২৯ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ২৭ জানুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১৩:২৯, ২৮ জানুয়ারি ২০২১

বার নির্বাচন: পরিবর্তন নাকি ধারাবাহিকতা?

বার নির্বাচন: পরিবর্তন নাকি ধারাবাহিকতা?

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: রাত পোহালেই পেশাজীবী সংগঠন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির (বার) কার্যকরী পরিষদের (২০২১-২২) নির্বাচন। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নির্মাণাধীন ডিজিটাল ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কার্যকরী পরিষদের ১৭ পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ও বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের মোট ৩৪ জন প্রার্থী। তবে এই দুই প্যানেলের বাইরে সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র থেকে লড়ছেন একজন। আইনজীবী সমিতিতে গত কয়েক বছর যাবৎ নেতৃত্ব দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা। এবার তার পরিবর্তন হবে নাকি ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে তার ফল জানা যাবে বৃহস্পতিবার ভোট গণনার পর।

গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. আনিসুর রহমান দিপুর নেতৃত্বে একটি প্যানেল গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগের একটি বিদ্রোহী প্যানেল হিসেবে প্যানেলটি পরিচিতি পায়। তবে পরবর্তীতে প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যস্থতায় তারা প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। নির্বাচনের ঠিক আগের দিন সরে দাড়ায় বিএনপি সমর্থিত প্যানেলও। একরকম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নিরঙ্কুশ বিজয় পায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা। গতবারের একতরফা নির্বাচন নয় এবার অনেকটায় প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে বলে আশাবাদী সাধারণ আইনজীবীরা।

গত ৭ জানুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হলে তা আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। ওই সভা মাত্র ৫ মিনিটেই শেষ হয়ে যায়। আদালতপাড়ায় তাৎক্ষনিক একটি প্রতিবাদ সভাও করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় ওইদিন। শুরুতে নির্বাচন কমিশন নিয়ে দ্বিমত থাকলেও জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণার পর ব্যাপক প্রচারণা চালায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তারা বলছেন, এই নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে আছেন।

নির্বাচনে কারচুপি হতে পারে আশঙ্কা করে নির্বাচন কমিশন, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিতও দিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাড. সরকার হুমায়ূন কবির। তিনি বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাড. ওয়াজেদ আলী খোকন, বারের সাবেক সভাপতি অ্যাড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. মাসুদুর রউফ ও অ্যাড. কামাল হোসেন; এই পাঁচজন প্রতিবছরই নির্বাচনকে প্রভাবিত করে। এরা ভোটকেন্দ্রে যাতে না থাকতে পারে সেজন্য লিখিত দিয়েছি।’

গত মঙ্গলবার এই প্যানেলের পরিচিত সভায় উপস্থিত হয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই নির্বাচনে কাউকে হয়রানি করা হলে সরাসরি প্রধান বিচারপতির কাছে বিচার চাইবেন। এ সময় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যসচিব ফজলুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা। বর্তমান সভাপতি অ্যাড. মোহসীন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বেই ঘোষণা করা হয়েছে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। প্যানেল ঘোষণার পর থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে প্রার্থীরা। আদালতপাড়ায় তাদের প্রচারণায় আইনজীবী ছাড়াও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও প্রচারণায় অংশ নেয়। পৃথক দুই পরিচিতি সভায় এই প্যানেলের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমান।

জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী এই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অ্যাড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পুরোনো বার ভবন ভেঙে আমরা আটতলা ডিজিটাল বার ভবনে উন্নীত করছি। উন্নয়নের সাথে থাকবেন সাধারণ আইনজীবীরা। সাধারণ ভোটাররাই সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে নির্বাচিত করবেন।’

নির্বাচন কমিশন

গত ১৪ জানুয়ারি প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই এবং ১৭ জানুয়ারি ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১৮ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন ৩৫ প্রার্থীর বৈধ তালিকা প্রকাশ করে। ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আছেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাড. শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া। কমিশনের অন্যরা হলেন অ্যাড. আশরাফ হোসেন, আদালতের জিপি অ্যাড. মেরিনা বেগম, এপিপি অ্যাড. আব্দুর রহিম, অ্যাড. সুখচাঁদ সরকার। এছাড়া অ্যাড. এমদাদুল হক তারাজ উদ্দিন, অ্যাড. হুমায়ুন কবির আহমেদ ও অ্যাড. বুলবুল আহমেদ রয়েছেন আপিল বোর্ডে।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া। বিএনপির সংশয় এবং আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রার্থীদের এজেন্ট হিসেবে কেউ ভেতরে থাকলে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে প্রার্থীদের কেউ ভোটকেন্দ্রে থাকতে পারবেন না।

দুই প্যানেলে যারা

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি পদে মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাহবুবুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। নির্বাচনে সিনিয়র সহসভাপতি পদে বিদ্যুৎ কুমার সাহা, সহসভাপতি পদে বরুণ চন্দ্র দে, যুগ্ম সম্পাদক পদে রবিউল আমিন রনি, কোষাধ্যক্ষ পদে মনিরুজ্জামান কাজল, আপ্যায়ন সম্পাদক পদে মো. স্বপন ভূঁইয়া, লাইব্রেরী সম্পাদক পদে মাহমুদুল হক মমিন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে সাজ্জাদুল হক সুমন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বিপ্লব, সমাজ সেবা সম্পাদক পদে ইসরাত জাহান ইনা ও আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে নুসরাত জাহান তানিয়াকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। সদস্য পদে মনোনীত পাঁচজন হলেন: রোমানা আক্তার, আবু তাহের তালুকদার, কামরুল হাসান, সিরাজুল হক মিলন ও শরিফুল ইসলাম।

বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাড. সরকার হুমায়ুন কবীর ও সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাড. কামাল হোসেন মোল্লা। প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন: সিনিয়র সহসভাপতি পদে অ্যাড. মানিক মিয়া, সহসভাপতি অ্যাড. আনোয়ারুল আলম রিপন, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাড. সালাহউদ্দিন ভূইয়া সবুজ, কোষাধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম মুক্তা, আপ্যায়ন সম্পাদক জাহিদুর রহমান, লাইব্রেরি সম্পাদক অ্যাড. মোহসীন মিয়া, ক্রীড়া সম্পাদক গোলাম সারোয়ার, সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. সারোয়ার জাহান, সমাজসেবা সম্পাদক আসমা হেলেন বিথি, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। সদস্য পদে লড়ছেন: মোস্তাফিজুর রহমান শুক্কুর মাহমুদ, হাবিবুর রহমান, আসিয়া সুলতানা জেমী, হাফিজুর রহমান মাসুদ ও জামান হোসেন।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়