১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশিত: ১৭:০৭, ২৯ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ১৭:৩৫, ৩০ মার্চ ২০২৩

লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবে লাখো পুণ্যার্থীর ঢল

লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবে লাখো পুণ্যার্থীর ঢল
লাঙ্গলবন্দের রাজঘাট থেকে তোলা

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানোৎসবে অংশ নিয়েছেন লাখো পুণ্যার্থী। বুধবার (২৯ মার্চ) সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুণ্যতিথিতে পাপমুক্তির আশায় ব্রহ্মপুত্রের ১৮টি ঘাটে ফুল, আম্রপল্লব, তুলসি, দুর্বাসহ স্নান সারতে দেখা গেছে।

গত মঙ্গলবার রাত ৯টা ১৮ মিনিটে অষ্টমী স্নানের তিথি শুরু হয়েছে। শেষ হবে বুধবার রাত ১০টা ৪৭ মিনিটে। এ সময়ের মধ্যে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আগত পুণ্যার্থীরা ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান সারবেন।

হিন্দু পুরাণ মতে, মহামুনি জন্মদগ্নির আদেশে পুত্র পরশুরাম মা রেনুকাকে কুঠার দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। মাকে হত্যার শাস্তি হিসাবে কুঠার তার হাতেই লেগে থাকে। অনেক তপস্যা আর হিমালয়ে ব্রহ্মপুত্রের জলে স্নান করার পর পরশুরাম পাপমুক্ত হন। তার হাত থেকে খসে পড়ে কুঠার।

এরপর ব্রহ্মপুত্রের সেই পবিত্র জল মর্ত্যের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পরশুরাম তার কুঠারটিকে লাঙ্গলের মতো করে টানতে টানতে পর্বত থেকে ব্রহ্মপুত্রের ধারা নিয়ে আসেন সমভূমিতে। অনেক দিন পর নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে এসে থামে তার লাঙ্গলরূপী কুঠার। ওই এলাকার নাম হয় লাঙ্গলবন্দ।

লাঙ্গলবন্দ এলাকাটি নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলার মাঝামাঝি অবস্থানে। ব্রহ্মপুত্রের ১৮টি ঘাটে প্রতিবছর স্নানের আয়োজন করা হয়। ঘাটগুলোতে পাপমুক্তি ও পূণ্যের আশায় স্নানে অংশ নেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

নদীপথে ট্রলারে চড়ে বিক্রমপুর থেকে স্বামী, সন্তানসহ লাঙ্গলবন্দে স্নান করতে এসেছেন প্রমিলা রাণী শীল। তিনি বলেন, ‘আগেও অনেকবার আসছি। অনেক তো পাপ করি। ভগবান যাতে সেই পাপ থেকে মুক্তি দেন, ভালো মতো খেয়ে-পরে বাঁচতে পারি সেই প্রার্থনাই করি। স্নানের পর মনে শান্তি পাই।’

পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে প্রথমবার পুণ্যস্নানে এসেছেন হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার হেমানন্দ সরকার (৫৫)। লাঙ্গলবন্দের রাজঘাটে কথা হয় তার সাথে।

তিনি বলেন, ‘দুইদিন আগেই বাইন্নাচং থেইকা আইছি। ঢাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে আছিলাম। সকালে লাঙ্গলবন্দ আইছি। রোগ-শোক যাতে দূর হয়, কত ঝামেলা আছে ওগুলাও যাতে দূর হয়, তাই চাইছি ভগবানের কাছে।

স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অন্তত দুই কিলোমিটার জুড়ে বসেছে মেলা। এ মেলায় হাতপাখা, ঢোল, রাঙতা, শিশুদের খেলনা, সন্দেশ, মিষ্টিসহ বাহারি খাবার বেচা-কেনা চলছে।

ঘাটের পাশে ফুল, দুর্বা, আম্রপল্লব, কলা, তুলসি নিয়ে বসেছেন কেউ কেউ। স্নানের জন্য ফুল, দূর্বা, আম্রপল্লব লাগে বলে জানান সুকুমার চন্দ্র দাস নামে এক বিক্রেতা। ১০-২০ টাকায় এসব বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।

প্রতিবছর লাঙ্গলবন্দে পাপমুক্তির আশায় এই স্নানোৎসবে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা থেকে আসা লাখো মানুষ অংশ নেন। এবার অন্তত দশ লাখ পুণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে বলে জানান লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি সরোজ কুমার সাহা।

কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই এ উৎসব শেষ হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

স্নানোৎসবকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলাল বাহিনীর ১২শ’ সদস্য নিয়োজিত আছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল। তিনি বলেন, তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। পোশাকি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও রয়েছে।

এদিকে স্নানোৎসবের কারণে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। বুধবার ভোর থেকে মহাসড়কে যানজট থাকায় নিয়মিত যাত্রীদের পাশাপাশি পুণ্যস্নানে আসা লোকজনও ভোগান্তিতে পড়েন।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়