২৪ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ৪ এপ্রিল ২০২৩

আপডেট: ১৩:০৩, ৫ এপ্রিল ২০২৩

মেরাজুল খুনে আটক দুই, পরিবারের পাশে জনপ্রতিনিধিরা

মেরাজুল খুনে আটক দুই, পরিবারের পাশে জনপ্রতিনিধিরা

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পুরোনো দ্বন্দ্বের জেরে মেরাজুল ইসলাম খুনের ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ৷ তবে ঘটনার আটাশ ঘন্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও থানায় মামলা হয়নি৷

যদিও মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) রাত দশটায় বন্দর থানার ভারপ্তাপ্র কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ঘটনার রাতেই জড়িত সন্দেহে দুইজনকে আটক করা হয়৷ তবে এখনও মামলা হয়নি৷ নিহতের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে আনার পর দাফন শেষ হয়েছে৷ মামলার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে৷

এদিকে এ ঘটনার পর থেকে রুপালী আবাসিক, ছালেহনগরে কয়েক দফায় হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে৷ ঘটনার একদিন পার হলেও আশেপাশের এলাকার মানুষ আবারও কোনো সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন৷

গত সোমবার সন্ধ্যায় পুরোনো দ্বন্দ্বের জেরে মেরাজুল ইসলাম (২৮) ও তার বন্ধু আল-আমিনকে বন্দরের রূপালী আবাসিক এলাকায় কুপিয়ে জখম করা হয়৷ রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে মারা যান মেরাজুল৷

পুলিশ জানায়, মেরাজুল ও আল আমিন গত ১৩ মার্চ চিনারদীর আকিব হাসান রাজু ওরফে চুইল্লা রাজু এবং নূরবাগের রাজু আহমেদ ওরফে স্ট্যান্ড রাজু বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত ছিলেন৷ নূরবাগের রাজু আহমেদ ও চিনারদীর আকিব হাসান রাজুর উভয় বাহিনীকে বন্দরের যুবলীগ নেতা খান মাসুদ নিয়ন্ত্রণ করেন৷

ওই সংঘর্ষের পর উভয়পক্ষ দু’টি মামলা করে থানায়৷ আকিব হাসান রাজুর পক্ষের মামলায় নিহত মেরাজুল সাত নম্বর এবং আহত আলামিন পাঁচ নম্বর আসামি ছিলেন৷ সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে জামিন নেবার পর এলাকায় ফিরলে সোমবার সন্ধ্যায় তাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটলো৷

নিহত মেরাজুল ও আহত আলামিন দু’জনই রাজু আহমেদ ওরফে স্ট্যান্ড রাজুর অনুসারী৷ গত ১৩ মার্চের ওই সংঘর্ষের জেরেই এ হামলা হয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের৷

এদিকে মেরাজের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতে তার পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের উপর হামলা ও স্থানীয় কাউন্সিলরের বাড়ি ও কার্যালয়ে ভাঙচুর করে৷

এদিকে স্বজনদের মোবাইলে ধারণ করা একটি ভিডিও হামলার ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন আহত আল আমিন৷ দুই মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘নিজের ওয়ার্কশপে কাজ করছিলেন মেরাজুল এবং আল আমিন সেখানে বসা ছিলেন৷ হঠাৎ করে তিনটি গাড়ি আসে। প্রথমে কাইল্লা রানা ও রুপালী আবাসিক এলাকার মানিক এসে মেরাজকে ধরে ফেলে। পরে কাউন্সিলর শাহীনের ভাগ্নে সৌরভ, পিংকি, চুইল্লা রাজু, অপু এসে আমাদের এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। তখন আমরা বার বার ওদের জিজ্ঞাসা করছিলাম, কী হয়েছে? এ সময় কাউন্সিলরের ভাগ্নে সৌরভ ও চুইল্লা রাজু একসঙ্গে মিলে আমাদের কোপাতে শুরু করে।’

পুলিশ জানায়, ওই হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আব্দুর রব (৪৮) ও স্বপন (৩৮) নামে দুই জনকে আটক করা হয়েছে৷ রাতেই রুপালী আবাসিক ও ছালেহনগর এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।

আটক আব্দুর রব রুপালী আবাসিক এলাকার সৈয়দ আলী মিয়ার ছেলে ও স্বপন ছালেহনগর এলাকার মুছা মিয়ার ছেলে৷

মঙ্গলবার বিকেলে নিহত মেরাজুলের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল থেকে বন্দরে ছালেহনগর এলাকায় আনা হয়৷

এ সময় নিহতের বাড়িতে যান বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার প্রধান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেন৷ তারা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশে নিহতের বাড়ি ও ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন বলে জানান৷

তারা স্থানীয়দের উদ্দেশে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম ওসমানের নির্দেশে আমরা বন্দরে মেরাজুল হত্যাকান্ডে গভীর শোক প্রকাশসহ নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। পাশাপাশি এমপি সেলিম ওসমানের বার্তা পৌঁছে দিতে এসেছি। আপনারা সন্তান হারিয়েছেন আপনারা ধৈর্যধারণ করে প্রশাসনকে সহায়তা করবেন। অযথা উত্তেজিত হবেন না। কেউ কেউ এই হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করবে। আপনাদের পাশে এমপি সেলিম ওসমান সবসময় আছেন। কেউ আইন হাতে তুলে নিবেন না। দয়া করে এমপি সাহেবের সম্মানার্থে প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করুন। আমরা চাই প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক৷’

এ সময় বন্দর থানার ওসি আবু বকর ছিদ্দিকও সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷ তারা নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান৷

এদিকে বন্দর রুপালী আবাসিক এলাকার পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি দুলাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মেরাজুল হত্যাকান্ডের ঘটনার জের ধরে সন্ত্রাসীরা রুপালী পঞ্চায়েত কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে৷

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশেপ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এই ঘটনায় আমরা দুষ্কৃতিকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। পুলিশ দুই জনকে আটক করেছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে৷ বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এরপরও সংশ্লিষ্ট এলাকায় পুলিশের নজরদারি রয়েছে৷’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়