২৯ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ১৯:০৭, ৭ অক্টোবর ২০২১

আপডেট: ১৯:০৮, ৭ অক্টোবর ২০২১

বিএনপির সেন্টুই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী!

বিএনপির সেন্টুই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী!

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর দল থেকে তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। বিএনপির বহিষ্কৃত এই নেতাই এবার আওয়ামী লীগের সমর্থনে ইউপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য তার নামই কেন্দ্রে পাঠিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে তার পক্ষে জেলা নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ স্থানীয় নেতারা।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, কুতুবপুর বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। এখানে গত তিনবারই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরেছে। নৌকার প্রার্থী মাত্র ৫-১০ হাজার ভোট পায় এইখানে। এবার তৃণমূল সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুকেই নৌকার মনোনয়ন দেওয়ার জন্য। দলীয় সিদ্ধান্তে একমাত্র তার নামই মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বহিষ্কার হওয়ার পর ২০১৯ সালে অনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেন বলে জানান মনিরুল আলম সেন্টু। তিনি আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য হয়েছেন। এর আগে তিনবার কুতুবপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। গতবার দলীয় প্রতীক থাকা সত্ত্বেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন মনিরুল আলম সেন্টু। ওই নির্বাচনে তিনি পেয়েছিলেন ৪৩ হাজার ভোট। তার বিপরীতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছিলেন মাত্র ৯ হাজার ভোট। মনিরুল আলম সেন্টু বলেন, বিএনপিতে তিনি অবমূল্যায়নের শিকার হয়েছেন। সেই খেদ থেকেই আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায় ভিন্ন কথা। আওয়ামী লীগের সাংসদ শামীম ওসমানের সংসদীয় এলাকায় বিএনপির সাবেক নেতাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার সুপারিশ করায় নেতাদের উপর চরম ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলের। তবে এই ক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ বা সাহস নেই তাদের। স্থানীয় সূত্র বলছে, সাবেক বিএনপি নেতা মনিরুল আলম সেন্টুর উপর নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের আশীর্বাদ রয়েছে। বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও বরাবরই শামীম ওসমানকে নেতা মেনেছেন সেন্টু। গত সংসদ নির্বাচনের পূর্বে শামীম ওসমানের কর্মীসভাতেও তার সরব উপস্থিতি ছিল। অভিযোগ রয়েছে, সাংসদের আশীর্বাদপুষ্ট বিএনপি নেতাকে জেতাতেই গত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ হটিয়ে বিএনপির প্রার্থীকে সুযোগ দেওয়ার এই কার্যক্রম বিগত নির্বাচনগুলোতে গোপনে হলেও এবার তা হচ্ছে প্রকাশ্য। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বঞ্চিত করে বিএনপি নেতাকে আওয়ামী লীগের নৌকা দেওয়া হচ্ছে। কেননা কুতুবপুরে এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুল শিকদার, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোস্তফা কামাল, সদস্য শাহ্ আলম গাজী টেনুসহ অনেকেই।

এদিকে কুতুবপুরে আওয়ামী লীগের দৈন্যদশায় উপহাস করছে বিএনপির নেতারাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, এক যুগেরও বেশি সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। অথচ কুতুবপুরে তাদের নিজস্ব কোনো প্রার্থী নেই। বিএনপির দলছুট নেতাকে নৌকার মনোনয়ন দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

এই বিষয়ে কথা বলতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি। তবে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বলেন, ‘ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ থেকে মনিরুল আলম সেন্টুর একক নাম এসেছে। ওই নাম আমরা জেলা আওয়ামী লীগের কাছে পাঠিয়েছি। তবে এই নামের বিপরীতে জেলা আওয়ামী লীগ আপত্তি জানিয়েছিল। পরে তারা নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন কিনা জানি না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বলে শুনেছি। তবে তারা কেউই নাকি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাথে যোগাযোগ করেনি। তবে আমার মনে হয়, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এই ক্ষেত্রে ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তারা উদ্বুদ্ধ করতে পারে নাই।’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়