২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ২৩ আগস্ট ২০২১

আপডেট: ১৫:২২, ২৪ আগস্ট ২০২১

মেয়র আইভীকে বিতর্কিত করার মিশনে মাঠে তারা

মেয়র আইভীকে বিতর্কিত করার মিশনে মাঠে তারা

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: সারা বাংলাদেশে জনপ্রিয় মেয়রের নাম ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। ১৮ বছর যাবৎ তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। গত দুই দফায় বিপুল ভোটের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। আইভী সমর্থকরা বলছেন, কর্মনিষ্ঠা ও নগরীর উন্নয়ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের বাইরেও সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। তবে দীর্ঘ এই পথচলায় ভোটের লড়াইয়ের পাশাপাশি সামাল দিতে হয়েছে একটি বিশেষ মহলকে। নির্বাচন সামনে এলেই এই মহলটি জেগে ওঠে। মেয়র আইভীকে বিতর্কিত করার চেষ্টায় মত্ত হন তারা।

১৯৭৪ সালে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন প্রয়াত আলী আহাম্মদ চুনকা। ২০০৩ সালে তাঁরই জ্যেষ্ঠ কন্যা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী আওয়ামী লীগের সমর্থনে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলেও পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেন। এরপর ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হলে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হন ডা. আইভী। ওই নির্বাচনে ডা. আইভীর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা বর্তমান সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। ওই সময় শামীম ওসমান দলীয় সমর্থন পেলেও তাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন ডা. আইভী। অর্জন করেন দেশের প্রথম নির্বাচিত নারী মেয়রের খেতাব। ২০১৬ সালে পুনরায় বিএনপির প্রার্থী অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খানকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে নৌকা প্রতীকে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সিটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

দ্বিতীয় মেয়াদে সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নারায়ণগঞ্জ নগরীর ব্যাপক উন্নয়ন কর্ম সাধন করেছেন। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, সরকারি জমি-খাল উদ্ধার করে বিনোদন পার্ক নির্মাণ করেছেন। মসজিদ, মন্দির, শ্মশান নির্মাণ ও সংস্কার করেছেন। মৃতপ্রায় বাবুরাইল ও সিদ্ধিরগঞ্জ খাল উদ্ধার করে সৌন্দর্যবর্ধন করেছেন। বাবুরাইল খালের এই প্রকল্প দু’টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও অর্জন করেছে। নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও প্রচুর বৃক্ষরোপণ করেছেন। কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। নগরীর পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য নির্মাণ করছেন বহুতল আবাসিক ভবন। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি বৃদ্ধি করেছেন নগরের রাজস্ব আয়ও। ২০০৩ সালে প্রথম পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন ২৪ কোটি ৯২ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন ডা. আইভী। সর্বশেষ ৭৫৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই বাজেটের পরিমাণ ছিল ৮৭০ টাকা। করোনা পরিস্থিতির কারণে সর্বশেষ অর্থবছরে বাজেটের পরিমাণ কমে আসে। আইভীর উন্নয়ন কার্যক্রম ও দক্ষতার কারণে আসন্ন নির্বাচনেও পুনরায় আওয়ামী লীগের সমর্থন পাবেন বলে ধারণা আইভীর সমর্থকদের।

এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই বিষয়ে প্রস্তুতিও নিচ্ছে ইসি। প্রতিবছর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন মডেল নির্বাচন হিসেবে প্রচার করে ইসি। সারাদেশেই স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। তবে নির্বাচন সামনে আসলেই সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা চালানো শুরু করে সেই মহলটি। আইভী সমর্থক ও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আইভীর জনপ্রিয়তায় ভীত ব্যক্তিরাই এই ধরনের প্রচার চালান। এদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা দিলে এবারও মেয়র পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন আইভী। একারণে আসন্ন সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে সেই বিশেষ মহলটি প্রচার শুরু করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই একটি অংশ আছেন এই বিরোধিতায়। অভিযোগ রয়েছে এই অংশটিকে নেপথ্যে প্রভাবিত করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। ২০১৬ সালেও সিটি নির্বাচনের পূর্বে মেয়রের বিরুদ্ধে এই ধরনের প্রচারণা চালিয়েছিল তারা।

গত বছর দেওভোগের ঐতিহ্যবাহী জিউস পুকুর দখলের অভিযোগ তুলে সিটি মেয়র আইভী ও তাঁর পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে একাধিক কর্মসূচি পালিত হয়। ওই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন হিন্দু নেতা ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। এরপর মন্ডলপাড়া জামে মসজিদ ও বাগে জান্নাত জামে মসজিদের জমি দখলেরও অভিযোগ তোলা হয় সিটি মেয়রের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়। এসব কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতা। এরপর শ্মশান ও কবরস্থানের মাটি নিয়ে মেয়র আইভীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়। মেয়রের সমর্থকদের দাবি নগরবাসীর কাছে আইভী বিরোধী এসব অভিযোগ গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। উল্টো মেয়রের জনপ্রিয়তা ও তার প্রতি নগরবাসীর সহানুভূতি বেড়েছে বলে মত তাদের।

মেয়রের সমর্থকরা বলছেন, কেবল উন্নয়ন কার্যক্রমই নয় এই নগরীর শান্তি বজায় রাখতেও সোচ্চার মেয়র আইভী। তিনি সবসময় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতেও সোচ্চার এই নারী মেয়র। যারা এই শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে একক আধিপত্য বজায় রাখতে চান তারাই কেবল মেয়র আইভীর বিরোধীতা করেন বলে দাবি তাদের।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন ও মেয়র আইভীর কর্মনিষ্ঠা বিবেচনায় আগামী নির্বাচনে তিনিই দলীয় সমর্থন পাবেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাড. আনিসুর রহমান দিপু। তিনি বলেন, ‘মেয়র আইভী এই নগরের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। ভালো ও সৎ মেয়র হিসেবে তার পরিচিতি জেলা ছাড়িয়ে সারাদেশেই রয়েছে। এইসব কিছু বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনের মনোনয়ন দেবেন বলে মনে করি। এটা আমার বিশ্বাস।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেয়রের বিরুদ্ধে যেসব অপপ্রচার চালানো হয়েছে বা হচ্ছে সেসব মনোনয়ন কিংবা নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না। কারণ যৌক্তিক যেকোনো বিষয় মানুষ বিবেচনায় আনে, অযৌক্তিক কোনো বিষয় মানুষ বিবেচনায় আনে না।’

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়