২৯ মার্চ ২০২৪

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১৬:৫৬, ১ মার্চ ২০২১

‘মসজিদ কমিটির মামলা ও সংবাদ সম্মেলনের তথ্য বিভ্রান্তিকর’

‘মসজিদ কমিটির মামলা ও সংবাদ সম্মেলনের তথ্য বিভ্রান্তিকর’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে মন্ডলপাড়া জামে মসজিদের ওয়াক্ফ করা ৮৩ শতাংশ জমি দখল ও স্থাপনা নির্মাণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা ও সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তথ্য বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জাকির হোসাইন। তিনি বলেন, মন্ডলপাড়া জামে মসজিদ তথা মীর শরিয়ত উল্লাহ ওয়াক্ফ এস্টেটের ৪৩ শতাংশে অনাপত্তি দেওয়ার পরই সেখানে নারায়ণগঞ্জ জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এর পরও ওই জমি নিয়ে কী কারণে মসজিদ কমিটির লোকজন মামলা করেছেন তা বোধগম্য নয়। এমনকি সংবাদ সম্মেলন ও মামলায় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করা হয়েছে।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মন্ডলপাড়ায় জেলা মডেল মসজিদের জমি নিয়ে মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসব কথা বলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক।

তিনি আরও বলেন, ‘যাদের মামলায় বিবাদী করা হয়েছে তারা তো এই মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের কোনো পক্ষ না। জমি নির্ধারণ ও কার্যাদেশ দিয়েছে সরকার। এখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা মেয়রের তো কিছু না। মডেল মসজিদের টেন্ডারের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং বিকল্প মসজিদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিকল্প নামাজের জন্য বিকল্প মসজিদের কাজও শেষ পর্যায়ে।’

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে মন্ডলপাড়া মসজিদ কমিটির লোকজন অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, ৫৩৯ বছরের পুরোনো এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি ভেঙে ফেলার পায়তারা করা হচ্ছে। মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হলে এই মসজিদ ভাঙা হবে কিনা জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক জাকির হোসাইন বলেন, ‘ভেতরে কয়েকশ’ বছরের যে পুরোনো মসজিদ রয়েছে তা থাকবে। যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারাও ভালো করে জানেন যে মসজিদটি অক্ষত রেখেই সব ধরনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।’

মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মামলায় আমাদের বা গণপূর্তকে কোনো পক্ষ করা হয়নি। মেয়র ও তিন ঠিকাদারের কাছে কারণ দর্শাতে বলেছেন আদালত। তারা তাদের মতো করে উত্তর দেবেন। আমরা তো বলতে পারছি না আসলে কী হবে? কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে বলছে, জমি মেয়র নিয়ে যাচ্ছে, মেয়র সেখানে মার্কেট করবে। সরকারি পরিকল্পনা রয়েছে সেখানে। ওই পরিকল্পনায় মার্কেট তো দূরে থাক এক কণা বালু উঠানো বা বসানোর সাধ্য কারও নাই। সারা বাংলাদেশে ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় অনেকেই নকশা পরিবর্তন করতে চেয়েছেন, কোনো এমপি-মন্ত্রীর তদবিরও সেখানে কাজে আসেনি। এখানে মার্কেট করা অসম্ভব। কারণ সরকার টাকা বরাদ্দ দেয় আর বাস্তবায়ন করে গণপূর্ত বিভাগ। পরিকল্পনার বাইরে গেলে বা কিছু বিচ্যুতি হলে সাথে সাথে মন্ত্রণালয়ে খবর চলে যাবে। সুতরাং এই সমস্যারও সমাধান হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পত্রিকার মাধ্যমে দেখেছি, মামলা ও সংবাদ সম্মেলনে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে। একেক জায়গায় একেক রকম বলা হচ্ছে। তারা (মসজিদ কমিটি) ৪৩ শতাংশ জমির জন্য সকল পক্ষের উপস্থিতিতে অনাপত্তি দিয়েছে। যখন উদ্বোধন করলেন তখন মসজিদ কর্তৃপক্ষ বিব্রত হলো। তাদের প্রশ্ন, কেন মেয়র উদ্বোধন করলেন? মেয়র জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন এবং সরকারদলীয় লোক, তাই তিনি চাইলে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কোনো একটা কার্যক্রম উদ্বোধন করতে পারেন। আমরা বলি, হয়তো তিনি উদ্বোধন না করলে এ পরিস্থিতির উদ্রেক হতো না। কিন্তু উদ্বোধন করায় তো কোনো ক্ষতি দেখছি না। এখন তারা (মসজিদ কমিটি) জায়গা দেয় আবার মসজিদ চায়, আবার বলে মেয়র উদ্বোধন করছে কেন? এগুলো তো স্ববিরোধী কথা হয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নারায়ণগঞ্জে ৬টি মডেল মসজিদের মধ্যে সোনারগাঁ ও আড়াইহাজারেও মামলা হয়েছে। আমরা দফায় দফায় কাগজপত্র দিয়ে সেটি নিষ্পত্তি করেছি এবং কাজ হচ্ছে। এখন কেউ যদি কোনো দাবি নিয়ে এসে আদালতে শরণাপন্ন হয় সে তার প্রতিকার চাইতে পারে। দুই পক্ষের শুনানির পরে সিদ্ধান্ত হবে। সেখানে যে অভিযোগগুলো চলে আসছে তা তো মডেল মসজিদের বিরুদ্ধে না বরং মেয়রের বিরুদ্ধে। আপনারা যদি আশঙ্কা করেন যে, আপনাদের জায়গা কেউ নিয়ে যাচ্ছে তাহলে বলবো, এটি কারও জায়গা না। এটি তো ওয়াক্ফা স্টেটের জায়গা। এখানে ওয়াক্ফা প্রশাসক ও অন্যান্যরা আছেন। তারপরও শঙ্কা থাকলে তার সমাধান হবে বলেও আশা করছি।’ এই মামলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ কার্যক্রমে সাময়িক অসুবিধা হলেও বন্ধ হবে না মন্তব্য করেন জাকির হোসাইন।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের সহকারী জজ চতুর্থ আদালতে মসজিদ কমিটির করা মামলায় বিবাদী করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের। মামলায় মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে মডেল মসজিদের ৪৩ শতাংশসহ ওয়াক্ফ সম্পত্তির প্রায় ৮৩ শতাংশ জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজটি পেয়েছে।

মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, মন্ডলপাড়া মসজিদ ও মসজিদ সংলগ্ন বিভিন্ন দাগে ৮২ দশমিক ৯০ শতাংশ মীর শরিয়ত উল্লাহ (মন্ডলপাড়া জামে মসজিদ) ওয়াক্ফ এস্টেট রয়েছে। এই জমি দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে সিটি মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। তবে এই এস্টেট থেকে ৪৩ শতাংশ জমি নারায়ণগঞ্জ জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য দেওয়া হয়েছে।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়