২৪ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৮:২৩, ১৬ মে ২০১৮

রমজান ঘিরে মুড়ি পল্লীতে মুড়ি ভাজার ধুম

রমজান ঘিরে মুড়ি পল্লীতে মুড়ি ভাজার ধুম

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: রমজান মাস শুরু হতে আর মাত্র এক দিন বাকি। রমজানে ইফতার মুড়ি ছাড়া কল্পনা করা যায় না। তাই রমজান উপলক্ষে ইফতারের অন্যতম খাবার মুড়ি ভাজার ধুম পড়েছে রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়ি পল্লীর গ্রামে। উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন, সদর ইউনিয়ন, দাউদপুর ইউনিয়ন, ভোলাব ইউনিয়ন, ভুলতা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সারা বছর ধরেই চলে মুড়ি ভাজার কর্মযজ্ঞ । পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে আরো বেশি ব্যস্ত হয়ে ওঠেছেন মুড়ি তৈরির কারিগররা। দেশজুড়ে মুড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকায় শ্রমিকরা যেমন হয়ে ওঠেন স্বনির্ভর তেমনি এলাকার দরিদ্র মানুষেরা খুঁজে পাচ্ছেন কাজ। রমজানের ইফতারে ছোলা ও মুড়ি গ্রামবাংলার প্রধান দু’টি উপাদান। রোজার সময় হাটবাজারে ছোলা ভাজা পাওয়া গেলেও বাড়িতে মহিলাদের মুড়ি ভাজার রেওয়াজ এখনও রয়েছে।

 

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, রূপগঞ্জের বেশ কিছু সংখ্যক গ্রামে এখন চলছে মুড়ি ভাজার ধুম। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বাড়ি বাড়ি মুড়ি ভাজার কার্যক্রম চলছেই। দিনরাত ২৪ ঘন্টাই মুড়ি ভাজার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার শতাধিক পরিবারের মানুষ। মুড়ি ভাজার মূল কারিগর নারী হলেও তাদের সঙ্গে এক যোগে কাজ করছেন পুরুষরাও। নিতান্তই সখের বসে মুড়ি ভাজতে গিয়ে কেউ কেউ এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

উপজেলার হাটাব এলাকার শিক্ষক মোঃ ওমর ফারুক বলেন, বাড়িতে ভাজা মুড়ির মজাই আলাদা। শুধু রোজায় নয়, সারা বছর খাওয়ার জন্য মুড়ি ভাজা হয়। তবে এ সময়টায় মুড়ির চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। খামার পাড়া এলাকার মুড়ি ভাজার কারিগর সাহানা আক্তার বলেন, রমজানে মুড়ি ভেজে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি বাড়ি পাঠাতে হয়। এটা আমাদের গ্রামের রেওয়াজ। তাই প্রতি বছর রোজাকে সামনে রেখে মুড়ি ভাজতে হয়। এ কাজে মুড়ি ভাজতে পটু (অভিজ্ঞ) মহিলাদের এ সময় কদর বেড়ে যায় বহুগুণ। এক কেজি চালের মুড়ি ভাজতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত মজুরি দিতে হয় বলেও তিনি জানান। অথবা এক মণ মুড়ি ভাজলে একটিন মুড়ি ও ২ কেজি চাল কারিগরকে দিতে হয়।

মুড়ি ভাজতে পটু উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের উত্তরপাড়া এলাকার মল্লিকা জানান, সারা বছর মুড়ি ভাজার প্রয়োজন না পড়লেও অনেকেই রোজার সময় মুড়ি ভাজার জন্য আমাদের ডাক দেন। কোনো রকম দামাদামি নয়, খুশি হয়ে যা দেন তা ই নেই”।

সকিনা বেগম নামের আরেকজন মুড়ি ভাজার কারিগর বলেন, ধারনা না থাকলে মুড়ি ভাজা ভাল হয় না বলে আমাদের দিয়ে রোজার সামনে অনেকে মুড়ি ভাজিয়ে নেন। বড়ালু এলাকার বৃদ্ধা নুরভানু বেগম জানান, এখন তো বাজার থেকে চাল নিয়ে এসেই মুড়ি ভাজা যায়। আগে অর্থাৎ আমাদের সময়ে মুড়ির জন্যে আলাদা ধান রাখা, সেটা সিদ্ধ করা ও মুড়ি ভাজার কাজ বাড়ির বৌ-ঝিকেই করতে হতো। কষ্ট হলেও সবাই এক সঙ্গে করতো বলে উৎসব উৎসব মনে হতো। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রাম আর শহর কি, ইফতার মানেই মুড়ি, মুড়ি ছাড়া ইফতার পরিপূর্ন মনে হয় না। তবে দোকানের কেনা বা মেশিনে বানানো মুড়ির চেয়ে বাড়িতে ভাজার মুড়ির স্বাদই আলাদা।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়