনো নারায়ণগঞ্জের ফুটবলের উপরেই টিকে আছে। কিন্তু ফুটবললীগটা নিয়মিত হয় না বলে নতুন খেলোয়ার তৈরি হওয়ার পথটা আটকে আছে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: ক্রীড়া সংস্থার পাশাপাশি এখন আর কোথায় জড়িত আছেন?

খোরশেদ আলম নাসির: শুধুমাত্র ক্রীড়া সংস্থাতেই, আর কোথাও নিজেকে জড়িত করবার সুযোগ নেই। আমি চাকুরী - ব্যাবসা কোনো কিছুতেই নিজেকে জড়িত করিনি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কখনও বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো বড় আসরের মূল পর্বে খেলার সুযোগ পাবে, সেই স্বপ্ন দেখেন ?

খোরশেদ আলম নাসির: আমি আশা করি না। আমি স্বপ্নও দেখি না। আমি হতাশা থেকে বলছি না, আমি আমার নিজের দেখা বাস্তবতার নিরিখে বলছি। আশা করি না এই কারণে যে, আমাদের নিজেদের অনেক সমস্যা রয়েছে। আমরা একে অপরকে বিশ্বাস করি না, শ্রদ্ধা করি না, সম্মানও করি না। আর এ সমস্ত কারণেই বাংলাদেশ কখনও বিশ্বকাপ ফুটবলের মূল পর্বে খেলতে পারবে না।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: বিশ্বকাপ ফুটবলের মূল পর্বে অংশগ্রহণকারী কোন দলের খেলা ভালো লাগে?

খোরশেদ আলম নাসির: ব্রাজিলের খেলা ছোট থেকেই ভালো লাগে। কারণ তাঁদের খেলার একটা ছন্দ রয়েছে তবে ব্যাক্তিগতভাবে আমি ফুটবল ভালোবাসি। সকলের খেলাই দেখি, সকলকেই শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: এ সময়ে এসে তো বাংলাদেশের প্রমিলা ফুটবল দল দেশের জন্য অনেক সাফল্যই বয়ে আনছে সেখানে নারায়ণগঞ্জের অবস্থান কেমন?

খোরশেদ আলম নাসির: নারায়ণগঞ্জের পুরুষ ফুটবলারদের মতোই নারী ফুটবলাররাও যথেষ্ট এগিয়ে। তবে আমরা এখনও কুসংস্কার থেকে বেড়িয়ে আসতে পারিনি বলে মাঝে মধ্যেই পিছিয়ে পরি। আমাদের মেয়েদের বয়স হবার আগেই বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। এতোকিছুর পরেও আমাদের অনেক প্রমিলা ফুটবলার জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। আমরা আবার দল গুছিয়ে আনছি। সামনে থেকে তারা আরও ভালো করবে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলুন?

খোরশেদ আলম নাসির: আমাদের স্টেডিয়ামকে পূর্ণ ক্রীড়া কমপ্লেক্সে রূপান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর তা করা গেলে খেলোয়ার তৈরি করার যে মূল সূত্র- ভালো মাঠ, ভালো জিমনেসিয়াম, অনুশীলন। এর সবকিছু আমরা নিশ্চিত করতে পারবো।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আপনাকে ধন্যবাদ। আমাদের সময় দেয়ার জন্য।

খোরশেদ আলম নাসির: প্রেস নারায়ণগঞ্জকেও ধন্যবাদ।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়